Tip:
Highlight text to annotate it
X
♪ দ্যা ইঙ্ক স্পটস: যদি পরোয়াই না করি
♪ যদি পরোয়াই না করি
♪ মুখের কথার বেশি
♪ যদি পরোয়াই না করি
♪ তবে কি এমনই লাগতো?
♪ যদি এ ভালোবাসা না হয়..
♪ তবে কেন কেঁপে উঠি?
♪ আর কেনই বা সব দুলে ওঠে যখন...
♪ আমার হৃদয় হয়েছে থির?
♪ যদি পরোয়াই না করি
♪ তবে কি এমনই হতো?
♪ সকল চাওয়া পাওয়ার শুরু...
♪ ...আর শেষ শুধু তুমি?
♪ কীভাবে বুঝবো আমি
♪ এ ভালোবাসার নেই তুলনা?
♪ এ সবই কি সত্যি হতো
♪ যদি তোমায় পরোয়াই না করি?
মিঃ ডুফ্রেইন,
আপনার স্ত্রীর খুনের রাতে
আপনাদের ঝগড়ার বিবরণ দিন।
খুবই তিক্ত ঝগড়া।
বলেছিল, সে খুশি যে আমি জেনে গেছি,
বলেছিল, এই লুকোচুরিতে তার ঘেন্না ধরে গেছে...
আর বলেছিলো, তার দ্রুত ডিভোর্স লাগবে।
আপনি জবাবে কী বলেছিলেন?
বলেছিলাম, যে ডিভোর্স দেবো না।
"ডিভোর্স দিতে রিনোতে যাওয়ার আগে
বরং তোমাকে দোজখে পাঠাবো। "
মিঃ ডুফ্রেইন, প্রতিবেশীদের মতে আপনি
ঠিক এই কথাগুলো বলেছিলেন।
তারা বললে তাই,
আমার ঠিক মনে নেই। খুব বিপর্যস্ত ছিলাম।
আপনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার পর
কী হয়েছিল?
একটা ব্যাগ নিয়ে সে চলে গেলো।
একটা ব্যাগ নিয়ে চলে গিয়ে সে...
মিঃ কুয়েন্টিনের ওখানে উঠলো।
আইনজীবীঃ গ্লেন কুয়েন্টিন।
স্নোডন হিলস ক্লাবের পেশাদার গল্ফ খেলোয়াড়।
আপনি সম্প্রতি জেনেছিলেন যে
এই লোক আপনার স্ত্রীর প্রেমিক।
আপনি কি আপনার স্ত্রীর পিছু নিয়েছিলেন?
প্রথমে কয়েকটা মদের দোকানে গিয়েছিলাম।
পরে আমি তাদের মুখোমুখি হতে ওর বাড়ি যাই।
তারা ঘরে ছিলো না।
তাই আমি এক পাশে গাড়ি থামিয়ে...
অপেক্ষা করছিলাম।
আইনজীবীঃ কী উদ্দেশ্যে??
ডুফ্রেইনঃ ঠিক জানি না।
দিশেহারা লাগছিল।
মাতাল ছিলাম।
মনে হয়... মূলত আমি তাদের ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম।
তারা ফিরে আসলে, আপনি ঘরে ঢুকে
তাদের খুন করেছেন।
না। আমার বিচারবুদ্ধি ফিরে আসছিল।
আমি গাড়িতে ফিরে গিয়ে
বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
ফেরার পথে থেমে,
পিস্তলটা রয়েল নদীতে ফেলে দিয়েছিলাম।
মনে হয় এটা আমি পরিষ্কার করে বলেছি।
তো, সমস্যাটা হচ্ছে, পরদিন সকালে কাজের বুয়া এসে
যখন আপনার স্ত্রীকে তার প্রেমিকের সাথে
বুলেটে ঝাঁঝরা অবস্থায় পেলো, তখন।
পুরো ব্যাপারটাই কি দারুণ কাকতালীয় না, মিঃ ডুফ্রেইন?
নাকি এটা শুধু আমারই মনে হচ্ছে?
হ্যাঁ, মনে হচ্ছে।
তবুও দাবি করবেন যে, খুন ঘটার আগেই
আপনি পিস্তলটা নদীতে ফেলে দিয়েছেন?
- আপনার তাতে খুব সুবিধা হয়।
- এটাই সত্যি।
আইনজীবীঃ পুলিশ তিনদিন ধরে নদীতে খুঁজে
কোথাও পিস্তলটা পায় নি।
সুতরাং, আপনার পিস্তলের সাথে...
লাশ থেকে পাওয়া রক্তমাখা বুলেটগুলোর
তুলনা করা যাচ্ছে না।
আর সেটাও আপনার জন্য...
...খুবই সুবিধাজনক অবস্থা।
তাই নয় কি, মিঃ ডুফ্রেইন?
যেহেতু আমি এই খুন করি নি, স্যার,
সেহেতু পিস্তল না পাওয়াতে
আমার জন্য সমস্যাজনকই হয়েছে।
♪ দ্যা ইঙ্ক স্পটস: যদি পরোয়াই না করি
♪ কীভাবে বুঝবো আমি
♪ এ ভালোবাসার নেই তুলনা? ...
আইনজীবীঃ লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান,
আপনারা সব সাক্ষ্য শুনলেন।
খুনের জায়গায় বিবাদী উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে তার পায়ের ছাপ, গাড়ির চাকার ছাপ,
তার আঙুলের ছাপসহ ছড়ানো বুলেট,
ভাঙ্গা মদের বোতল পাওয়া গেছে,
সেটাতেও আঙুলের ছাপ ছিল।
এবং সর্বোপরি,
একজন সুন্দরী যুবতীকে তারর প্রেমিকের সাথে
মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
তারা পাপ করেছে।
কিন্তু সে পাপ কি এতোই ভয়ঙ্কর
যে তাদের খুন হতে হবে?
এখন, এই প্রশ্ন নিয়ে ভাবার সময়,
... আরেকটা ব্যাপার চিন্তা করুন।
রিভলবারে ছয়টা বুলেট থাকে।
আটটা না।
আমি মনে করি, এটা উত্তেজনার মাথায়
ঘটা অপরাধ নয়
সেটা ক্ষমা না করলেও আমরা বুঝতে পারি।
না। এ হলো প্রতিশোধ...
ঠাণ্ডা মাথার নিষ্ঠুর প্রতিশোধ।
ভেবে দেখুন।
প্রত্যেকের জন্য চারটা বুলেট।
ছয়টা নয়, আটটা গুলি হয়েছে।
তার মানে পিস্তলের গুলি শেষ হয়ে গেলে,
তারপর সে আবার বুলেট ভরে ...
... দু’জনকে আবার গুলি করেছে।
যুগলের দুইজনকেই একটা বাড়তি গুলি।
ঠিক মাথার মধ্যে।
আমার মনে হচ্ছে, আপনি একজন
ঠাণ্ডা মাথার অনুতাপহীন মানুষ, মিঃ ডুফ্রেইন।
আপনাকে দেখলেই আমার আতংক লাগে।
মেইন রাজ্যের আইন এবং অর্পিত ক্ষমতাবলে,
আমি আপনাকে দুইবার যাবজ্জীবন কারাগারের দণ্ড দিচ্ছি।
প্রত্যেক খুনের জন্য একটি। এটাই চূড়ান্ত।
বসো।
তোমার ফাইল বলছে তুমি
২০ বছর যাবজ্জীবন কাটিয়েছো।
জ্বি।
তোমার কি মনে হয় স্বাভাবিক জীবনে
ফিরে যেতে পারবে?
ও হ্যাঁ, স্যার। অবশ্যই পারবো।
মানে, আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
সত্যিই বলতে পারি...
আমি এক নতুন মানুষ।
সমাজের জন্য একেবারেই ক্ষতিকর না।
একদম খোদার কসম।
রেড, কেমন গেল?
সেই পুরান ঘটনা। খালি দিন আলাদা।
হ। জানি তোমার কেমন লাগতেছে।
সামনের সপ্তাহে আমাকে খারিজ করবে।
আর আমাকে খারিজ করেছে গত সপ্তাহে।
এরকমই হয়।
রেড, একটা প্যাকেট দে না।
দূর হলি আমার সামনে থেকে?
এরই মধ্যে পাঁচ প্যাকেট নিয়েছিস।
- চার।
- পাঁচ।
রেডঃ আমেরিকার সব জেলখানায় নিশ্চয়ই
আমার মতো একজন আসামী আছে।
কিছু লাগলে আমিই এনে দিতে পারি।
সিগারেট, গাঁজার পুরিয়া - যদি ঐ নেশা থাকে -
ছেলে স্কুল পাশ করার আনন্দ
উপলক্ষে এক বোতল মদ লাগলে।
যা কিছু লাগে, ন্যায্য যা কিছু।
হ্যাঁ, স্যার। আমিই জেলের সিয়ার্স আর রিবক।
তাই ১৯৪৯ সালে যখন অ্যান্ডি ডুফ্রেইন এসে...
ওর জন্য রিটা হেওয়ার্থকে এনে দিতে বললো,
আমি বলেছিলাম, "সমস্যা নেই।"
অ্যান্ডি এই শশাঙ্ক জেলে ঢুকেছিলো
১৯৪৭ এর শুরুর দিকে,
স্ত্রী আর তার প্রেমিককে খুন করার দায়ে।
বাইরে সে পোর্টল্যান্ডের এক বিরাট
ব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিল।
কম বয়সেই সে অনেক কিছু পেয়েছিল।
রেড।
ইংরেজি বলতে পারিস, ভোটকা?
এই অফিসারের পিছে চল।
জীবনেও এরাম কাহিল গু-গুয়ের দলা আর দেখি নাই।
জনৈকঃ অই, মাছলি! এদিক আয়।
- আয় এদিকে।
আজ বাজি ধরবা, রেড?
সিগারেট নাকি পয়সা? যে ডাকবা তার ইচ্ছা।
সিগারেট। আমার জন্য দুইটা ধরো।
আচ্ছা। তোমার বাজি কোনটায়?
ওই যে ভোদাইটা, সামনে থেকে আট নাম্বারে।
সেই প্রথম হবে।
- আজাইরা। ওটার ওপর আমিও ধরবো।
- আমিও।
কয়টা সিগ্রেট খুয়াইলি, ব্যাটা। কইয়া দিলাম।
হেইউড, এতোই যদি চালাক হবা, তাহলে বাজি ধরো।
আমি ধরবো ওই মোটকাটার ওপর।
সামনে থেকে পাঁচ নাম্বারে।
আমার নামে সোয়া প্যাকেট লিখে রাখো।
- ওরে মাছলি।
তাজা মাছ পাইছি! আইজকা
কাটাসুদ্ধা খেয়ে ফেলবো।
রেডঃ বলতেই হয়, প্রথমবার অ্যান্ডিকে দেখে
আমার তেমন কিছু মনে হয় নি।
মনে হচ্ছিল ওর উপর দিয়ে শক্ত ঝড় বয়ে গেছে।
ওকে দেখে প্রথম এটাই মনে হয়েছিল।
জনৈকঃ তোমার বাজি কে, রেড?
ওই যে লম্বা ছাগলটা, দেখে
মনে হয় কেউ বাঁশ দিছে।
ওই লোকটা? হবেই না।
দশটা সিগারেট।
বড় বাজি ধরলা।
ঠিক আছে। পাল্টা বাজি কে ধরবা?
হেইউড? জিগার?
স্কিট?
ফ্লয়েড?
চারটাই ধরা।
ট্যানয়ঃ সন্ধ্যার হাজিরার জন্য
যার যার কক্ষে ফিরে যান।
সকল কয়েদি যার যার কক্ষে ফিরে যান।
ডাইনে ঘোর্। সামনে তাকা।
উনি মিঃ হ্যাডলি। কারারক্ষী-নেতা।
আমি মিঃ নর্টন, এখানের ওয়ার্ডেন।
আপনারা সবাই সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি।
এজন্য আপনাদের এখানে পাঠানো হয়েছে।
প্রথম নিয়মঃ
ঈশ্বরনিন্দা চলবে না।
এই জেলে ঈশ্বরের নাম হেলাফেলায় নেয়া যাবে না।
বাদ বাকি নিয়মগুলো...
আপনারা নিজেরাই এক সময় জেনে যাবেন।
কোন প্রশ্ন?
আমরা কখন খাবো?
হ্যাডলিঃ যখন বলবো, তখন খাবে।
হাগু করবা যখন আমরা বলবো।
পেশাব করবা যখন আমরা বলবো।
বুঝছিস, বদমাইশ মাদারচোত?
ওফ!
উঠে দাঁড়া...
নর্টনঃ আমি দুটা জিনিসে বিশ্বাস করি।
শৃঙ্খলা এবং বাইবেল।
এখানে আপনারা এই দুটোই পাবেন।
ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস রাখুন।
আপনাদের বাকি মালিকানা আমার।
শশাঙ্কে স্বাগতম।
শেকল খুলে দাও।
ঘুরে দাঁড়া।
অনেক হয়েছে।
খাঁচার কাছে এসে দাঁড়া।
ঘুরে দাঁড়া।
ঘামাচি পাউডার দাও।
ঘুরে দাঁড়া।
খাঁচা থেকে বের হয়ে বামে যা।
কাপড় আর বাইবেল নিয়ে নে।
পরের জন!
ডানে, ডান, ডান, ডান।
বাম, বাম....
রেডঃ প্রথম রাতটা সবচে কঠিন,
সন্দেহ নেই।
তারা মার্চ করিয়ে ঢুকাবে,
জন্মের সময়ের মতো উলঙ্গ করে।
ঘামাচি পাউডারে যখন আপনার
চামড়া জ্বলছে আর চোখ পুড়ছে।
আর যখন তারা আপনাকে সেলের মধ্যে ঢুকাবে,
আর গরাদগুলো আটকে দিবে,
তখনই টের পাবেন এসবই কঠিন বাস্তবতা।
পুরনো জীবন এক পলকেই মুছে যাবে।
আর কিছুই বাকি রইবে না,
কেবল অনন্ত সময় নিজের কৃতকর্মের চিন্তা করার জন্য।
প্রথম রাতেই অনেক কয়েদি পাগলপ্রায় হয়ে যায়।
কেউ না কেউ এই রাতে কাঁদবেই।
প্রত্যেকবার একই ঘটনা।
এখন প্রশ্ন হলো:
কে হবে প্রথম?
