Tip:
Highlight text to annotate it
X
আমার গল্পটা শুরু হয়েছিল জিম্বাবুয়েতে
অরফিয়াস নামে একজন সাহসী বনরক্ষক
আর একটা আহত মোষকে নিয়ে।
অরফিয়াস মাটিতে পড়ে থাকা মোষটাকে দেখল আর সেটা আমার দিকে দেখলো,
আর আমাদের যখন চোখে চোখ পড়লো, আমরা তিন জন একসঙ্গে একটা নীরব বেদনা অনুভব করছিলাম।
সে ছিল একটা অদ্ভুত সুন্দর, বন্য, নিরীহ পশু,
আর অরফিয়াস তার বন্দুকের নল ওর কানে রাখল। (বন্দুকের আওয়াজ)
আর ঠিক সেই মুহূর্তে মোষটা প্রসব করতে শুরু করলো।
যখন অকালজাত শাবকটা ধীরে ধীরে প্রাণ হারাচ্ছিল, আমরা মোষটার ক্ষতগুলো পরীক্ষা করতে লাগলাম।
ওর পিছনের পা আট ফাঁসের তারের ফাঁদে আটকে গেছিলো।
ও মুক্তির জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে এতো প্রবল চেষ্টা করেছিল
যে ও নিজের শ্রোণী কেটে দু টুকরো করে ফেলেছিল।
যাক, শেষ পর্যন্ত ও মুক্ত হল।
ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ, আজ আমি এক গুরুদায়িত্ব অনুভব করছি
তাদের হয়ে আপনাদের সামনে বক্তব্য পেশ করতে যারা নিজেরা কথা বলতে পারে না।
ওদের কষ্টই আমার মর্মবেদনা, আমার অনুপ্রেরণা।
মার্টিন লুথার কিং অত্যন্ত সঠিক ভাবে আমার আজকের এই আবেদনের সার সংক্ষেপ করেছেন।
উনি বলেছিলেন, "এমন একটা সময় আসে যখন প্রত্যেককে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয় যেটা নিরাপদ,
বা বিচক্ষণ, বা জনপ্রিয় হয় না।
কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয় কারণ তার বিবেক তাকে বলে সেটাই ঠিক।"
কারণ তার বিবেক তাকে বলে সেটাই ঠিক।
আমার বক্তব্যের শেষে আমি আপনাদের সকলকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবো।
সেই প্রশ্নটাই একমাত্র কারণ যার জন্য আমি আফ্রিকার সাভানা থেকে এতদূর, এখানে এসেছি।
সেই প্রশ্নটা আমার আত্মার শুদ্ধি করেছে।
আপনি কিভাবে প্রশ্নটার উত্তর দেবেন সেটা সবসময় আপনার সঙ্গে থাকবে।
আমার মনে আছে ছেলেবেলায় দি উইজার্ড অফ ওজ ছবিটা দেখার কথা
আর আমি কখনো ওই ডাইনি বা উড়ন্ত বাঁদরগুলোকে ভয় পেতাম না।
আমার সব থেকে বড় ভয় ছিল যে আমি বড় হয়ে ওই সিংহটার মত হব যার কোন সাহস নেই।
আর বড় হতে হতে আমি সবসময় নিজেকে জিজ্ঞেস করতাম আমি কি সাহসী হতে পারবো?
