Tip:
Highlight text to annotate it
X
রাষ্ট্রপতি ওবামা: পঞ্চাশটি রাজ্যের মুসলমান সম্প্রদায়
সহ আমেরিকান জনগনের পক্ষ থেকে- আমি সারা বিশ্বের এবং আমেরিকার
মুসলমানদেরকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
রমজান করিম।
রমজান এমন একটি মাস যে মাসে মুসলমানরা বিশ্বাস করে পবিত্র কোরানকে
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উপর নাজেল করা হয়েছিল,
শুরু হয়েছিল সাধারণ একটি শব্দ দিয়ে – পড়।
সেজন্য এই মাসটি সেই সময়, যখন মুসলমানরা বিশ্বাসের মাধ্যমে
পাওয়া সেই বিচক্ষনতা এবং দিক নির্দেশনাগুলোর দ্বারা, মানব জাতির একে অপরের প্রতি
এবং আল্লহ্র প্রতি যে দায়িত্ব, তার প্রতিফলন ঘটায়।
বিভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ যারা রমজানকে আমাদের সম্প্রদায়ের এবং পরিবারের
মধ্যদিয়ে দেখেছে, তাদের মত আমিও জানি যে এটা একটি আনন্দঘন সময়-
একটি সময় যখন গোটা পরিবার একত্র হয়, এবং একে অপরকে অংশীদার ক’রে আহার করে।
কিন্তু –আমি আরও জানি যে রমজান একটি সময়, যখন গভীরভাবে
প্রার্থনা ও চিন্তা করার সময়- একটি সময় যখন মুসলমানরা
দিনের বেলা উপোস থাকে এবং রাতে তারাবি’র
নামাজ পড়ে এবং পুরো মাস জুড়েই
সম্পুর্ন কোরান পাঠ করে এবং শোনে।
এই ধর্মীয় আচারগুলো আমাদের নৈতিকতাকে মনে করিয়ে দেয়, যা আমরা সবাই নিজেদের মধ্যে লালন করি
এবং মনে করিয়ে দেয় সব মানুষের জন্য ন্যায়পরায়ণতা,
অগ্রগতি, সহনশীলতা এবং মর্যাদাবোধের উন্নতি বিধানে ইসলামের ভূমিকাকে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রোজা একাটি ধারনা যা আরো অনেক ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসিরাও পালন করে --
যার মধ্যে আমার নিজের খ্রিষ্টান ধর্মও অন্তর্ভুক্ত--
রোজা, মানুষকে ঈশ্বরের, এবং আমাদের মধ্যে যাদের, পরের বেলার আহারের
নিশ্চয়তা নেই তাদেরকে নিকটে আনার একটি উপায়।
মুসলমানরা অন্যদেরকে যে সমর্থন দেয় তা, সব যায়গার
মানুষকে সু্যোগ এবং সম্বৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য
আমাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের
সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আমরা যে পৃথিবী গড়তে চাই-
এবং যে পরিবর্তন আমরা করতে চাই- সেটাকে অবশ্যই শুরু হতে হবে আমাদের সম্প্রদায়ের ভিতর থেকে, আমাদের অন্তর থেকে।
এই গ্রীষ্মে, সারা আমেরিকার মানুষ তাদের সম্প্রদায়গুলোর জন্য কাজ করেছে --
ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষা দিয়েছে, পীড়িতদেরকে সেবা দিয়েছে,
এবং হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাদেরকে যারা কঠিন সময়ের মধ্যে পতিত হয়েছিল
বিশ্বাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলি, যার মধ্যে অনেক ইসলামী সংগঠনও অন্তর্ভুক্ত আছে,
তারা এই গ্রীষ্মে সবার অগ্রভাগে থেকে এই সেবার কাজে
অংশগ্রহন করেছে।
এবং এই চ্যালেঞ্জের সময়ে এই দায়িত্ব পালনের উৎসাহটিকে
অবশ্যই আগত বছর এবং মাসগুলোর জন্য ধরে রাখতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ছাড়িয়ে, আরো নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ন পৃথিবী
গড়ার জন্য আমাদের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সে জন্য আমরা দায়িত্বের সাথে ইরাকের যুদ্ধ শেষ করছি।
সেই কারনেই যখন আমরা হিংসাত্মক উগ্রপন্থীদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছি,
তখন আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মত যায়গায় জনগনের ক্ষমতায়ন ক’রে চলেছি।
সেই জন্যই আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এবং সক্রিয়ভাবে সমর্থন করি দুই রাষ্ট্রের
সমাধানে যেটা, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনীদের নিরাপদে,
শান্তিপূর্নভাবে বসবাসের অধিকারের সিকৃতি দেয়
এবং সেজন্যই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই মানুষের মতামত ব্যক্ত করার, নিজ ধর্ম
অনুশীলনের, সমাজে পরিপূর্ণ অবদান রাখার,
এবং আইনের শাসনের প্রতি আস্থার সর্বজনীন
অধিকারের জন্য সবার পাশে দাঁড়াবে।