বাজি ধরার জন্য আর যেকোন কিছুর
মতোই ব্যাপার এটা, মনে হয়।
আমার বাজি ছিল অ্যান্ডি ডুফ্রেইনের উপর।
বাতি নেভাও!
রেডঃ আমার নিজের প্রথম রাতের কথা মনে আছে।
মনে হয় অ-নে-ক দিন আগের।
জনৈকঃ ইয়ো-হু...!
অই মাছলি...
মাছলি, মাছলি, মাছলি, মাছলি, মাছলি।
- বাছা, অন্ধকারে ভয় পাচ্ছো নাকি?
- ভালো লাগছে না এখানে, মাছলি?
মনে হইবো তোর বাপে-মায়ে
তোরে পয়দা না করলেই ভালা করতো।
মাছলি! ওহ, শুয়োরের মাংস খামু। ওহ, ইয়েস!
লিখ্যা নিতাছো তো, মাছলি?
পরে পরীক্ষা নিমু তর!
- পাছাটা বাইর কর, দেখবার দে আমারে!
- শিশশ, আস্তে কথা বল।
রেডঃ পুরানোরা সবসময় নতুনগুলাকে নিয়ে এসব করে।
কাউকে না কাউকে না ভাঙা পর্যন্ত এরা থামে না।
অই মটু।
মটু!
কথা বলো, বাছা।
জানি তুমি শুনছো। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি।
এসব বদমাশের কথা শুনো না তুমি, ঠিকাছে?
এ জায়গাটা খুব একটা খারাপ না।
আমি কী বলি শোনো...
তোমাকে চারপাশটা ঘুরিয়ে দেখাবো।
মনে হবে একদম নিজের ঘরবাড়ি।
কয়েকটা বড়সড় পায়ুকামী আছে এখানে,
যারা তোমাকে পেলে খুব খুশি হবে।
তার ওপর তোমার ওই ব-বড়, ফর্শা, নরম
পাছা পেলে তো কথাই নাই।
খোদা!
আমি এখানে থাকতে চাই না!
জনৈকঃ একজন জিতছে!
মোটা লোকঃ আমি বাড়ি যেতে চাই!
অল্পের জন্য জিতে গেল মটু!
আরে, মটু জিতছে! ওই মটুটা!
মাছলি! মাছলি! মাছলি!
মটুঃ আমি এখানে থাকতে চাই না!
সবাইঃ তাজা মাছলি!
আমি বাড়ি যেতে চাই। আমার মায়ের কাছে।
জনৈকঃ তর মাকে লাগাইছি আমি। অতটা মজা নাই!
(সবাই একসাথে) তাজা মাছলি!
এখানে হচ্ছেটা কী?
ও বেহুদা ঈশ্বরের নাম নিতেছে।
আমি ওয়ার্ডেনের কাছে বলে দেবো।
তুমি আমার কচু করবে!
মটুঃ আমাকে বের হতে দ্যান।
তোর সমস্যাটা কী, হারামি মটুর বাচ্চা?
মটুঃ দয়া করেন একটু.......
আমার এখানে থাকার কথা না!
আমি থাকতে চাই না!
তিন তো দূরের কথা, আমি এক পর্যন্তও গুনবো না।
চুপ কর, মটুর বাচ্চা!
নাইলে এক্কেরে ঘুম পাড়ায় দিবো।
(ফিস ফিস করে) চুপ কর, ভাই। চুপ কর।
এখানে ভুল হচ্ছে!
আপনি বুঝতে পারছেন না।
আমার জেলে থাকার কথা না!
গরাদটা খোলো তো।
জনৈকঃ আমিও না!
আপনেরা তো জা’গাটারে জেল বানায় ফেললেন!
হ্যাডলিঃ কুত্তার বাচ্চা!
কয়েদি: আস্তে মারেন।
আর যদি এখানে একটা পাদের আওয়াজও শুনি,
খোদার কসম, একদম
হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবো...
সব মাদারচোতকে পাঠিয়ে দেব!
ট্রাষ্টিদের খবর দাও।
এ শালাকে হাসপাতালে পাঠাও।
রেডঃ প্রথম রাতেই অ্যান্ডি ডুফ্রেইনের কারণে
আমার দুই প্যাকেট সিগারেট খোয়াতে হলো।
সে একটা শব্দও করে নি।
গার্ডঃ তিন তলা উত্তর দিক, হাজির।
দুই তলা দক্ষিণ, হাজির।
তিন তলা দক্ষিণ, হাজির।
এক তলা উত্তর...
- এক তলা দক্ষিণ, হাজির।
- চার তলা দক্ষিণ, হাজির।
00:00:01,972 --> 00:00:15,211
অনুবাদ আয়োজন -
"অনুবাদকদের আড্ডা" (ফেসবুক গ্রুপ)
02:17:45,000 --> 02:18:21,928
অনুবাদ আয়োজন - অনুবাদকদের আড্ডা @ ফেসবুক গ্রুপ
অনুবাদক - ম্যাক আজাদ
অনুবাদ সম্পাদনা - অনীক আন্দালিব
বের হবার জন্য প্রস্তুত।
গার্ডঃ বের হও।
তুমি... তুমি কি ওইটা খাবে?
না... আমার খাওয়ার ইচ্ছা নেই।
আমাকে দিবে?
আহ... পাকা টসটসে।
জেইক তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বাসা থেকে পড়ে গিয়েছিল, প্লেট শপের কাছে।
উড়তে না শেখা পর্যন্ত আমিই দেখে শুনে রাখছি।
ওহ, না না । আসতেছে দেখো।
শুভ সকাল, ভাইয়েরা।
দারুণ সকাল, তাই না?
সুন্দর কেন জানো তো, নাকি?
আসো, দিয়ে দাও।
সবগুলা এখানে রাখো,
সুন্দর একটা লাইনে সাজাও।
আহ, দেখো তো!
- দেখো তো, বড়ই সৌন্দর্য!
- ব্যাটাকে সহ্যই হচ্ছে না আমার!
হ্যাঁ। রিচমন্ড, ভার্জিনিয়া।
- আমার পাছা শোঁক!
- আমারটা আগে শুঁকে নেক।
ইস, রেড, তোমার বাজির ঘোড়াটা তো সব্বার শেষে আসলো।
আমার কিন্তু নিজের ঘোড়াটাকে পছন্দ হইছে।
মটুটাকে দেখলে কইসা একটা চুমা দিবো।
ওরে তোমার সিগারেট থেকে কয়েকটা দাও না কেন?
পুরাই আজাইরা।
ওই, টাইরেল।
তোমার না এই সপ্তাহে হাসপাতালে কাজ?
আমার বাজির মটুটা কেমন আছে?
মরে গেছে।
হ্যাডলি তার মাথায় অনেক জোরে বাড়ি দিয়েছে।
ডাক্তার তো আগেই বাড়ি চলে গিয়েছিলো।
মটুটা সেখানে সকাল পর্যন্ত ওভাবেই পড়ে ছিল।
ততোক্ষণে, আর কিছুই করার উপায় ছিল না।
নাম কী ছিল তার?
কী বললে?
ভাবছি কেউ তার নাম জানতো কি না।
তাতে তোর কি রে, নয়া চান?
ওর নাম কী তাতে এখন কিছুই আসে যায় না।
সে মরে গেছে।
ওই...
কেউ খাতির করছে তোমার সাথে?
কেউ ধরছে নাকি তোমাকে?
দেখো, সবারই এখানে বন্ধুবান্ধব লাগে।
আমি তোমার বন্ধু হতে পারি।
ওই...
কথাই শোনে না।
ভালো তো।
রেডঃ প্রথম দিকে অ্যান্ডি বেশ চুপচাপ থাকতো।
আমার ধারণা তার মাথায় অনেক চিন্তা ছিল,
ভেতরে ভেতরে এই জীবনে খাপ খাওয়ার চেষ্টা করছিল।
এক মাসেরও বেশি সময় গেলে সে...
কারো সাথে দুইটা কথার বেশি কিছু বলতে মুখ খুললো।
আর দেখা গেল...
সেই লোকটা হচ্ছি আমি।
ট্যানয়: রাসেল এবং বুরওয়েল, ডিউটি অফিসারের
কাছে রিপোর্ট করুন।
আমি অ্যান্ডি ডুফ্রেইন।
বউ খুনী ব্যাংকার।
করেছিলে কেন?
জানতেই চাইলে যখন,
আমি খুন করি নি।
(হেসে) তুমি তো এখানে দারুণ মানিয়ে নেবে!
এখানে সবাই নির্দোষ, জানো না?
- হেইউড, তোমাকে কেন ধরেছে?
- আমি করি নাই। উকিল বাঁশ দিছে।
শুনলাম তুমি খুন ঠাণ্ডা মাথার কয়েদি।
তোমার ধারণা তুমি এখানের সবার থেকে ভালো।
ঠিক নাকি?
- তোমার কী মনে হয়?
- সত্যি কথা বললে,
এখনো কিছু ঠিক করি নাই। (হাসি)
আমার জানামতে তুমি জিনিসপত্র আনিয়ে দিতে পারো।
মাঝে সাঝে আমি কিছু জিনিসপাতি এনে দিতে পারি।
- ভাবছিলাম তুমি একটা পাথর ভাঙার হাতুড়ি এনে দিতে পারবে কি না।
- একটা কী?
পাথর ভাঙার হাতুড়ি।
- এটা কি, আর কেন আনবো?
- তোমার কী যায় আসে?
বেশ, যদি টুথব্রাশ আনতে বলতে,
তাহলে বিনা প্রশ্নে একটা দাম চাইতাম,
কারণ, টুথব্রাশ দিয়ে কাউকে মারা যায় না।
তা কথা ঠিক।
পাথর ভাঙার হাতুড়ি ছয়-সাত ইঞ্চির মতো লম্বা হয়।
দেখতে ছোট্ট একটা কুড়ালের মতো।
কুড়াল?
- পাথর ভাঙার জন্য।
- পাথর!
কোয়ার্টজ?
কোয়ার্টজ ।
আর কিছু মাইকা।
নরম পাথর।
পাথুরে চুন।
তো?
আমি আসলে পাথর সংগ্রহ করি।
মানে, আমার পুরানো জীবনে করতাম।
একটু একটু করে আবার শুরু করতে চাই।
কিংবা তুমি হয়তো হাতুড়ি দিয়ে
কারো মাথা ফাটাতে চাও।
না, স্যার।
এখানে আমার কোন শত্রু নেই।
নেই? কয়েকদিন অপেক্ষা করো।
কথা শুনতে পেলাম।
সিস্টার্সরা নাকি তোমাকে বেশ পছন্দ করেছে।
বিশেষ করে বগস।
মনে হচ্ছে, আমি যে সমকামী না,
সেটা বুঝিয়ে বললেও কোন লাভ হবে না।
রেডঃ তারাও সমকামী না।
আগে তো মানুষ হতে হবে, তারা সেই গুণ পায় নি।
পায়ুকামীরা জোর করে ধরে।
খালি এটাই তারা চায় আর বোঝে।
আমি হলে, চারপাশে চোখ-কান খোলা রাখতাম।
উপদেশের জন্য ধন্যবাদ।
এটা তো বিনামূল্যে দিলাম।
আমার উদ্বেগটা তো বুঝতে পেরেছ।
ঠিক আছে, যদি কোন সমস্যা হয়,
আমি তবুও হাতুড়িটা ব্যবহার করবো না।
তাহলে ধরে নিচ্ছি তুমি পালাতে চাও।
হয়তো দেয়াল ফুটো করে।
কিছু ভুল বললাম নাকি? হাসির কী হলো?
হাতুড়িটা দেখলেই বুঝতে পারবে।
এরকম জিনিসের দাম কেমন হয়?
রত্ন-পাথরের দোকানে সাত টাকা পড়ে।
আমার ভাগ সাধারণত ২০%।
কিন্তু এটা বিশেষ বস্তু।
ঝুঁকি বেশি, তাই দামও বেশি।
ধরে নাও দশ টাকা লাগবে।
দশ টাকাই সই।
আমার মতে এটা টাকার অপচয়।
তা হবে কেন?
রক্ষীরা এখানে হুটহাট তল্লাশি নিতে ভালবাসে।
তারা খুঁজে পেলে এটা খোয়াবে।
তারা যদি ধরেও, তুমি আমাকে চেনো না।
আর যদি আমার নাম বলো,
তাহলে এসব ব্যবসা বন্ধ।
জুতার ফিতা বা একটা চুইংগামও
এনে দিবো না। বুঝলে?
বুঝেছি।
ধন্যবাদ।
মিষ্টার....?
রেড। আমার নাম রেড।
রেড?
তারা তোমাকে এই নামে ডাকে কেন?
হয়তো আমি আইরিশ বলে।
রেড: আমি বুঝতে পেরেছিলাম কেউ কেউ
কেন ওকে নাক উঁচু ভেবেছিল।
ওর মধ্যে একটা চুপচাপ ভাব ছিল।
হাঁটা-চলা, কথা বলায় একটা অন্যরকম ব্যাপার ছিল,
যা এখানে সাধারণত দেখা যেতো না।
সে হেঁটে বেড়াতো...
যেন কেউ পার্কে হাঁটতে বেরিয়েছে,
দিন দুনিয়ার কোন চিন্তাই নেই।
যেন ওর একটা অদৃশ্য কোট আছে,
যেটা ওকে এই জগত থেকে রক্ষা করবে।
হ্যাঁ, বললে ভুল হবে না হয়তো...
যে অ্যান্ডিকে শুরু থেকেই আমার ভাল লেগেছিল।
জলদি! আমাদের তো
সময়ের দিকে খেয়াল রাখা লাগে।
সরাও। জলদি! সরাও!