তো ডরোথির কানসাসে ফিরে আসার,
আর সিংহটার নিজের সাহস খুঁজে পাওয়ার অনেক বছর পরে,
আমি একটা ট্যাটু পার্লারে গিয়ে এই শব্দগুলো নিজের বুকে লিখিয়েছিলাম,
'খোঁজো আর ধ্বংস করো"।
আর আমার মনে হয়েছিল সেটা আমাকে বিরাট আর সাহসী বানাবে।
কিন্তু প্রায় এক যুগ অতিক্রান্ত হয়েছিল আমার সেই শব্দগুলো উপলব্ধি করতে।
যখন আমার কুড়ি বছর বয়স, আমি নৌ বিভাগে বাধা অপসারণকারী ডুবুরির কাজ করছিলাম।
২৫ বছর বয়েসে বিশেষ অপারেশনে বন্দুকবাজ হিসেবে,
আমার রাইফেলের স্কোপে উত্তোলনে কটা ক্লিক লাগবে সেটা আমার নখদর্পণে ছিল
৭০০ মিটার দূর থেকে কোন সচল নিশানার মাথায় গুলি করার জন্য।
আমি জানতাম ঠিক কত গ্রাম বিস্ফোরক লাগে
মাত্র কয়েক মিটার দূর থেকে একটা ইস্পাতের পাত দ্বারা নির্মিত দরজা উড়িয়ে দিতে,
এমন ভাবে যাতে আমি নিজে বা আমার পিছনে আসা আমার দল না উড়ে যায়।
আর আমি এটাও জানতাম যে বাগদাদ একটা জঘন্য জায়গা, আর যখন কিছু ধুম করে ফাটে,
মানুষ মারা যায়।
সেই সময় আমার কোন ধারণা ছিল না একজন সংরক্ষক কি কাজ করে সে সম্পর্কে,
শুধু জানতাম ওরা গাছ জড়িয়ে ধরে আর বড় বড় ব্যবসাগুলোর গাত্রদাহ ঘটায়। (হাস্যরোল)
আমি জানতাম ওদের জটা পড়া চুল থাকে। আমি জানতাম ওরা গাঁজা খায়। (হাস্যরোল)
আমি সত্যি বলতে পরিবেশ নিয়ে একদম মাথা ঘামাতাম না আর ঘামাবোই বা কেন?
আমি সেই মূর্খ লোক ছিলাম যে রাস্তায় গাড়ি জোরে চালায় পাখিদের ধাক্কা দেওয়ার জন্য।
আমার জীবন সংরক্ষণ থেকে অনেক দূরে এক অন্য দুনিয়ায় ছিল।
আমি নটা বছর বাস্তব জীবনে এমন কাজ করে কাটিয়েছি
যা বেশীরভাগ মানুষ প্লে স্টেশনে করারও স্বপ্ন দেখবে না।
তো ইরাকে ১২ বার তথাকথিত "ভাড়াটে সেনা" হিসেবে যাওয়ার পরে, আমার দক্ষতা যে কাজে ছিল সেটা একটা কাজেই লাগানো যেত:
ধ্বংস করাই ছিল আমার কাজ।
এখন যখন মনে করি যে সব আমি করেছি, যে সব জায়গায় থেকেছি,
আমার মনে হয় আমি একটা মাত্র সাহসের কাজ করেছি।
আর সেটা "হ্যাঁ" বা "না"-এর একটা সাধারণ সিদ্ধান্ত নেওয়া।
কিন্তু সেই একটা কাজই আমার সম্পূর্ণ সত্ত্বাকে নির্ধারণ করে
আর নিশ্চিত করে যে আমার কাজ কখনো আমার সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।
শেষ পর্যন্ত আমি যখন ইরাক পিছনে ফেলে এলাম আমি জানতাম না কি করবো।
হ্যাঁ, আমার মনে হয়েছিল- কি বলি- আসলে আমি জানতাম না জীবনে আমি কোন দিকে যাচ্ছি
বা আমার কোথায় থাকা উচিৎ, আর ২০০৯ এর শুরুতে আমি আফ্রিকা এলাম।
আমার তখন ২৯ বছর বয়স।
যে ভাবেই হোক, আমি সবসময় জানতাম যে এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আমার অভীষ্ট খুঁজে পাবো,
আর ঠিক তাই ঘটেছিল।
যদিও আমি কখনো ভাবিনি যে সেটা আমি জিম্বাবুয়ের কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঝোপের ভেতর খুঁজে পাবো।
আর আমরা প্রদক্ষিণ করছিলাম সব ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য, আর শকুনগুলো আকাশে চক্কর কাটছিল
আর আমরা যত কাছে যাচ্ছিলাম, মৃত্যুর দুর্গন্ধ একটা ভারী, মোটা কম্বলের মত বাতাসে জড়িয়ে ছিল,
আর আমাদের ফুসফুস থেকে সব হাওয়া যেন শুষে নিচ্ছিল।
আর আমরা আরও কাছে গেলাম, ওখানে একটা বিশাল পুরুষ হাতি ছিল,
সেটা পাশ ফিরে শুয়ে ছিল, আর ওর মুখটা কেউ কেটে নিয়েছিল।
আমার চারপাশের দুনিয়া যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।
একটা গভীর সর্বগ্রাসী বিষাদ আমাকে আচ্ছন্ন করলো।
নিরীহ জীবদের এভাবে হত্যা হতে দেখা আমাকে এমন আঘাত দিয়েছিল যেমন আমি আগে কখনো অনুভব করিনি।
সত্যি বলতে কিশোর বয়েসে আমিও চোরা শিকার করেছি আর সেই স্মৃতি মৃত্যু অবধি আমার সঙ্গে থাকবে।
কিন্তু সময় আমাকে বদলে দিয়েছিল; আমার ভেতরে কোন একটা জিনিষ ঠিক আগের মত ছিল না।
আর সেটা কখনো আগের মত হবেও না।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করেছিলাম, "হাতিটার তার মুখের যতটা প্রয়োজন সেটা কি
এশিয়ার কোন লোকের তার ডেস্কে একটা হাতির দাঁত সাজানোর থেকে বেশী দরকারি নয়?"