এই সকল প্রচেষ্টাই মুসলমানদের এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান
জাতিগুলিকে পারস্পরিক স্বার্থ এবং পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শনের
ভিত্তিতে একত্রে কাজ করায় জড়িত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকারের অংশ।
এবং নূতন ধারা সুচনার এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের
মধ্যে একটি নব যাত্রা সূচনার জন্য আমি আমার অঙ্গীকারের পুনরাবৃত্তি করতে চাই।
আমি কায়রোতে যা বলেছি, একে অপরকে শুনবার, একে
অন্যের কাছ থেকে শিখবার, একে অন্যকে সম্মান করবার এবং
সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ভিত্তি খুঁজে পাবার এই নব সুচনাকে অবশ্যই বহন ক’রে
নিয়ে যেতে হবে এই প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখার জন্য।
আমি বিশ্বাস করি যে এটার সবচেয় গুরত্বপুর্ন অংশ হোলো, শোনা, এবং এই শেষ দুই মাসে সমগ্র,
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলো শুধুমাত্র, সরকারের কাছেই পৌছায়নি,তারা
মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলোর জনগনের কাছে সরাসরি পৌছাতে সক্ষম
হয়েছে। এবং সমগ্র বিশ্ব থেকে আমরা অসংখ্য মানুষের প্রতিক্রিয়াসুলভ মন্তব্য
পেয়েছি,যাতে উল্লেখ করা আছে যে আমেরিকা
কিভাবে মানুষের প্রেরণার পক্ষ হয়ে সহযোগী
হিসাবে কাজ করতে পারে।
আমরা শুনেছি।
এবং আপনাদের মত, আমরাও একটি পাকাপোক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছি,
যেগুলো রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা উভয় ক্ষেত্রেই-- সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তন আনবে
যেগুলো আমি আগেই আলোচনা করেছি, এবং সেই ব্যপারগুলো যেগুলো আপনারা
আমাদেরকে বলেছেন যা সাধারন মানুষের জীবনে
বেশীরভাগ পরিবর্তন আনবে।
এই পরামর্শগুলো আমি কায়রোতে যা বলেছিলাম সেগুলো আমাদেরকে সহযোগিতার
ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করছে –
শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচি বাড়ানো; যাতে নূতন ব্যবসা চালু করে
কর্ম সংস্থান করা যায়, এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
সহযোগিতা বৃদ্ধি করা যায়, এবং যখন শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষনে
সাহায্য করা যায়। আমরা, ও আই সি এবং ও আই সির সদস্য
দেশগুলোর সাথে পোলিও নির্মূল করার জন্য সহযোগিতার ভিত্তিতে
এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা
করতে হয়, সেখানে একই সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাচ্ছি, যেমন এইচ১এন১- যেটাকে,
আমি জানি, নির্দিষ্টভাবে অনেক মুসলমানের জন্য উদ্বেগের বিষয় যারা হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই সকল প্রচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের পারস্পরিক উৎসাহ-উদ্দীপনাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য
যাতে আমরা নিরাপদে শান্তিতে বাস করতে পারি, যাতে শিক্ষা অর্জন করতে পারি, এবং সম্মানের সাথে
কাজ করতে পারি, যাতে আমাদের পরিবার-পরিজনদেরকে, আমাদের সম্প্রদায়কে,
আমাদের বিশ্বাসকে ভালবাসতে পারি।
এটার জন্য প্রয়োজন সময় এবং ধৈর্যের সাথে চেষ্টা করা।
আমরা রাতারাতি কোনকিছু পরিবর্তন করতে পারিনা, কিন্তু আমরা সততার সাথে সেটাই করতে পারি
যা অবশ্যই করা উচিৎ, আমরা নিজেরা এবং আমাদের সন্তানদেরকে
যেখানে নিয়ে যেতে চাই, সেই গন্তব্যে পৌছানোর জন্য নূতন
একটি দিক নির্দেশনা ঠিক করতে পারি।
এটা সেই যাত্রা,
যা আমাদেরকে অবশ্যই একসাথে চলতে হবে।
আমি আগামী দিনের অপেক্ষায় থাকবো এই গুরুতর গুরত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সংলাপটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য
এবং এটাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য। এবং আজকে, সারা বিশ্বের এবং আমেরিকার মুসলমানেরা
যে পবিত্র রমজানের মাস শুরু করতে যাচ্ছে, আমি আশির্বাদ করতে চাই,
এই পবিত্র মাস যেন আপনাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে
ঈশ্বর আপনাদের উপর শান্তি বর্ষন করুন।