বব, আছো কেমুন?
বউ পরিবার ঠিক আছে তো?
আস্তে।
নিতে থাকো।
রেড...
রেডঃ অ্যান্ডি ঠিক বলেছিল।
শেষমেশ ঠাট্টাটা ধরতে পারলাম।
এই হাতুড়ি দিয়ে দেয়াল ফুটো করে পালাতে
যে কারো ৬০০ বছর লাগবে।
বই নিবে?
আজকে না।
- বই?
- না।
ওই, ব্রুকস।
ডুফ্রেইনকে দাও।
বই?
ডুফ্রেইন...
এই নাও তোমার বই...
ধন্যবাদ।
ডুফ্রেইন! হেক্সলাইট (ব্লিচিং পাউডার) প্রায় শেষ।
ওদিকে গিয়ে একটু নিয়ে আসো।
এটা তোর চোখে মারলে কানা হয়ে যাবি।
জানু... শশশ্।
এই তো। আরো বাধা দাও।
ওতেই বেশি মজা।
রেডঃ বলতে পারলে ভাল লাগতো,
যে অ্যান্ডি ওদের সাথে যুদ্ধ করে...
জিতে গিয়েছিল।
এটা সত্যি হলে আমি খুশিই হতাম।
কিন্তু জেলখানা কোন রূপকথার রাজ্য না।
কখনো বলে নি কারা এটা করছে।
কিন্তু আমরা সবাই তা জানতাম।
এই অবস্থা বেশ কিছুদিন চললো।
কয়েদি-জীবন নিয়মের ওপর চলে...
নিয়মের ওপর নিয়ম।
মাঝে মাঝেই অ্যান্ডির গায়ে
নতুন কালশিটে দেখা যেতো।
সিস্টার্সরা ওর পেছনে লেগেই থাকলো।
কখনো সে লড়াইয়ে জিতে ওদের ভাগিয়ে দিতো,
আর কখনো হারতো।
আর অ্যান্ডির কপালে এটাই জুটেছিলো।
এটাই তার জন্য রুটিন হয়ে দাঁড়ালো।
আমি নিশ্চিত যে প্রথম দুটো বছর
ওর সবচেয়ে জঘন্য কেটেছে।
এটাও নিশ্চিত যে,
এরকম চলতে থাকলে, এই জেলখানা
অ্যান্ডির সর্বস্ব নিংড়ে নিতো।
কিন্তু একদিন, উনপঞ্চাশের শুরুতে,
কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলো,
লাইসেন্স প্লেট কারখানার ছাদ
মেরামত করতে হবে।
এক সপ্তাহের কাজ, এক ডজন শ্রমিক লাগবে।
আর জানোই তো,
এরকম বিশেষ কাজের জন্য সুবিধাও আলাদা পাবে।
রেডঃ আউটডোরের কাজ ছিল...
... আর মে মাসে রোদের নিচে কাজ
করার মৌজই আলাদা।
লাইনে দাঁড়াও।
রেডঃ একশোরও বেশি কয়েদি আবেদন করলো।
ওয়ালেস ই আঙ্গার
এলিস রেডিং
শেষে হলো কী?
আমি আর আমার ভাই-বেরাদররা কাজ পেলাম।
গার্ডঃ অ্যান্ড্রু ডুফ্রেইন।
রেডঃ খালি প্রত্যেককে এক প্যাকেট ঘুষ দেয়া লাগলো।
অবশ্য আমার ২০ পার্সেন্টও নিয়ে নিয়েছিলাম।
হ্যাডলিঃ টেক্সাসের এক হোমরা-চোমরা উকিল
সেদিন ফোন করেছে।
বললাম, "জ্বি?"
সে বললো, দুঃসংবাদ আছে,
আপনার ভাই এইমাত্র মারা গেছেন।
আহা, বায়রন, শুনে খুবই খারাপ লাগলো।
আমার লাগে নাই। বদমাশ ছিল একটা।
ঘর পালাইছিল বহুদিন আগে।
ভেবেছিলাম মরেই গেছে।
তো, যাই হোক, উকিলটা বললো,
"আপনার ভাই বিশাল ধনী ছিলেন"।
তেলের ব্যবসা আর কী সব জানি।
লাখ দশেক তো হবেই।
গার্ডঃ দশ লাখ?
কিছু হারামজাদা আসলেই কপাল নিয়ে আসে।
খাইসে! তুমি কিছু পাবে নাকি?
৩৫,০০০। সে আমাকে এটুকু দিয়ে গেছে।
- টাকা?
- হ্যাঁ।
পুরাই পাঙ্খা! ভালো তো!
এক্কেবারে লটারি জিতলে দেখি।
তাই না?
ধুত্তেরি! আয়কর আমার কী অবস্থা করবে জানো?
আমার পেটে একটা গদাম লাথি বসাবে।
বেচারা বায়রন, কপালটাই খারাপ, তাই না?
রেডঃ চৌক্ষে পানি আয়া পড়লো।
কারু কারু কপালডাই ফাটা হয়।
অ্যান্ডি, মাথা খাইছো নাকি?
মোছার দিকে খেয়াল রাখো, ভাই। অ্যান্ডি!
গার্ডঃ তা কিছু ট্যাক্স দিলেও তো
তোমার কাছে অনেকগুলো টাকা...
হ্যাঁ, হ্যাঁ, হয়েছে। একটা গাড়ি কেনার মতো
টাকা থাকবে। তারপর?
ওই গাড়ির জন্যেও ট্যাক্স দিতে হবে।
মেরামত করো রে।
বাচ্চাদের ঘুরাতে নিয়ে যাও রে...
আর যদি বছরের শেষে ট্যাক্সের হিসাব ভুল হয়,
সেটা গাঁটের পয়সা খরচ করে শোধ করো রে।
শুনে রাখো... আঙ্কেল স্যাম!
তোমাকে চুষে ছিবড়ে না করে থামবে না।
- অ্যান্ডি! অ্যান্ডি!
- করছে টা কী?
- মরার শখ হইছে।
- কাজে মন দাও।
ভাই বটে আমার! বাল! (থু)
অই!
মিঃ হ্যাডলি....
আপনার স্ত্রীর ওপর বিশ্বাস আছে?
ওহ, খুব মজা, না।
মুখ সামলা, নাইলে তোর দাঁত
একটাও থাকবে না ওই মুখে।
ইয়ে মানে, সে কি আপনাকে ঠকাতে পারে?
বাড় বাড়ছে তোর। মার্ট, সরো তো।
এই শালা আজ মরবে।
ওকে তো ছাদ থেকে ফেলে দিবে।
তাকে বিশ্বাস করলে এই ৩৫ হাজার টাকা
রাখতে না পারার কোন কারণ নাই।
- কী বললি?
- ৩৫ হাজার টাকা।
- ৩৫ হাজার?
- পুরোটাই।
- পুরোটা?
- প্রত্যেকটা পয়সা।
কী বলছিস বুঝায় বল।
টাকাটা রাখতে চাইলে আপনার স্ত্রীকে দিয়ে দেন।
কেউ নিজের স্ত্রীকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার
উপহার দিলে সেটা রাজস্ব বিভাগ মেনে নেয়।
মিথ্যা কথা! ট্যাক্স ফ্রি?
ট্যাক্স ফ্রি। এর একটা পয়সাও ওরা ছুঁতে পারবে না।
তুমি না সেই বউ খুন করা ধূর্ত ব্যাংকার?
তোমার মতো ধান্দাবাজকে আমি বিশ্বাস করবো কেন?
যাতে তোমার মতো ধরা খেয়ে এখানে পঁচি?
এটা বৈধ। রাজস্বের লোকদের জিজ্ঞেস করে দেখেন।
তারাও সায় দিবে। অবশ্য এটা আপনাকে
বলাটাও আমার বোকামি হচ্ছে।
আপনি নিজেই খোঁজ নিয়ে জেনে যেতেন, আমি নিশ্চিত।
হুম, এই জানা কথাটা তোমার মতো
ব্যাংকারের কাছ থেকে আমার শোনা লাগবে না।
অবশ্যই না। কিন্তু এই করমুক্ত উপহারটা
গুছিয়ে দেয়ার জন্য তো কারো সাহায্য লাগবেই।
খরচের ব্যাপার। উকিল-টুকিল লাগবে।
একদল ছ্যাঁচড়া বদমাশ কোথাকার!
যদি চান, আমি গুছিয়ে দিতে পারি।
আপনার কিছু টাকা বাঁচলো তাতে।
আপনি যদি ফর্মগুলো এনে দেন,
আমি ঠিকঠাক করে দিতে পারবো।
প্রায় কোন খরচ ছাড়াই।
শুধু আমার সাথের এই সহকর্মীদের
বিয়ারের তিনটা বোতল দিয়েন।
গার্ডঃ
সহকর্মী! ভালোই! বড়লোকি কারবার, না?
আমার মতে সবারই এই রোদে কাজের ফাঁকে
দুয়েক বোতল বিয়ার খেলে...
নিজেকে বেশ পুরুষের মতো লাগে।
একান্তই আমার মতামত... স্যার।
ওই তোরা দাঁড়ায়ে রইছিস ক্যান?
কাজ কর!
গার্ডঃ হাত চালা। কাজ কর।
রেডঃ আর এটাই হলো শেষমেশ।
কাজ শেষ হবার একদিন আগে,
উনপঞ্চাশের শুরুতে যে কয়েদিরা
ছাদ মেরামতের কাজ করেছিল...
তারা সকাল দশটায় এক সাথে বসে...
বরফশীতল বোহেমিয়ান বিয়ার খেলো।
শশাঙ্ক সরকারী জেলখানার
সবচেয়ে কঠোর কারারক্ষীদের সৌজন্যে।
ঠাণ্ডা থাকতে থাকতে খেয়ে নে তোরা।
এমনকি এই বদমাশটাকেও
মহান মনে হচ্ছিল।
সেই অপূর্ব রোদের আঁচে বসে বিয়ার খাচ্ছিলাম,
যেন আমরা সবাই মুক্ত স্বাধীন।
মনে হচ্ছিল নিজেদের বাসার ছাদেই কাজ করছি।
নিজের নিজের হর্তাকর্তা।
আর অ্যান্ডি, আয়েশে বসে ছিল ছাদের ছায়ায়,
একটা অদ্ভুত স্মিত হাসি মুখে,
আমাদেরকে বিয়ার খেতে দেখছিলো।
অ্যাই...
ঠাণ্ডা একটা চলবে নাকি, অ্যান্ডি?
না, ধন্যবাদ।
আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।
রেডঃ এটা বলতে পারেন যে সে এসব
করছিল রক্ষীদের সুনজর পাওয়ার জন্য।
কিংবা আমাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য করছিল।
আমার মতে, স্বাভাবিক জীবন কেমন সেটা
একটু অনুভব করতেই সে এসব করেছিল।
হোক না তা অল্প কিছুক্ষণের জন্য।
রেডঃ হইলো রাজা!
দাবা। দাবাই আসল রাজাদের খেলা।
- মানে?
- সভ্য আর কৌশলী।
আর যেটা পুরোই মাথার উপর দিয়ে যায়।
জঘন্য।
আমাকে শেখানোর সুযোগটা তো দাও।
হ্যাঁ, হইছে।
ভাবছি দাবার একটা সেট বানাবো।
তো, আমাকে বলো সেটা।
বললেই এনে দিতে পারি।
দাবার বোর্ডটা তুমি এনে দিলে।
কিন্তু গুটিগুলো আমি নিজে বানাবো।
সাদাগুলো মার্বেলপাথর দিয়ে আর
কালোগুলো হবে সাজিমাটির। তুমি কী বলো?
আমার মতে কয়েক বছর লেগে যাবে।
বেশ, বছর কয়েক তো হাতে আছেই।
কিন্তু পাথরগুলো নাই।
এই মাঠে অমন পাথর নাই বললেই চলে।
বেশিরভাগই নুড়ি।
অ্যান্ডি, আমরা তো মোটামুটি বন্ধুই বলা চলে, তাই না?
হ্যাঁ। তা তো বটেই।
তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?
ওটা কেন করেছিলে?
আমি নির্দোষ, রেড। বাকি সবার মতোই।
তুমি কী করেছিলে?
খুন।
তোমার মতোই।
নির্দোষ?
শশাঙ্ক জেলের একমাত্র দোষী আমি।
পাখিটা কোথায়?
তুমি কীভাবে জানলে?
কীভাবে কী জানলাম?
তার মানে তুমি জানো না? আসো।
পাখিটা এখানে, জনি।
(মহিলা গান গাইছে)
আমার বাড়িতে কোন মেয়ে গাইছে,
বেশ অবাক ব্যাপার, তাই না জনি?
হ্যাঁ, এটা তো বেশ...
বিস্ময়কর।
রেড...
দাঁড়াও, দাঁড়াও...
সে এলো বলে।
আমার যেটা দেখলে মাথা নষ্ট লাগে -
যখন সে ওই চুলের খেলটা দেখায়।
হ্যাঁ, বুঝেছি। এই মাসেই এটা তিনবার দেখেছি।
গিল্ডা, পোশাক ঠিক আছে তো?
আমি?
আহ! যা লাগছে না!
যদ্দুর জানি তুমি জিনিসপত্র আনানোতে ওস্তাদ।
হ্যাঁ। মাঝেমাঝে কিছু এনে দিতে পারি আর কি।
তোমার কী লাগবে?
- রিটা হেওয়ার্থ।
- মানে?
আনতে পারবা তাকে?
তো, এই সেই জনি ফ্যারেল।
আপনার ব্যাপারে অনেক শুনেছি, জনি।
কয়েক সপ্তা লাগবে।
কয়েক সপ্তা?
হ্যাঁ রে ভাই। তাকে তো আমার প্যান্টের ভেতর
ঢুকিয়ে রাখি নাই যে বের করে দিবো।
কিন্তু এনে দিবো অবশ্যই। চিন্তা নাই।
ধন্যবাদ।
- একটা চমক দিলাম, মিঃ ফ্যারেল।
- চমক লেগেছে বটে।
জনৈকঃ ওই বসলি।
ওনাকে বলেছেন আমি এখানে কেন এসেছি?