নিশ্চয়ই বেশী দরকারি, সেটা অপ্রাসঙ্গিক।
তখন ওখানে, ওই পরিস্থিতিতে যেটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা হল:
আমি কি নিরীহ পশুদের যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য আমার জীবনের সব কিছু ত্যাগ করার সাহস দেখাতে পারবো?
এটাই ছিল সেই মুহূর্ত যা আমার জীবনের রূপরেখা নির্ধারণ করেছে:
হ্যাঁ কি না?
পরের দিন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম আর আমার সব বাড়িঘর বেচতে শুরু করলাম।
এগুলো সব সেই সম্পত্তি ছিল যা ভালো সুপারিশ পাওয়া কোন ভাড়াটে সৈন্য যুদ্ধে পাওয়া টাকায় খুব তাড়াতাড়ি অর্জন করতে পারে।
আমার জীবনের জমা পুঁজি আমি আন্তর্জাতিক চোরা শিকার বিরোধী ফাউন্ডেশনের স্থাপনা আর বিকাশে ব্যয় করেছি।
আই এ পি এফ একটা প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান।
দূর সঞ্চালিত বিমান প্রযুক্তি থেকে শুরু করে, বনরক্ষকদের এক আন্তর্জাতিক যোগ্যতা পর্যন্ত,
আমরা প্রতিদিন লড়াই করছি সামরিক সমাধানকে
সংরক্ষণের পাতলা সবুজ রেখার কাজে লাগাতে।
এখন আমার গল্পটা একটু অসাধারণ হতে পারে,
কিন্তু আমি আমার প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলার জন্য সেই গল্পটা ব্যবহার করবো না--
যদিও সেটা চাঁদা তোলার জন্য একটা বেশ ভালো উপায় হতে পারে।
(হাস্যরোল ও করতালি)
মনে রাখবেন, আজকের দিনটা সেই প্রশ্নের জন্য যেটা আমি আপনাদের শেষে জিজ্ঞেসস করবো।
কারণ আমার পক্ষে এই মঞ্চে উঠে শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করা নিয়ে কথা বলা সম্ভব না
যখন আমি জানি যে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তার প্রশ্নটা সামাজিকভাবে অনেক ব্যাপক।
ওই হাতিটা দেখার কয়েক বছর পরে একদিন খুব সকাল সকাল আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আমি যে প্রশ্নটা নিজেকে করতে যাচ্ছিলাম সেটার উত্তর আমি আগেই জানতাম,
কিন্তু সেটা প্রথমবার ছিল যখন আমি প্রশ্নটাকে শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চলেছিলাম:
আমি কাবাব খেতে যত ভালোবাসি তার থেকে একটা গরু কি তার প্রাণকে বেশী ভালবাসে?