না। সে ব্যাপারটাও একটা চমক।
প্রস্তুত হন, মিঃ ফ্যারেল।
- ভাগ এখান থেকে।
- কিন্তু সিনেমার রিল বদলাতে হবে যে।
বললাম না ভাগ এখান থেকে!
আজকে চিল্লাবি না?
যা করার করে নাও।
আমার নাকটা ভেঙে দিলো রে!
এখন... আমি এই চেন খুলবো...
আর যা বের করবো, চুপচাপ মুখে নিবি।
তারপর রুস্টারেরটাও মুখে নিবি।
ওর নাকটা ভাঙলি, বদলে কিছু মজা দিবি ওকে।
আমার মুখে যা ঢুকাবি, সেইটা হারাবি।
না। এখনও বুঝিস নাই।
ওরকম কিছু করে দেখ। এই আট ইঞ্চি
শলাটা তোর কান দিয়ে ঢুকায় দিবো।
ঠিক আছে।
এটাও জেনে রাখ, হুট করে মগজে অমন আঘাত পেলে
আমি আরো জোরে কামড়ে ধরবো।
শুনেছি যে আঘাতের ফলাফল এতোটাই তীব্র হয় যে,
চোয়াল দু’টা আলাদা করতেও শাবল লাগে।
কোইত্থিকা শুনছিস এসব?
বইয়ে পড়েছি/
পড়তে জানিস, অশিক্ষিত গোমূর্খ?
সোনা....
এসব বলা ঠিক না।
রেডঃ অ্যান্ডির মুখে বগস সেদিন কিছুই ভরে নি
তার বন্ধুরাও ভরে নি।
তারা যা করেছে...
তা হলো অ্যান্ডিকে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলেছে।
ওকে একমাস হাসপাতালে থাকতে হলো।
আর বগসকে এক সপ্তাহ থাকতে হলো কুঠুরিতে।
সময় শেষ, বগস।
জো হুকুম, হুজুর।
ট্যানয়ঃ সান্ধ্য-গণনার জন্য যার যার ব্লকে ফিরে যান।
কয়েদিরা লকডাউনের আগে রিপোর্ট করুন।
কী?
গার্ডঃ শালা, কই যাচ্ছিস?
হ্যাডলিঃ ওর গোড়ালি ধর।
না! না!
না!
বাঁচাও....
আআহহ!
রেডঃ এর পরে দুটো ব্যাপার আর কখনোই ঘটে নি।
সিস্টার্সরা আর কোনদিন অ্যান্ডিকে ছোঁয়ার সাহস করে নি।
এবং বগস আর কোনদিন হাঁটতে পারে নি।
তাকে একটা কম নিরাপত্তার হাসপাতালে
পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল।
যদ্দুর জানি, জীবনের বাকি দিনগুলো তাকে
খাবারটাও নল দিয়ে খাওয়ানো হতো।
ভাবছি হাসপাতাল থেকে ফেরার পর অ্যান্ডিকে
একটা ভালো সম্বর্ধনা দেয়া যেতে পারে।
ভালোই তো। অন্তত বিয়ারগুলোর জন্য
এটুকু আমরা করতেই পারি।
সে দাবা খেলতে ভালোবাসে।
চলো ওকে কয়েকটা পাথর এনে দেই।
ভাইয়েরা...
পাইছি। পাইছি একটা। দেখো।
হেইউড, এটা তো সাজিমাটি না।
এমনকি মার্বেল পাথরও না।
আসছে একজন, তুমি কি ভূতত্ববিদ নাকি?
ঠিকই বলছে। এটা ওগুলো না।
বেশ, তাইলে কী এইটা?
রেডঃ ঘোড়ার গোবর।
- ধ্যাত্তেরি!
- ধ্যাত্তেরি না। ঘোড়ার গোবর। শুকিয়ে গেছে।
- ইয়া খোদা!
ধুর ছাতা!
রেডঃ এরকম কিছু ভুলচুক হলেও
সবাই মোটামুটি ভালোই করলো।
আর যে সপ্তাহের পরে অ্যান্ডির ফিরে আসার কথা,
আমরা এতো পাথর জড়ো করলাম,
যে কেয়ামত পর্যন্ত ওর আর কিছু লাগতো না।
আমি অবশ্য ওই সপ্তাহে আরো একটা
বেশ বড়ো চালান পেয়েছিলাম।
সিগারেট। চুইং গাম।
হুইস্কি।
মেয়েদের ছবিওয়ালা তাস। কতো কিছু!
এবং অবশ্যই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
স্বয়ং রিটা হেওয়ার্থ।
গার্ডঃ সজাগ সবাই! গরাদ খুলে দাও।
খিয়াল কৈরা। তল্লাশি করবে।
খিয়াল কৈরা। তল্লাশি করবে।
১১৯
১২৩
উঠে দাঁড়া।
উল্টা ঘোর।
হ্যাডলিঃ ওয়ার্ডেনের দিকে ঘোর।
এটা পড়ছো দেখে খুশি হলাম।
কোনো পছন্দের পংক্তি আছে?
"সুতরাং সতর্ক হও, কেননা তুমি জানো না
কখন আসবেন তোমার প্রভু তোমার কাছে।"
মার্ক ১৩:৩৫
আমারও এটা সবসময়ই ভালো লাগে।
কিন্তু এর চেয়েও ভালো আছে, আরেকটা...
“আমিই এই জগতের আলো।...”
“...আমার অনুসারীগণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে না,
বরং তাদের জন্য রয়েছে জীবনের আলোকসজ্জা।”
জন, অধ্যায় ৮, পংক্তি ১২।
আমি শুনেছি তুমি হিসাবে পাকা। খুব ভালো।
সবারই একটা না একটা দক্ষতা থাকা উচিত।
এটার মানে কী?
এটার নাম পাথর-পালিশ। কোন পাথর
ঘষামাজা করতে ব্যবহার করে।
ছোট্ট শখ বলতে পারেন।
বেশ নির্দোষ। দুয়েকটা উল্টাপাল্টা জিনিস আছে,
তবে শাস্তি দেয়ার মতো কিছু নেই।
আমি বলবো না যে এটার অনুমতি দিচ্ছি।
আবার মনে হয়...
মাঝে মাঝে ব্যতিক্রম করাই যায়।
হ্যাডলিঃ আটকে দাও।
প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
এটা থেকে তোমাকে বঞ্চিত করতে চাই না।
এর ভেতরেই আছে মুক্তি।
হ্যাঁ, স্যার।
রেডঃ: এই তল্লাশিটা আসলে একটা অজুহাত ছিল মাত্র।
আসল ঘটনা হলো, নর্টন অ্যান্ডিকে যাচাই করতে চাচ্ছিল।
আমার স্ত্রী ওটা চার্চের সমিতিতে বানিয়েছিল।
খুবই সুন্দর, স্যার।
ধোপাখানায় কাজ করতে ভাল লাগে?
না, স্যার। তেমন একটা না।
মনে হয় তোমার মতো শিক্ষিত কারো জন্য
আরেকটা উপযুক্ত কাজ বের করতে পারি।
আরে জেইক। ব্রুকস কোথায়?
অ্যান্ডি।
তোমার গলা শুনতে পেলাম এখানে!
তোমার এখানে কাজ দিয়েছে আমাকে।
জানি। আমাকে তারা বলেছে।
একদম অবাক ব্যাপার, তাই না?
ঠিক আছে, তোমাকে একটা ঝটিকা সফর দিয়ে দেই।
আসো।
এই যে দেখো।
শশাঙ্ক জেলের পাঠাগার।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকস।
রিডার্স ডাউজেস্ট সমগ্র।
লুই ল্যামো’র বই।
লুক ম্যাগাজিন।
আর্ল স্ট্যানলি গার্ডেনারের বই।
প্রতি রাতে, এই গাড়ি বোঝাই বই নিয়ে চক্কর মারি।
বই যারা নেয়, তাদের নাম এখানে লিখি।
সোজাসাপ্টা, নেই কোন ঝাপ্টা। আর কিছু?
ব্রুকস, তুমি কতদিন ধরে এখানে লাইব্রেরিয়ান?
ওহ... এখানে এসেছি ১৯০৫ সালে, আর
আমাকে লাইব্রেরিয়ান বানিয়েছে ১৯১২ সালে।
আর এর মধ্যে তোমার কোন সহযোগী ছিলো?
না, না, মোটেই না, আসলে।
তাহলে আমাকে কেন? এখন কেন?
আমি জানি না।
কিন্তু এখন তোমাকে সাথী পেয়ে
এখানে আমার ভালোই লাগবে।
হ্যাডলিঃ ডুফ্রেইন!
এটাই। এটাই সেই লোক।
আমি ডিকিনস।
(ইতস্তত) আমি চাইছিলাম...
ভাবছিলাম আমার বাচ্চাদের পড়াশোনার জন্য
যদি একটা তহবিল বানানো যেতো।
ওহ.....
বুঝেছি।
তা, বেশ...
... চলেন এখানে বসি আমরা,
আর সব ঠিকঠাক করি।
ব্রুকস, তোমার কাছে কাগজ আর পেন্সিল আছে?
ধন্যবাদ।
তো...
মিঃ ডিকিনস.....
তখন অ্যান্ডি মিঃ ডেকিনসকে বললো,
"আপনি আপনার ছেলেদেরকে হারভার্ড,
- নাকি ইয়েলে পড়াবেন?"
- সে নিশ্চয়ই এইটা বলে নাই?
খোদার কসম, এটাই বলেছে!
ডিকিনসের চোখের পলক পড়ছিল না,
পারলে উনি হেসেই উড়িয়ে দেন।
শেষে অবশ্য তিনি অ্যান্ডির সাথে হাত মিলালো।
কইছে তোমাকে!
হাত মিলালো!
আমার তো অবস্থাই খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো!
খালি যদি অ্যান্ডি স্যুট টাই পরা হতো,
আর ওর টেবিলে একটা শোপিস থাকতো,
তাহলে ডিকিনসের অবস্থা হতোঃ
"মিঃ ডুফ্রেইন, দয়া করে যদি করে দিতেন"!
নতুন বন্ধুবান্ধব বানাচ্ছো নাকি, অ্যান্ডি?
এটাকে ঠিক "বন্ধু" বলবো না।
আমি একটা দাগী আসামী যে
আর্থিক পরিকল্পনা প্রদান করে।
এমন পোষা কুকুর কে না চায়।
যদিও তোমাকে ধোপাখানা থেকে বাঁচিয়েছে এটা!
এই গুণ দিয়ে আরো বেশি পেতে পারি।
লাইব্রেরিটা বড় করলে কেমন হয়?
কিছু নতুন বই নিয়ে আসলাম।
যদি কিছু চাইতেই চাও তাহলে
একটা পুল টেবিল চাও।
- ঠিক।
- তুমি এটা করবে কীভাবে?
মানে, কিছু নতুন বই নিয়ে আসা আর কি,
মিঃ ডুফ্রেইন, যদি দয়া করে বলেন!
ওয়ার্ডেনের কাছে টাকা চাইবো।
বাছা, বাছা, এই জেলে ছয়জন
ওয়ার্ডেনকে আসতে যেতে দেখলাম।
আর এর মধ্যে একটা অকাট্য সত্য কথা জেনেছি।
টাকা খরচের কথা শুনলেই এরা সবাই খচ্চরের
চাইতেও বড়ো কিপটা হয়ে যায়।
বাজেট যা পাওয়া যায়, সেটাই অনেক কম।
জ্বি আচ্ছা।
আমি মন্ত্রিসভার কাছে চিঠি লিখে
তহবিল চাইতে পারি।
তারা জেলখানার জন্য কেবল তিনটা
কারণেই টাকা খরচ করেন।
দেয়াল বানাতে, গারদ বানাতে আর রক্ষী নিয়োগে।
তবুও যদি অনুমতি দেন, সপ্তাহে একটা চিঠি পাঠাতে চাই।
চিরকাল তো আর উপেক্ষা করবে না।
অবশ্যই পাঠাবে।
মনে চাইলে যতো ইচ্ছা চিঠি লেখো।
আমি নিজেই ওগুলো পোস্ট করে দিবো, কী বলো?
রেডঃ তাই অ্যান্ডি ফি সপ্তাহে চিঠি লেখা শুরু করলো।
যা বলেছে, তাই।
আর নর্টনও যা বলেছিলো তাই হলো,
অ্যান্ডিকে কেউ জবাব দিলো না।
সে’বছর এপ্রিলে, অ্যান্ডি জেলের অর্ধেকেরও বেশি
রক্ষীদের খাজনা আদায়ের কাজ করে দিলো।
আর পরের বছর, সবারটাই।
এমনকি ওয়ার্ডেনেরটাও।
তার পরের বছর, আন্তঃজেল খেলাগুলো...
খাজনা আদায়ের সময়ের সাথেই পড়েছিল।
শশাঙ্কের বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রাও
তাদের খাজনার ফর্ম নিয়ে হাজির হলো।
832
00:56:49,072 --> 00:56:53,200
তো, মোর্সবি জেল আপনাকে পিস্তল দিয়েছে,
কিন্তু ওটার দাম আপনাকে দিতে হয়?
আর হ্যাঁ। সাথে পিস্তলের খাপের দামও দিতে হয়।
এটার খাজনা দেয়া লাগে না।
আপনার ওটা আর দেয়া লাগবে না।
রেডঃ হ্যাঁ, মশাই। অ্যান্ডি ছিল তাদের কলুর বলদ।
বস্তুত, ট্যাক্সের সময়ে সে এতোই ব্যস্ত হলো...
যে এই কাজের জন্য একজন সহকারীও পেল।
রেড, ১০৪০ ফর্মটার কয়েক কপি দাও তো?
বছরের এক মাস এই কাজের জন্য
কাঠের কারখানা থেকে ছাড়া পেতাম।
ভালোই লাগতো।
আর এতো কিছুর পরেও... সে চিঠি লিখতো।
রেড, অ্যান্ডি।
ব্রুকস!
- দরজায় খেয়াল রাখো।
প্লিজ, ব্রুকস।
- শান্ত হও মিয়া।
- দূরে থাকো!
- দূরে থাকো!
- হচ্ছেটা কী এখানে?
কে জানে কী! একটু আগেই সব ঠিক ছিলো।
আর এখন চাকু নিয়ে এই অবস্থা।
ব্রুকস, শান্ত হয়ে আলাপ করি আসো, হ্যাঁ?
কোন কথার দরকার নেই, বাদ দাও!
এর গলা কাটবো এখুনি!
হেইউড? দাঁড়াও, কী করেছে সে?
সব ওদের দোষ!
আমার...আমার কিচ্ছু করার নেই...
তুমি ওকে মারবা না। এমনকি হেইউডও তা জানে।
- তাই না, হেইউড?
- জানি, অবশ্যি, জানি তো।
তুমি ওকে মেরো না, কারণ ও তোমার বন্ধু,
আর অকারণে তুমি তো এমন করো না।
ঠিক, ঠিক কি না, ভাইয়েরা?
- হ্যাঁ।
- তো, চাকুটা নামাও, ব্রুকস। আমার দিকে তাকাও।
চাকুটা নামাও।
ব্রুকস.....
আল্লাহর ওয়াস্তে ওর গলার দিকে তাকাও।
ব্রুকস, ওর গলার দিকে তাকাও। রক্ত ঝরছে।
এটাই একমাত্র...
এখানে থাকার এটাই একমাত্র উপায়।
ছাড়ো। এ তো পাগলামি।
তুমি নিশ্চয়ই এটা করতে চাও না।
ওটা ফেলে দাও।
থামো। শান্ত হও।
তোমার সব ঠিক হয়ে যাবে।
হেইউডঃ ওর?
আর আমার কী হবে? পাগলা বুইড়া
আমার গলাটা প্রায় কেটেই ফেলেছিলো।
রেডঃ ধ্যাত, হেইউড, দাড়ি কাটতে
গেলেও এর থেকে বেশি কাটে।
ওকে এমন ক্ষেপিয়ে দিলা কীভাবে?
কিছুই না। আমি শুধু বিদায় জানাতে এসেছিলাম।
শোনো নাই? ওর প্যারোলে মুক্তি হয়েছে।
আমি বুঝতেই পারছি না, ভিতরে কী ঘটলো।
বুইড়া ওই গর্তে থেকে থেকে পাগলা হয়ে গেছে।
ওহ, হেইউড, অনেক হয়েছে, বাদ দাও।
- শুনলাম তুমি তখন প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলেছো!
- চুপ কর ব্যাটা!
ওই তোরা থামলি?
ব্রুকসের কোন দোষ নেই।
সে শুধু...
সে জেলখানায় মানিয়ে নিয়েছে।
মানিয়ে নিয়েছে, না ঘোড়ার ডিম!
এই লোকটা এখানে ৫০ বছর ধরে আছে, হেইউড।
৫০ বছর।
এটাই তার সবকিছু।
জেলের ভেতর সে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
একজন শিক্ষিত লোক।
বাইরে, সে কিছুই না।
একটা জেলখাটা বাতে ভোগা কয়েদি।
বাইরে সম্ভবত চাইলেও কোন লাইব্রেরির কার্ড পাবে না।
কী বলছি বুঝতে পারছিস?
রেড, এইসব আজাইরা কথাবার্তা বাদ দাও।
তোমার যা ইচ্ছা তাই বিশ্বাস করো, ফ্লয়েড?
কিন্তু তোমাদের বলে রাখি, এই দেয়ালগুলো বড়ো আজব।
প্রথমে ঘৃণা হবে...
...তারপর অভ্যাস হয়ে যাবে।
অনেকদিন হয়ে গেলে...
একসময় এগুলোর ওপর নির্ভর করতে শুরু করবে।
একেই বলে মানিয়ে নেয়া।
জিগারঃ ধ্যাত!
এরকম হতেই পারে না।
তাই?
ব্রুকসের মতো এতোদিন এখানে থেকে
তারপর এই কথা বইলো।
একদম সত্যি।
এখানে যাবজ্জীবন দিয়ে পাঠায়।
তারপর পুরো জীবনটাই নিয়ে নেয়।
অন্তত যে অংশটার মূল্য আছে, সেটুকু।
আমি আর তোমার যত্ন নিতে পারবো না, জেইক।
এখন যাও তো।
তুমি মুক্ত।
বিদায়।
ভালো থেকো, ব্রুকস।
ব্রুকসঃ বন্ধুরা...
বাইরের পৃথিবীতে সবকিছু এতোই গতিতে চলে
যে আমার বিশ্বাসই হতে চায় না।
দেখে চলো, বুড়ো! মরতে চাও নাকি?
যখন ছোট্ট ছিলাম, একবার একটা গাড়ি দেখেছিলাম।
কিন্তু এখন... সব জায়গায়ই গাড়ি গিজগিজ।
পুরো পৃথিবীটাই হুলুস্থুল অস্থির হয়ে গেছে।
প্যারোল বোর্ড আমাকে ব্রিউয়ার নামের
একটা বাড়িতে জায়গা দিয়েছে।
আর মুদির দোকানে ব্যাগ ভরার কাজ দিয়েছে।
পরিশ্রমের কাজ, তাল মেলানোর চেষ্টা করি,
কিন্তু প্রায়ই আমার হাতে বাতের ব্যথা করে।
মহিলাঃ ওনাকে বলেন দু’টা করে ব্যাগ দিতে।
আগের দিন, তলায় ছিঁড়েই গিয়েছিল প্রায়।
দু’টা করে ব্যাগ দেন, উনি যেমন বললেন।
বুঝেছেন?
জ্বি স্যার। অবশ্যই।
ব্রুকসঃ স্টোর ম্যানেজার মনে হয় না
আমাকে খুব একটা পছন্দ করে।
মাঝে মাঝে, কাজের পর পার্কে গিয়ে
কবুতরদের খাওয়াই।
খালি মনে হয় হয়তো একদিন জেইক এসে পড়বে।
কিন্তু সে আসে না।
দোয়া করি, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক,
নতুন বন্ধুবান্ধব বানাক।
রাতে ঘুমের সমস্যা হয়।
ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখি, দেখি যে পড়ে যাচ্ছি।
ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়।
মাঝে মাঝে কোথায় আছি টের পেতেও সময় লাগে।
ভাবছি একটা পিস্তল কিনবো নাকি।
আর এই মুদির দোকানেই ছিনতাই করবো,
যাতে ওরা আমার আসল বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
ম্যানেজারটাকে গুলিও করতে পারি।
উপরি টাইপ হলো ব্যাপারটা।
হয়তো এসব করার মতো বয়সও আমার আর নেই।
এখানে ভালো লাগে না।
সবসময় ভয় পেতে পেতে এখন ক্লান্ত লাগে।
ঠিক করেছি...
আর থাকবো না।
মনে হয় না আমার মতো অচল বুড়োর জন্য
কারো কিছু এসে যাবে।
“মনে হয় না আমার মতো অচল বুড়োর জন্য
কারো কিছু এসে যাবে।”
বিদ্রঃ হেইউডকে বোলো,
ওর গলায় চাকু ধরার জন্য দুঃখিত।
কোন রাগ যেন না রাখে।
-ব্রুকস "
তার এখানে মরা উচিত ছিল।
হ্যাডলিঃ এসব কী হুজ্জোত করেছো? জঘন্য অবস্থা।
বলে রাখছি।
এগুলা কী?
তুমিই বলো, উজবুক।
এগুলো তোমার ঠিকানায় এসেছে।
এখন নাও।
"প্রিয় মিঃ ডুফ্রেইন...
"আপনার অব্যাহত চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে
রাজ্য আপনার পাঠাগার প্রকল্পের জন্য কিছু
তহবিল বরাদ্দ করেছে।"
এ দেখি ২০০ টাকা।
"উপরন্তু, জেলা পাঠাগার হতে
দাতব্য অনুদান হিসেবে আপনাকে এই
ব্যবহৃত বইগুলো পাঠিয়েছে।
আমাদের বিশ্বাস এতে আপনার চাহিদা পূরণ হবে।
এই বিষয়ের সমাপ্তি এখানেই হোক। দয়া করে
পুনরায় চিঠি পাঠানো বন্ধ করুন।"
ওয়ার্ডেন আসার আগেই এসব সরিয়ে ফেলো।
জ্বি, স্যার।
ভালোই হলো, অ্যান্ডি।
ওয়াও!
মাত্র ছয় বছর লাগলো।
এখন থেকে সপ্তাহে একটার বদলে দুইটা চিঠি পাঠাবো।
ওহ, যথেষ্ট পাগলামি হয়েছে।
এখন ক্যাপ্টেন যা বললেন তাই করো,
এগুলো এখান থেকে সরাও।
আমার একটু বাথরুম যেতে হবে।
এসে যেন সব খালি পাই, ঠিক আছে?
ওয়াও!
♪ মোৎজার্টঃ দ্যা ম্যারেজ অফ ফিগারো'র দ্বৈতগান
♪ সুলারিয়া...
অ্যান্ডি,
তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছো?
♪ ..যেফিরেত্তো
♪ এই সন্ধ্যায় এসো...
♪ পাইন বৃক্ষের নিচে...
♪ লতাগুল্ম পাশে...
♪ পাইন বৃক্ষের নিচে...
(দরজা ধাক্কিয়ে) ডুফ্রেইন?
ডুফ্রেইন?
অ্যান্ডি, আমাকে বের হতে দে।
অ্যান্ডি?
রেডঃ আমি আজও জানি না সেই দুই
ইটালিয়ান গায়িকা কী নিয়ে গাচ্ছিল।
সত্যি বলতে কি, জানতেও চাই না।
কিছু কথা অব্যক্ত থাকায় শ্রেয়।
আমার ভাবতে ভালো লাগে যে তারা এমন কিছুর
কথা বলছিলো, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না...
আর অপ্রকাশের যন্ত্রণায় বুকে সুখের মতো ব্যথা হয়।
বলি শোনো, সেদিন সেই কণ্ঠস্বরগুলো যেন
অনেক উঁচুতে ঘুরে ঘুরে উড়ছিল...
রিক্ত কারাগারে আটক কারো
দুর্ভাগা স্বপ্নের চেয়েও অনেক উঁচুতে।
যেন আমাদের একঘেঁয়ে খাঁচার ভেতর
ছটফটে সুন্দর একটা পাখি এসে পড়েছে,
আর এই দেয়ালগুলো ক্রমশ গলিয়ে দিচ্ছে।
আর চকিত কিছু মুহূর্তের জন্য...
শশাঙ্কের প্রতিটি কয়েদি নিজের মুক্তি অনুভব করলো।
এই ঘটনায় ওয়ার্ডেন মারাত্মক ক্ষুদ্ধ হয়ে যান।
দরজা খোলো।
দরজাটা খোলো!
ডুফ্রেইন, দরজা খোলো!
ওইটা বন্ধ করো!
সাবধান, ডুফ্রেইন। ওটা বন্ধ করো!
ডুফ্রেইন...
তুমি শেষ...
রেডঃ এই চালবাজির অপরাধে অ্যান্ডিকে দুই সপ্তাহ
অন্ধকার কুঠুরিতে কাটাতে হয়েছিল।
উঠে দাঁড়া!
- ওরে, দেখো কে এসেছে!
- গুরু!
তু..তু..তুমি ভালো কিছু বাজাতে পারলে না, হাহ?
হ্যাঙ্ক উইলিয়ামস অথবা অন্য কোন গান?
অনুরোধের আসর বসানোর আগেই
তারা দরজা ভেঙে ফেলেছিল।
দুই সপ্তাহ কুঠুরির শাস্তি পেতে হলো,
করে মজা পেয়েছো?
সবচেয়ে সহজ শাস্তি ছিল এটা।
বাকোয়াজ!
কুঠুরির শাস্তি মোটেই সহজ ব্যাপার না।
কুঠুরিতে এক সপ্তাহকে মনে হয় এক বছর।
আমার সাথী মোৎজার্ট আমার সাথে ছিলেন।
তো, তারা, ওখানে ওই রেকর্ড বাজাতে দিয়েছে? হাহ?
রেকর্ড এখানে চলছিলো।
আর এখানে।
এটাই সঙ্গীতের সৌন্দর্য।
ওরা এটা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
তোমাদের কারো সুরের ব্যাপারে এমন লাগে নি?
হ্যাঁ, কম বয়সে আমি একটা হারমোনিকা বাজাতাম।
যদিও পরে অতো আগ্রহ ছিল না।
আর এখানে বাজিয়ে কী লাভ হতো?
এখানেই তো সব থেকে লাভ হতো।
তুমি যাতে ভুলে না যাও, এজন্য দরকার এটা।
ভুলে যাওয়া?
ভুলে যাওয়া যে...
পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা আছে...
..যেটা পাথরের তৈরি না...
যেখানে.....
যেখানে কিছু একটা...
তোমার ভেতরে আছে যেটা ওরা ধরতে পারবে না...
ছুঁতেও পারবে না।
ওটা তোমার।
কীসের কথা বলছো?
আশা।
আশা?
একটা কথা বলি তোমাকে, বন্ধু।
আশা করা একটা ভয়ংকর ব্যাপার।
আশা মানুষকে উম্মাদ বানিয়ে দিতে পারে।
এখানে আশার কোন দরকার নেই।
ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি বুঝলেই তোমার লাভ।
ব্রুকসের মতো?
বসো।
এখানে বলছে, তোমার যাবজ্জীবনের
৩০ বছর সাজা কেটেছো।
তোমার মনে হয় তুমি সংশোধিত একজন মানুষ?