দেখুন আমি এই পুরো সময় টা যাকে 'প্রজাতিবাদ' বলে সেটার দোষে দুষি ছিলাম।
প্রজাতিবাদ বর্ণবাদ বা লিঙ্গবাদ থেকে আলাদা কিছু না।
এর আওতায় কোন গোষ্ঠী কে বা কি শুধুমাত্র তার ওপর নির্ভর করে তাদের জন্য বিশেষ প্রকার
মূল্যবোধ, অধিকার বা স্বতন্ত্র বিবেচনা বরাদ্দ করা হয়।
আমার প্রাত্যহিক সুবিধার জন্য কিভাবে আমি আমার নমনীয় মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়েছি
সেটা ভেবে আমার গা গুলিয়ে উঠলো।
দেখুন, আমি এশিয়াকে তাদের হাতির দাঁত আর গণ্ডারের শিঙের অফুরন্ত চাহিদার জন্য দুষতে ভালবাসতাম,
আর কিভাবে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নতি
বেআইনি বন্যপ্রাণীর ব্যবসার অসম্ভব বৃদ্ধি ঘটিয়েছে সেটাকেও দুষতাম।
কিন্তু সেদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমি বুঝতে পারলাম
যদিও আমি আমার জীবন পশুদের বাঁচানোর জন্য উৎসর্গ করেছিলাম,
তবু আমার নিজের বিবেকের কাছে আমি কোন চোরা শিকারি,
বা ওই এশীয় লোকটা যে নিজের ডেস্কে হাতির দাঁত সাজিয়ে রেখেছে, তাদের থেকে কোন অংশে ভালো ছিলাম না।
আমি এমন একজন অত্যধিক পরিমাণে মাংস ভোজী মানুষ ছিলাম যে প্রায়ই কিছু প্রাণীকে 'পশু' আখ্যা দিতাম।
যেখানে বাস্তবে আমিই পশু ছিলাম: ধ্বংসাত্মক ভাবে নিজের
অভ্যাসের দাস, আর যে বিবেকের ধার ধারে না।
আমরা সবাই আমাদের জীবনে কোন পোষা প্রাণী বা অন্য কোন জীবজন্তুর সংস্পর্শে আসি।
আমরা বেশ বুঝতে পারি যে প্রত্যেকটা প্রাণীর নিজস্ব একটা বোধ আছে আর সেটা আমরা অস্বীকার করতে পারিনা।
তারা কষ্ট আর একাকীত্বের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে।
আর তারা ভয় অনুভব করে।
আমাদেরই মত প্রতিটা প্রাণী সুখী হলে সেটা প্রকাশ করতে পারে,
পরিবার গড়তে পারে, আর তাদের সহজাত প্রবৃত্তি ও চাহিদা চরিতার্থ করতে চায়।
যদিও আমরা অনেকেই
শুধু সেই পর্যন্তই নিজেদের মনশ্চক্ষুকে যেতে দিই
যে পর্যন্ত গেলে সত্যিটা আমাদের অভ্যাসের অন্তরায় হবে না।
একটা পণ্যের ব্যবহার আর
বাস্তবে কিভাবে সেই পণ্যটা উৎপাদন করা হয়েছে এই দুটো ক্ষেত্রের মধ্যে যে অসংলগ্নতা সেটা একটা বিস্ময়কর ঘটনা।
প্রাণীদের পণ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় আর তাদের সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হয়।
আমরা মানুষ মারলে হত্যা বলি কিন্তু আইনি আর বেআইনি শিল্প তৈরি করি
এমন ক্রিয়াকলাপ নিয়ে যা মানুষের সঙ্গে করলে অত্যাচার বলা হবে।
আর আমরা অন্য লোককে টাকা দিয়ে প্রাণীদের ওপর এমন কাজ করাই যা আমরা কেউ নিজেরা করতে চাইবো না।
আমরা সামনাসামনি দেখছি না মানে এই নয় যে আমরা এসবের জন্য দায়ী না।
পিটার সিঙ্গার, যিনি 'প্রজাতিবাদ' শব্দটা জনপ্রিয় করেছিলেন, লিখেছিলেন যে,
"যদিও মানুষ ও জন্তুদের মধ্যে অমিল থাকলেও
তাদের প্রত্যেকের কষ্ট পাওয়ার ক্ষমতা আছে।
আর আমাদের এই কষ্ট পাওয়াকে সমানভাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
কোন অবস্থান যেটা একই রকম দুটো ঘটনায় আলাদা আলাদা বিধান দেয়
একটা গ্রহণযোগ্য নৈতিক তত্ত্ব হিসাবে ব্যর্থ।"
এই বছর পুরো বিশ্বের শিল্প খামারে ৬৫ বিলিয়ন প্রাণীকে হত্যা করা হবে।
একটা মানুষের জীবনের দাম কটা জন্তুর জীবনের দামের সমান?