ওহ, জ্বি স্যার।
এতে কোন সন্দেহ নেই।
সত্যিই বলতে পারি যে আমি এখন পরিবর্তিত মানুষ।
সমাজের জন্য আর ক্ষতিকর নই।
চরম সত্য কথা।
সম্পূর্ণভাবে সংশোধিত।
৩০ বছর।
খোদা, তারা যখন এটা বললো,
ভাবছো কোথায় গেল দিনগুলো।
আমি ভাবছি দশ বছর কোথা দিয়ে গেল।
এই নাও।
প্যারোল খারিজ উপলক্ষ্যে ছোট্ট উপহার।
নাও খুলে দেখো।
তোমার প্রতিযোগীকে দিয়ে এটা আনিয়েছি,
কিছু মনে করো না কিন্তু।
তোমাকে চমকে দিতে চাচ্ছিলাম।
এটা খুব সুন্দর, অ্যান্ডি।
ধন্যবাদ।
বাজাও না?
না।
এখনই বাজাবো না।
তিন তলা দক্ষিণ, হাজির।
চার তলা উত্তর, হাজির।
এক তলা দক্ষিণ, হাজির।
ভেতরে যাও।
বাত্তি নিভাও!
রেডঃ অ্যান্ডি ছিল এক কথার মানুষ।
আসলেই সে সপ্তাহে দু’টা করে
চিঠি লেখা শুরু করলো।
শেষ পর্যন্ত ’৫৯ সালে রাজ্য সরকার বুঝলো যে...
খালি ২০০ টাকার চেক দিয়ে
ওকে বুঝ দেয়া যাবে না।
শুধু ওকে থামাতেই বাজেট কমিটি
৫০০ টাকার বার্ষিক ভাতা দেয়া শুরু করলো।
জানলে অবাক হবেন যে অ্যান্ডি
এই সুযোগে কত কিছু করেছিল।
পাঠক সমিতি আর দাতব্য সংস্থার সাথে চুক্তি করলো,
বিক্রি না হওয়া বই স্তুপ ধরে কিনে ফেললো।
ট্রেজার আইল্যান্ড।
রবার্ট ল্যুইস...
..স্টিভেনসন।
সাহিত্য, রোমাঞ্চ অভিযান।
এরপর?
একটা পেয়েছি গাড়ি মেরামতের বই,
আর...
..সাবানের নকশা।
হাতের কাজ আর শখ, এটা যাবে শিক্ষামূলকের ভেতরে।
তোমার পিছনের তাকে।
দি কাউন্ড অব মন্টি ক্রিসকো।
ওটা ক্রিসটো হবে, বলদ।
লিখেছেন আলেক্সান্দ্রে....ডুম্বাস। দুম্বা?
দুম্বা?
ডুমা। এটা কীসের গল্প জানো?
নাতো।
তোমার মজা লাগবে। জেল ভেঙে পালানোর কাহিনী।
তাহলে তো এটাও শিক্ষামূলকের ভেতরে
রাখতে হয়, তাই না?
রেডঃ আমরা বাকি সবাই যখন যেভাবে পারি
সাহায্য করলাম।
যে বছর প্রেসিডেন্ট কেনেডি মারা গেলেন,
অ্যান্ডি সেই বিষ্ঠা আর তেলের
গন্ধওয়ালা গুদাম ঘরটাকে
নিউ ইংল্যান্ডের সেরা কারা-পাঠাগারে পরিণত করলো,
সেখানে হ্যাঙ্ক উইলিয়ামের গানের দারুণ সংগ্রহও ছিল।
(হান্ক উইলিয়ামের গান বাজছে)
♪ হে খুদা, কী করবো তা তো জানি নাআআ...
♪ খালি বসে রই হতাশায়...
রেডঃ ওই বছরই ওয়ার্ডেন নর্টন তার বিখ্যাত
"প্রত্যাবর্তন" কর্মসূচী চালু করেছিলেন।
আপনি হয়তো এটার খবর কাগজে পড়েছিলেন।
এমনকি লুক ম্যাগাজিনে ওনার ছবিও ছাপা হয়েছিল।
বিনামূল্যে কিছু পাবেন না।
এটি সংশোধন ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে
একটি কার্যকর, প্রগতিশীল উন্নয়ন।
এখানের কয়েদিরা পাহারাতে থেকেও,
কারাগারের বাইরে কাজ করবে,
বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে।
এই কয়েদিদের প্রতিদিন সৎ পরিশ্রমের
মর্যাদা শেখার দরকার আছে।
পাশাপাশি তারা সমাজেও তাদের অবদান রাখলো।
জনগণের ট্যাক্সের অল্প কিছু টাকার মজুরির বিনিময়ে।
রেডঃ এই বিবৃতিতে নর্টন যেটা বলে নি,
তা হলো “অল্প টাকার মজুরি” একটা ধোঁয়াশা কথা।
দুধ দুয়ানোর হাজারটা উপায় আছে।
শ্রমিক, কাঁচামাল, সবটাতেই পয়সা মারা যায়।
ওঃ, খোদা, বানের জলের মতন টাকা আসতে লাগলো।
আপনি এটা জারি রাখলে আমার ব্যবসা লাটে উঠবে।
- নেড!
- এই যে দাসের দলকে পেয়েছেন,
এটা দিয়ে সব ঠিকার কাজ নিয়ে নিতে পারবেন।
নেড, আমরা শুধু সমাজসেবা করছি এখানে।
ঠিক, কাগজে কলমে তাই সই।
কিন্তু আমারও তো দু’টো করে খেতে হবে।
স্যাম...
স্যাম, আমাদের কত দিনের পরিচয়।
এই হাইওয়ের প্রকল্পটা আমার দরকার।
যদি না পাই, আমি শেষ।
সত্যি।
এই সুন্দর কেকটা একটু খেয়ে দেখো।
আমার বউ তোমার জন্যই বানিয়েছে।
আর ওই ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখো।
নেড, এই প্রকল্পটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।
দেখলাম, আমার এই লোকজন আরেকটা কাজে ব্যস্ত।
তুমি বরং ভাবীকে কেকটার জন্য ধন্যবাদ দিও আমার।
রেডঃ আর প্রতিটা দুই নম্বুরি,
প্রতিটা কালো টাকার পেছনে,
অ্যান্ডি ওয়াকিবহাল ছিল।
দুইটা জমার হিসাব।
মেইন ন্যাশনাল আর নিউ ইংল্যান্ড ফার্স্ট ব্যাংকে।
রাতের সেশনে জমা দিতে হবে, স্যার।
কাপড়গুলো লন্ড্রিতে নিয়ে যাও।
- দুইটা স্যুট ড্রাই-ক্লিন হবে। আরেকটা কাপড়ের ব্যাগ আছে।
- জ্বি, স্যার।
ওদের বলবে, এবার যদি রঙ জ্বলে যায়,
তাহলে খবর আছে।
আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
- খুব সুন্দর, স্যার।
- পোর্টল্যান্ডে একটা বড় কর্মসূচি আছে।
গভর্নর সাহেবও ওখানে থাকবেন।
এর বাকিটা নিবে নাকি?
যদিও খেতে খুবই বাজে।
ধন্যবাদ, স্যার।
- শুনলাম ইদানিং প্রচুর কেক পাচ্ছে সে।
- যা শুনেছো তা কিছুই না। আসলে অনেক বেশি।
কল্পনাও করতে পারবে না এমন সব জালিয়াতি করছে।
ঘুষের উপরে ঘুষ।
এই জায়গার তল দিয়ে কালো টাকার নদী বইছে।
সমস্যা তো এতো টাকা কোত্থেকে আসছে
সেটার জবাব দেয়া নিয়ে।
এটাই তো আমার কাজ।
নদীকে বানাই খাল, খালকে বানাই ঝর্ণা।
স্টক, বীমা, শুল্কমুক্ত পৌর-বন্ডে সব যায়।
আমি টাকাগুলো বাইরের খাতে কাজে লাগাই।
- আর যখন সে টাকা ফিরে আসে...
- সতী-সাধ্বী নারীর মতো পবিত্র, হুম?
তার চেয়েও বেশি।
অবসর নিতে নিতে নর্টনকে কোটিপতি বানিয়ে দিবো।
সরকার ধরতে পারলে ওর ঠিকানাও
এরকম এক জেলেই হবে।
আরে রেড, আমি তো ভেবেছিলাম
আমার উপরে এরচে বেশি ভরসা করো।
জানি তুমি পাকা লোক, অ্যান্ডি,
কিন্তু সব লেনদেনেরই তো হিসাব থাকে।
কেউ যদি একটু কৌতূহলী হয়,
এফবিআই, আইআরএস, বা অন্য কেউ,
তাহলে কারো না কারো খোঁজ তো পাবেই।
পাবে তো, কিন্তু সেই বান্দাটা আমি না।
এমনকি ওয়ার্ডেনও না।
বেশ তবে। তাহলে কে?
র্যান্ডাল স্টিভেন্স।
সে কে?
ছুপা অংশীদার। সেই আসল অপরাধী, জাঁহাপনা।
ব্যাংক একাউন্টগুলো সব ওর নামেই।
ওখানেই সব শুদ্ধ করা শুরু হয়।
যদি তারা কোন কিছু খুঁজেও পায়,
তাহলে খালি ওকেই পাবে।
কিন্তু সে আসলে কে?
পুরো কাল্পনিক, ভূত।
বোতল ভূতের মামাতো ভাই।
আমি তৈরি করেছি...
ভোজবাজির মতো।
কাগজে কলমে আছে, বাস্তবে নেই।
অ্যান্ডি, এভাবে চাইলেই বানানো যায় না।
অবশ্যই যায়, সিস্টেম কীভাবে কাজ করে
ফাঁকফোকর কোথায়, জানলেই যায়।
খালি চিঠি দিয়েই কতো কিছু করা যায়,
ভাবলেই অবাক লাগে।
মিঃ স্টিভেনের জন্ম সনদ আছে,
ড্রাইভিং লাইসেন্স, সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর, সব আছে।
ভুংভাং দিচ্ছো?
তারা যদি ওসব একাউন্টের খোঁজও পায়,
তাহলে তাড়া করে শেষে
এই কাল্পনিক চরিত্রটাকেই পাবে।
খাইছে আমারে!
তোমাকে কি পাকা বলছিলাম?
তুমি তো রীতিমত এক শিল্পী!
মজার ব্যাপার কি জানো,
বাইরে থাকতে আমি খুব সৎ ছিলাম,
পুরোপুরি একনিষ্ঠ।
এই জেলে এসেই জালিয়াতি শিখলাম।
এটা নিয়ে মন খারাপ হয়?
আমি তো কাউকে ঠকাই না, রেড।
খালি লাভের টাকা এদিক ওদিক করি।
হয়তো এই রেখাটা খুব অস্পষ্ট...
লাইব্রেরিটাও তো বানিয়েছি,
আর এতোগুলো মানুষকে স্কুল পাশের ডিগ্রি
পেতে সাহায্যও করেছি।
ওয়ার্ডেন কেন আমাকে এসব ভাল কাজ করতে দিচ্ছে?
যাতে তুমি চুপ থাকো আর
তার কাজ করে দাও।
কাপড়ের জায়গায় টাকা সাফ করা।
হুম, আপোষ করতে হচ্ছে,
সাফাইয়ের কাজটা সস্তায় করে দিচ্ছি।
(জনি অটিসের গান বাজছে)
♪ Willy And The Hand Jive
♪ I know a cat named...
রেডঃ টমি উইলিয়ামস শশাঙ্কে
এসেছিলো ১৯৬৫ সালে।
চুরিডাকাতির জন্য দুই বছরের সাজা।
আপনার কাছে চুরিডাকাতি তো সেটাই।
পুলিশ তাকে ধরেছিল জেসি পেনি থেকে
একটা টিভি গাপ করার সময়।
বয়সে তরুণ।
ঝাকানাকা পোলা।
ফুটানিতে ওস্তাদ।
আরে, হাত চালান, বুড়ো দাদুরা!
শামুকের মতো কাজ করলে হবে!
আমার মানসম্মান গেল।
রেডঃ আমাদের সাথে সাথেই
ওকে পছন্দ হয়ে গেল।
তো আমি পিছনের দরজা দিয়ে পালাচ্ছি, বুঝলেন?
আর ইয়া একটা টিভি ধরে আছি। এভাবে।
বিশাল বড়। কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না।
হঠাৎ, শুনতে পেলামঃ
"দাঁড়াও! হাত উপরে তোলো!"
তো, আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
টিভিটা হাতেই ধরা। তো, শেষে, আবার বললো,
"কী বলছি শুনতে পাচ্ছিস, অই ব্যাটা?"
বললাম, "জ্বি স্যার, শুনতে পেয়েছি।
"কিন্তু যদি এটা ফেলে দিই, তাহলে তো
আমাকে ভাঙচুরের মামলাতেও ফাঁসাবেন।"
আচ্ছা, তুমি তো ক্যাশম্যান জেলেও ছিলে, তাই না?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। অল্প কিছুদিন ছিলাম, বুঝলে।
সাপ্তাহিক ছুটি দিতো, কাজের শিডিউলও ছিল।
এখানের মতো না।
মনে হচ্ছে সারা নিউ ইংল্যান্ডেই জেল খেটেছো।
হুম, সেই পিচ্চিকাল থেকেই আসা-যাওয়ার মধ্যে আছি।
খালি নাম বলেন, দেখবেন সেই জায়গায় আমি খেটে এসেছি।
এখন না হয় অন্য পেশায় চেষ্টা করো?
মানে, তুমি তো চোর হিসেবে তেমন একটা ভাল না,
মনে হয় অন্য লাইনে চেষ্টা করলে ভাল করবে।
হ্যাঁ, তুমি এতো কিছু কেমনে জানো, মিয়া?
তোমাকে কেন ধরেছে?
আমাকে?
উকিল ধোঁকা দিয়েছে।
এখানে সবাই নিষ্পাপ। এটা জানো না?
রেডঃ জানা গেল, টমির বউ আর বাচ্চা আছে।
হয়তো বউ-বাচ্চা ঠিকমতো আছে কি না, কিংবা
সে ভেবেছে তার মেয়েটা কখনো বাপের কথা জানবেও না...
এমন কিছু ভেবেই হয়তো তার ভেতরে একটা
অদম্য ইচ্ছার জন্ম হলো।
ভাবতেছি হাইস্কুল ডিপ্লোমার জন্য চেষ্টা করবো।
শুনেছি আপনি অনেককে সাহায্য করছেন।
আমি গো-হারাদের পেছনে সময় নষ্ট করি না, টমি।
আমি কোন গো-হারা না!
- ভেবে বলছো তো?
- জ্বি।
সত্যিই ভেবে বলছো?
জ্বি স্যার, সত্যি বলছি।
ভালো। কারণ এ পথে গেলে,
পুরোটা শেষ করতে হবে,
আধাআধি ছাড়তে পারবে না।
আসলে হয়েছে কি,
আমি অতো ভাল পড়তে পাড়ি নাই।
পারি নাই।
তুমি অতো ভাল পড়তে...
পারো নাই।
আচ্ছা সে শেখা হবে ‘খন।
- R.
- R...
- S.
- S...
রেডঃ অ্যান্ডি টমিকে শিষ্য বানিয়ে ফেললো।
বর্ণপরিচয় দিয়ে ওর আবার হাতেখড়ি হলো।
টমিও বেশ ভালোই মানিয়ে নিলো।
ওর মগজে যে আদৌ বস্তু আছে, সে সেটা জানতোই না।
কিছুদিনের মধ্যেই অ্যান্ডি
ওকে পরীক্ষার জন্য পড়ানো শুরু করলো।
ও আসলেই ছেলেটাকে পছন্দ করতো।
এটা তাকে একটা নতুন কুঁড়িকে গোবর থেকে তুলে
বেড়ে উঠতে সাহায্য করার আনন্দ দিলো।
কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ না।
জেলেখানার সময় মন্থর সময়।
তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে সবাই।
কেউ কেউ স্ট্যাম্প সংগ্রহ করে।
কেউ ম্যাচের কাঠি দিয়ে ঘরবাড়ির মডেল বানায়।
অ্যান্ডি একটা পাঠাগার তৈরি করেছিল।
কিন্তু এখন আরেকটা নতুন কাজ দরকার।
টমি ছিল ওর সেই নতুন প্রকল্প।
এই একই কারণে ওই পাথরগুলোকে
সে বছরের পর বছর ধরে ঘষামাজা করছিল।
একই কারণে নায়িকাদের ছবি দেয়ালে ঝুলতো।
জেলখানার ভেতর,
মনকে ব্যস্ত রাখার জন্য
হেন কাজ নেই যা কেউ করে না।
১৯৬৬ নাগাদ, ঠিক যখন টমি
তার পরীক্ষার জন্য প্রায় প্রস্তুত,
সেই নায়িকাটা ছিল র্যাকেল।
সময় শেষ।
তো?
তো মানে কচু।
পুরা একটা বছর হুদাই নষ্ট করলাম।
- এসব বালের পড়াশোনায়।
- যতো খারাপ ভাবছো, ততোটা হয় নি।
তারচেয়েও বেশি। একটা কিছুও ঠিক হয় নি।
চাইনিজে লিখলে যেমন হতো তেমন হইছে।
দেখি ফলাফল কেমন আসে।
আমি জানি কেমন ছাতার ফলাফল আসবে।
নেন, দুই পয়েন্ট হইলো।
এইটাই খেলার ফলাফল!
বালের যত বিলাই গাছ বেয়ে উঠতেছে,
পাঁচ দু’গুনে পাঁচ হইলো পঁচিশ।
এই জায়গার গুষ্টি কিলাই!
গুষ্ঠি কিলাই!
খুব খারাপ লাগছে। ওনাকে হতাশ করলাম।
ধুর ব্যাটা, ফালতু কথা।
ও তোমাকে নিয়ে গর্বিত।
আমরা অনেকদিনের ব্ন্ধু, তাই ওকে
খুব ভালো ভাবে চিনি।
- উনি খুবই বুদ্ধিমান, তাই না?
- যতোটা হওয়া সম্ভব, ঠিক ততোটাই।
বাইরে সে এক ব্যাংকার ছিল।
এখানে ওনাকে কেন ধরেছিল?
খুন।
কী বলেন আবোলতাবোল!
তাকে দেখে সেটা বুঝতে পারবে না।
তার স্ত্রীকে কোন এক প্রেমিকের সাথে বিছানায় পেয়েছিল।
দু’জনকেই খুন করছিল।
কী?
চার বছর আগে,
আমি থমসন জেলে দুই-তিন বছরের জন্য ছিলাম।
একটা গাড়ি চুরি করেছিলাম। পুরো বোকামি।
যখন সাজা ফুরানোর ছয় মাস বাকি,
একজন নতুন রুমমেট আসে জেলে।
এলমো ব্ল্যাচ।
বিশাল আকৃতির বদমাশ।
যেমন রুমমেট কেউ চায় না।
বুঝছেন কী বলছি?
ছয় থেকে বারো বছর সাজা,
অস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করতো।
সে বলেছিলো, একশো’রও বেশি ডাকাতি করেছে।
যদিও বিশ্বাস হতো না, কারণ
সে খুবই ভীতু কিসিমের লোক।
কেউ জোরে পাদ মারলেই
চমকে তিন ফুট লাফ দিতো।
আর সারাক্ষণ বকর বকর।
এইটা আরেকটা ব্যাপার ছিল,
মুখ সারাক্ষণ চলতো।
কোথায় কোথায় ছিল,
কী কী করেছে, কারে কারে করেছে,
এমনকি কাদের খুন করেছে, সেটাও বলতো।
যারা তার সাথে ঝামেলা করেছে,
তাদের খুন করতো।
এটাই ছিল তার নীতি।
তো...
একদিন রাতে, হাসতে হাসতে বলে,
তাকে আমি বললাম,
"তা, এলমো, কাকে খুন করেছো?"
সে বললো...
একবার একটা কান্ট্রি ক্লাবে
ওয়েটারের চাকরি নিয়েছিলাম।
যাতে পাত্তিওয়ালা লোকজন চিনতে পারি।
একজনকে ঠিক করলাম, চুরির জন্য।
রাতে তার বাসায় ঢুকলাম।
সে ঘুম থেকে উঠে পড়লো।
ঝামেলা করছিল।
তাই তাকে খুন করেছিলাম।
সাথে একটা মাগী ছিল, সেইটাকেও।
মজার ব্যাপার হলো তারপর।
ওই মেয়েটা আসলে এই গলফ
খেলোয়াড়ের সাথে পরকীয়া করছিলো।
কিন্তু সে আবার বিবাহিত ছিল।
তার স্বামী কোন এক হোমরাচোমরা ব্যাংকার।
আর ওই লোকটাকেই শেষে দোষী বানিয়েছে।
বলতেই হচ্ছে, জীবনে এত মজার গল্প
আমি কখনো শুনি নি।
সবচে অবাক হলাম দেখে যে
তুমি এটা আবার বিশ্বাসও করেছো।
স্যার?
দেখো...
বুঝতেই পারছি যে তোমাকে দেখে
এই উইলিয়ামস ছেলেটা মুগ্ধ হয়ে গেছে।
এখন তোমার দুঃখের কাহিনী শুনেছে,
শুনে স্বভাবতই তোমাকে খুশি করতে চেষ্টা করছে।
বয়সও কম, অতো বুদ্ধিশুদ্ধিও নেই।
সে হয়তো জানেও না
তোমার কী অবস্থা হয়েছে এই গল্প শুনে।
স্যার, সে সত্যি কথা বলছে।
বেশ, ধরে নিচ্ছি, কথার কথা,
যে ব্ল্যাচ নামে কেউ আসলেই আছে।
তোমার কী মনে হয় সে কেঁদে কেটে স্বীকার যাবে,
"জ্বি আমিই খুনী! স্বীকার করছি!
শোনেন, আমাকে আরেকটা যাবজ্জীবন দেন"?
আপনি জানেন তাতে কিছু যায় আসে না।
টমি স্বাক্ষী হলে আমি একটা সুযোগ পেতে পারি।
সেটা হতে পারে কেবল যদি ব্ল্যাচ
সেই জেলে এখনো থেকে থাকে।
হতে পারে সে এখন মুক্তি পেয়েছে।
ওরা তো আসামীদের ঠিকানা রেখে দেয়,
কিংবা আত্মীয়-স্বজনের নামধাম থাকে।
একটা সুযোগ তো আছে, তাই না?
আপনি এমন নির্বোধের মতো
কথাবার্তা বলছেন কেন?
কী বললে?
কী বললে আমাকে?
নির্বোধ। এটা কি ইচ্ছা করে করছেন?
বাছা, বেশি বাড় বেড়ো না।
ওই কান্ট্রি ক্লাবে নিশ্চয়ই তার চাকরির হিসাব আছে,
লেনদেন, ট্যাক্সের কাগজ,
- ওসবে তার নামও থাকবে।
- এসব বানোয়াট কল্পনা করতে চাইলে সেটা তোমার ব্যাপার।
- এটা আমার দায় না। এই আলোচনা এখানেই শেষ।
- স্যার, যদি কখনো মুক্তি পাইও,
আমি কখনই বলবো না এখানে কীসব চলে।
টাকা সাফাইয়ের কাজে আমিও তো সমান দোষী।
আর কক্ষণো আমার সামনে
টাকার নাম মুখে নিবি না, কুত্তার বাচ্চা। এই অফিসে না।
কোথাও না! অ্যাই কে আছিস, ভেতরে আয়।
আমি খালি আপনাকে একটু ভরসা
দিতে চাচ্ছিলাম স্যার। আমি...
কুঠুরিতে পুরে দাও। এক মাস।
- জ্বি, স্যার।
- আপনার সমস্যা কী?
- ওকে নিয়ে যাও এখান থেকে।
- এটা আমার একমাত্র সুযোগ! বুঝছেন না কেন?
এটা আমার জীবন-মরণের ব্যাপার! কেন বুঝছেন না?
- নিয়ে যাও! নিয়ে যাও!
- এটা আমার জীবন-মরণের ব্যাপার!
না!
কুঠুরিতে এক মাস।
এতো লম্বা শাস্তির কথা এর আগে শুনি নাই।
সব আমার দোষ!
ফালতু কথা!
তুমি ওই খুনও করো নাই,
আর অ্যান্ডিকে শাস্তিও দাও নাই।
রেড, বলতে চাইছো অ্যান্ডি নিরপরাধ?
মানে, আসলেই নিরপরাধ?
দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
ওহ খোদা!
এখানে কদ্দিন হলো ওর?
১৯৪৭ থেকে। তাহলে কতো হয়?
- ১৯ বছর।
টমিঃ ১৯ বছর...
গার্ডঃ টমাস উইলিয়ামস।
- জ্বি, এই যে এখানে।
- এডওয়ার্ড প্যাক্সোন।
- হ্যাঁ।
কীসের চিঠি? শিক্ষা বোর্ড থেকে?
- অ্যান্ডি পাঠিয়ে দিয়েছিল।
- মনে তো হচ্ছে তাই।
এটা খুলবা নাকি দাঁড়িয়ে আঙুল চুষবা?
আঙ্গুল চোষাই ভাল মনে হচ্ছে।
আরে স্কিট, ধুরো, দাও দেখি, বেকুব কোথাকার!
- ফ্লয়েড, দাও না।
- এখানে, এখানে!
হেই, রেড!
দেখেন, এটা ফেলে দেন প্লিজ?
দেখছো কাণ্ড!
পোলাটা পাশ করেছে। C+ পেয়েছে।
ভাবলাম শুনে ভালো লাগবে।
ওয়ার্ডেন তোমাকে সালাম দিয়েছেন।
এখানে? বাইরে?
উনি তো তাই বললেন।
ওয়ার্ডেন?
টমি।
টমি...
আমার অনুরোধ, এই আলাপের কথা
কেবল তোমার আমার মধ্যে রাখবে।
এমনিতে বেশ বিব্রতকর লাগছে।
একটা বাজে ঝামেলা তৈরি হয়েছে।
আমি মনে করি তুমি সেটা বুঝতে পারছো।
জ্বি স্যার।
বুঝতে পারছি।
শোনো, বাছা, পুরো ঘটনাটা হুট করে
আমাকে খুব অপ্রস্তুত করে দিয়েছে।
এটার চিন্তায় আমি রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারছি না।
সঠিক কাজটা করতে হবে।
মাঝে মাঝে সঠিক কাজটা
চিনতে পারা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বুঝতে পারছো?
তোমার সহযোগিতা চাই, বাছা।
যদি এই পদক্ষেপটা নেই,
তাহলে সংশয়ের কোন সুযোগ থাকতে পারবে না।
আমাকে জানতেই হবে তুমি ডুফ্রেইনকে
যা বলেছ তা সত্যি কি না?
জ্বি স্যার।
পুরোপুরি সত্যি।
বিচারক আর জুরির সামনে
শপথ নিয়ে বলতে পারবে?
হাতে থাকবে ধর্মগ্রন্থ...
আর খোদার কসম কেটে বলতে হবে।
আমাকে শুধু সেই সুযোগটা দিন।
আমিও এটাই ভেবেছিলাম।
নিশ্চয়ই শুনেছো...
খুব খারাপ খবরটা।
এমন কমবয়সী একটা ছেলে, অল্প কিছুদিন আর বাকি,
এভাবে পালাতে চাইলো।
ওকে গুলি করতে গিয়ে
ক্যাপ্টেন হ্যাডলিরও খুব খারাপ লেগেছে।
আসলেই খারাপ লেগেছে।
সবকিছু ভুলে সামনে এগোতে হবে।
ভুলে যেতে হবে।
এসব আর করবো না।
সবকিছু থামান।
নয়তো এসব দু’নম্বুরি অন্য কাউকে দিয়ে করান।
কিছুই থামবে না।
কিছুই না।
নয়তো তোমাকে ভয়ঙ্কর কঠিন
সময় পার করতে হবে।
রক্ষীদের কাছ থেকে আর কোন নিরাপত্তা পাবে না।
তোমার ওই আরামের এক বেডের সেল থেকে নামিয়ে
পায়ুকামীদের সাথে ফেলে দেবো।
তোমার মনে হবে পেছন দিয়ে ট্রেন ঢুকে যাচ্ছে।
আর ওই লাইব্রেরি?