এই ঘরে উপস্থিত একজন মাংস ভোজী তার জীবনে গড়ে ৮,০০০ জন্তু খাবে।
মহাসাগরের দূষণ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আর অরণ্য বিনাশ
আমাদের পরবর্তী গণ বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
আর এসব ঘটনার জন্য যেসব কারণ দায়ী তাদের মধ্যে মাংস শিল্প অন্যতম।
বন্যপ্রাণীদের বেআইনি পাচার এখন বিশ্বের অপরাধমূলক শিল্পের মধ্যে অন্যতম রূপে গণ্য করা হয়--
এটা মাদকদ্রব্য, হাতিয়ার আর মানুষ পাচারের সমকক্ষ।
এই বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থামানোর ক্ষমতা
একটা আন্তর্জাতিক জনসমাজের আগ্রহের ওপর নির্ভরশীল
যাদের হস্তক্ষেপে বিশ্বের এই মৃতপ্রায় সম্পদকে রক্ষা পেতে পারে।
পশুদের ওপর গবেষণা চালানো--
যদি পশুরা এতোটাই মানুষের মত হয় যে আমরা মানুষের পরিবর্তে তাদের ব্যবহার করতে পারি
তার মানে দাঁড়ায় যে তাদের সব গুণাগুণ আমাদেরই মত
তার মানে তাদেরও ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে?
সে শিল্প খামার, প্রাণী রপ্তানি, চোরা শিকার বা চামড়ার ব্যবসা যাই হোক,
যুক্তি দিয়ে দেখলে আমার কাছে সব সমান।
কষ্ট কষ্টই,
আর হত্যা হত্যাই।
আর এর শিকার যত বেশী অসহায় হয়
অপরাধের বীভৎসতা তত বেশী বাড়ে।
পরের বার যখন আপনার মনে হবে যে কোন পশু প্রেমী একটু বেশীই আবেগপ্রবণ,
একটু বেশী উৎসাহী, বা একটু ছিটিয়াল, দয়া করে মনে রাখবেন
আমরা অন্য চশমা দিয়ে ব্যাপারগুলো দেখি।
তো কয়েক দিনের মধ্যে আমার পুত্রের জন্ম হবে।
আমার মনে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন জাগে, "সে কি রকম পৃথিবীতে প্রবেশ করছে?"
আমাদের এই প্রজন্ম কি প্রজাতি হিসাবে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কারণ হবে?
আমার বিশ্বাস যা ঠিক সেটা করার যে নৈতিক সাহস সেটার জন্য
আমাদের প্রজন্মকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে।
আর তাৎপর্যমূলক কোন কাজ করতে হলে কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়।
বেশ তো এখন আমি নিজেকে স্বেচ্ছায় জীবজন্তুর কল্যাণে অর্পণ করেছি।
আর যদি আমি আমার চার পাশের সব বস্তুগত জিনিসপত্র সরিয়ে দিই,
আমি অনুভব করতে পারি যে আমিও একজন জন্তুই।
আমরা একটা পরিবার। একসঙ্গে একটা গ্রহে।
আর এই গ্রহে যে পঞ্চাশ লক্ষ প্রজাতি আছে
তাদের মধ্যে শুধু একটা প্রজাতিরই সেই ক্ষমতা আছে যা দিয়ে সে
অন্য সব চেতন বস্তুর গ্রহণযোগ্য কষ্টের মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে।
মাংস খাওয়া কম করা বা
চোরা শিকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, বা মূক জীবদের হয়ে কথা বলা,
আমাদের সবার নির্বাচন করার ক্ষমতা আছে।
আর আমাদের জীবনের ছোট পরিবর্তন অন্যের [জীবনে] বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।
তো এখন শুরুতে ফিরে যাই।
আমার এখানে আসার কারণ হল আপনাদের কাছে এই প্রশ্নটা রাখা:
পরের বার কখনো যদি আপনি জীবজন্তুদের জন্য কিছু করার সুযোগ পান,
আপনি যথেষ্ট সাহসী হতে পারবেন তো?
হ্যাঁ কি না?
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।