শেষ!
ওখানের প্রত্যেকটা ইট খুলে ফেলবো।
আর বইগুলো পুড়িয়ে বেশ একটা উৎসব হবে মাঠে।
মাইল মাইল দূর থেকে ওরা সে আগুন দেখতে পাবে।
আমরা আগুনের সামনে উদ্দাম নাচানাচি করবো।
আমার কথা বুঝতে পারছো?
কী বলতে চাচ্ছি বুঝতে পারছো?
নাকি আমি নির্বোধ কথা বলছি?
আরো একমাস সময় দাও। ভাবুক এখানে আটকে।
আমার স্ত্রী প্রায়ই বলতো,
আমাকে বুঝে ওঠা নাকি কঠিন।
যেন একটা বন্ধ বই।
সবসময় এটা নিয়ে অভিযোগ করতো।
খুব সুন্দরী ছিলো।
কী ভালোই না বাসতাম ওকে।
শুধু সেটা দেখাতে পারতাম না, এই যা।
আমিই তাকে খুন করেছি, রেড।
হয়তো আমি গুলি করি নি।
কিন্তু তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।
আর সেজন্যই সে মারা গেছে। আমারই কারণে।
আমার এমন হবার কারণে।
কিন্তু সেজন্য তুমি খুনী হতে পারো না।
বাজে স্বামী হতে পারো, হ্যাঁ।
সেজন্য ভেবে কষ্ট পেতে পারো,
কিন্তু তুমি ওই গুলি করো নি।
না, আমি করিনি।
অন্য কেউ করেছে।
আর আমি এখানে পঁচে মরছি।
আমি মনে করি এটা দুর্ভাগ্য।
হ্যাঁ।
দুর্ভাগ্য আসলে ঘুরে বেড়ায়।
শেষে কারো না কারো উপরে আছর হয়।
হয়ত আমার পালা ছিল, এই যা।
আমি সেই ঝড়টার পথে পড়ে গেছিলাম।
কিন্তু ভাবি নি যে সেটা এতোদিন টিকবে।
তোমার কি মনে হয়, কখনো বের হতে পারবে?
আমি?
হ্যাঁ।
একদিন, যখন আমার লম্বা সাদা দাড়ি হবে
আর মাথায় সমস্যা দেখা দিবে,
তখন আমাকে ছেড়ে দিবে।
আমি কোথায় যাবো শোনো।
জিওহাতানেও।
জি......কি?
জিওহাতানেও।
মেক্সিকোর একটা জায়গা।
প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে।
জানো মেক্সিকানরা প্রশান্ত মহাসাগর নিয়ে কী বলে?
না।
তারা বলে, এটা কোন স্মৃতি রাখে নেই।
ওখানেই আমার বাকি জীবনটা কাটাতে চাই।
স্মৃতিবিহীন একটা উষ্ণ জায়গা।
একটা ছোট্ট হোটেল খুলবো,
সৈকতের পাশেই।
কিছু পুরনো নষ্ট নৌকা কিনবো,
সারিয়ে নতুন বানাবো।
হোটেলের অতিথিদের নিয়ে বের হবো।
মাছ ধরার ব্যবস্থা।
জিওহাতানেও?
অমন জায়গায় একজনকে লাগবে,
যে জিনিসপাতি জোগাড় করতে পারে।
আমি মনে হয় না বাইরে টিকতে পারবো, অ্যান্ডি।
এখানে প্রায় পুরো জীবনটাই কাটিয়ে দিলাম।
এখানে মানিয়ে নেয়া মানুষ আমি।
যেমনটা ব্রুকস ছিলো।
তুমি নিজেকে দাম দিচ্ছো না।
আমার তা মনে হয় নাই।
মানে, এখানে ধরো, আমি
জিনিসপাতি জোগাড় করে দেই।
কিন্তু বাইরে, খালি ইয়েলো পেইজ হলেই চলে।
আমি তো জানিই না কীভাবে কী শুরু করতে হয়!
আর প্রশান্ত মহাসাগর?
বাপ রে।
- অমন বিশাল ব্যাপার, ভাবলেই ভয় করে।
- আমার করে না।
আমি আমার স্ত্রী বা তার প্রেমিককে গুলি করি নি।
যা কিছু ভুল আমি করেছিলাম,
তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দিয়েছি।
এই হোটেল, বা নৌকা...
আমার মনে হয় না সেটা খুব বেশি চাওয়া।
নিজের ওপর এই অত্যাচার করো না, অ্যান্ডি।
এগুলো শুধুই অলীক স্বপ্ন।
বলি, মেক্সিকো সেই কতো দূরে,
আর তুমি বসে আছো এইখানে।
আর এটাই বাস্তব।
হ্যাঁ, ঠিক, এটাই বাস্তব।
ওগুলো কতো দূরে আর আমি এখানে।
মনে হয় এসবই আসলে বেছে নেয়ার ব্যাপার।
বাঁচলে বাঁচার মতো বাঁচো,
নইলে মরে যাওয়াই ভালো।
অ্যান্ডি।
রেড।
যদি কখনো বেরুতে পারো,
আমার একটা কাজ করবে?
অবশ্যই, অ্যান্ডি।
যা বলবে।
বাক্সটনের কাছে একটা বিশাল খড়ের মাঠ আছে।
তুমি জানো বাক্সটন কোথায়?
- হ্যাঁ, শুধু....ওখানে তো অনেক খড়ের মাঠ আছে।
- একটা বিশেষ মাঠ আছে।
ওটায় পাথরের একটা লম্বা দেয়াল আছে।
উত্তর প্রান্তে একটা বিশাল ওক গাছ আছে।
যেন রবার্ট ফ্রস্টের কোন কবিতার মাঠ।
ওখানেই আমার স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
একবার ওখানে পিকনিক করতে গিয়েছিলাম আমরা,
আর ওই গাছের নিচে মিলিত হয়েছিলাম।
আমি বিয়ের কথা বলায় সে হ্যাঁ বলেছিল।
কথা দাও, রেড।
যদি তুমি কখনো বের হও,
ওই জায়গাটা খুঁজে বের করবে।
ওই দেয়ালের গোড়ায় একটা পাথর দেখবে,
যেটা ওখানে থাকার কথা না।
একটা কালো, আগ্নেয়পাথর।
ওটার নিচে একটা জিনিস রেখেছি,
আমি চাই সেটা তুমি নাও।
কী জিনিস, অ্যান্ডি?
ওটার নিচে কী আছে?
তোমাকে সেটা খুলে দেখতে হবে।
না শোনো, বলছি তো, মানুষটা...
কেমন করে জানি কথা বলছে।
- সত্যিই তাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
- ওর ওপর একটু নজর রাখতে হবে।
দিনের বেলা সেটা সম্ভব,
কিন্তু রাতে তো সে নিজের সেলে একা থাকে।
হায় খোদা।
কী?
অ্যান্ডি আজকে লোডিং ডকে এসেছিলো।
- আমার কাছে একটা দড়ি চেয়েছিলো।
- দড়ি?
ছয় ফুট লম্বা দড়ি।
আর তুমি তাকে সেটা দিলে?
দিলামই তো। দিবো না কেন?
ধুরো, হেইউড।
আরে, আমি কীভাবে জানবো?
ব্রুক হ্যাটলেনের কথা মনে নেই?
না, না।
অ্যান্ডি অমন কাজ কখনোই করবে না।
কখনও না।
কী জানি।
প্রত্যেকটা মানুষেরই সহ্যের সীমা থাকে।
তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো।
- বাসায় ফিরতে হবে।
- প্রায় শেষ, স্যার।
আজ রাতে তিনটা জমা।
কাপড়গুলো লন্ড্রিতে দিবে।
আর জুতো পালিশ করে রাখবে।
একদম আয়নার মতো ঝকঝকে দেখতে চাই।
জ্বি স্যার।
তুমি ফিরে ভালোই করেছো, অ্যান্ডি।
তোমাকে ছাড়া জায়গাটা আগের মতো ছিল না।
রক্ষীঃ আলো নেভাও!
রেডঃ মাঝে মাঝে জেলে খুব অস্থিরতায় রাত কাটিয়েছি।
নিকষ অন্ধকারে নিজের দুর্ভাবনার সাথে সম্পূর্ণ একা।
সময় যে ধারালো ক্ষুরের মতো ধীরে কাটে।
ওই রাতটা ছিলো আমার
জীবনের সবচেয়ে লম্বা রাত।
রক্ষীঃ গণনা করো।
তিন তলা দক্ষিণ, হাজির।
চার তলা উত্তর, হাজির।
- তিন তলা উত্তর, হাজির।
- দুই তলায় একজন নেই।
- ২৪৫ নম্বর।
- ডুফ্রেইন!
বাইরে বের হ, ব্যাটা।
দেরি করাস না।
আমাকে আসতে বাধ্য করিস না।
মেরে ভর্তা বানিয়ে দিবো।
ধ্যাত, ডুফ্রেইন, দেরি করিয়ে দিচ্ছিস!
রুটিন মেনে চলতে হবে তো।
যদি অসুস্থ বা মরে না থাকিস,
তাহলে তোর কপালে খারাবি আছে আজকে।
শুনতে পাচ্ছিস?
ওহ, আমার খোদা!
এই ব্লকের প্রত্যেকটা কয়েদিকে জেরা করো।
- প্রথমে ওর ওই দোস্তটাকে ধরো।
- কে?
সে!
২৩৭ খোলো!
সে এখানে ছিলো না, এর মানে কী?
এই কথা শোনাবা না আমাকে, হেইগ।
আরেকবারও এটা বলবা না।
কিন্তু, স্যার, সে ছিলো না।
সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি, হেইগ!
তোমার কি মনে হয় আমি কানা?
কী, তাই মনে হয়? আমি কি কানা, হেইগ?
না, স্যার।
তুমি কী বল?
তুমি কি কানা নাকি?
- বলো এটা কী?
- গত রাতের হাজিরা।
এখানে ডুফ্রেইনের নাম আছে?
দেখছি আছে। এই যে এখানে।
ডুফ্রেইন।
বাতি নেভানোর সময় সে তার সেলে ছিলো।
যুক্তিমতে সকালেও সে এখানেই থাকবে।
আমি তার খোঁজ চাই।
কালকে না, নাশতার পরে না।
এক্ষুণি!
জ্বি স্যার!
চলো, চলো!
তাড়াতাড়ি! হাটো!
দাঁড়াও।
বলো?
কী বলবো?
সবসময় দুইটাকে একসাথে দেখি।
তোমরা হলে মানিকজোড়।
সে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু বলেছে।
না, ওয়ার্ডেন স্যার।
কিছুই বলে নি।
খোদা, অলৌকিক ঘটনা!
একটা মানুষ সোজা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে!
কিছুই নাই, খালি...
এই পাথরগুলো ছাড়া।
আর দেয়ালের এই নায়িকা ছাড়া।
ওকেই জিজ্ঞেস করি তাহলে।
হয়তো সে জানে। বলো তো, সোনা?
বলবা নাকি কিছু?
আহ...
আমার মনে হয় না।
সেই বা বেশি কী বলবে?
এটা একটা ষড়যন্ত্র।
আসলেই তাই...
একটা বিশাল বড়ো...
ষড়যন্ত্র!
প্রত্যেকে এটার সাথে জড়িত!
সে সহ!
(সাইরেন বাজছে)
রেডঃ ১৯৬৬ সালে,
অ্যান্ডি ডুফ্রেইন শশাঙ্ক জেল থেকে পালিয়েছিল।
তারা শুধু তার ময়লা কাপড়, একটা সাবান,...
আর একটা পুরনো পাথর ভাঙার হাতুড়ি পেয়েছিলো,
নর্দমার মধ্যে।
মনে পড়ে আমি ভেবেছিলাম ওই হাতুড়ি দিয়ে
দেয়াল খুঁড়তে ৬০০ বছর লাগবে।
অ্যান্ডি সেটা মাত্র বিশ বছরেই করে ফেলেছিল।
অ্যান্ডি ভূতত্ত্ব ভালোবাসতো।
মনে হয় ওর চরিত্রের কাছে এটার আকর্ষণ ছিল।
একটা তুষার যুগ যেমন,
তেমনই পাহাড় বানানোর সময়।
কয়েক লক্ষ বছর।
ভূতত্ত্ব হচ্ছে চাপ আর সময়ের জ্ঞান।
আসলে সেটাই লাগে।
চাপ...
আর সময়।
আর একটা বিশাল বেঢপ পোস্টার।
আগে যা বললাম,
জেলখানায় মনকে ব্যস্ত রাখতে
সবাই হেন কিছু নেই যা করে না।
জানা গেল, অ্যান্ডির প্রিয় কাজ ছিল
জেলের দেয়ালের গুঁড়ো মাঠে ছড়ানো।
একেক বারে কয়েক মুঠো।
আমার মনে হয়, টমি মারা যাবার পরে,
অ্যান্ডি ঠিক করেছিল, এখানে
আর বেশিদিন থাকা যাবে না।
তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো। বাসায় ফিরতে হবে।
প্রায় শেষ, স্যার।
আজ রাতে তিনটা জমা।
যা বলা হয়েছে, অ্যান্ডি তাই করলো।
জুতো পালিশ করে আয়নার মতো চকচকে করলো।
রক্ষীরা খেয়ালই করে নি।
এমনকি আমিও না।
মানে, কারো জুতোর দিকে
আমরা কয়বারই বা তাকাই?
নিজের মুক্তির দিকে ৫০০ গজ বুকে হেঁটে গিয়েছে
অমন দুর্গন্ধের ভেতর দিয়ে। আমি চিন্তাও করতে পারি না।
হয়তো আমি ভাবতে চাইও না।
৫০০ গজ!
যা প্রায় পাঁচটা ফুটবল মাঠের সমান লম্বা।
আধা মাইলের একটু কম।
পরদিন সকালে, যখন পোস্টারের
রহস্য সবে খোলাসা হচ্ছিলো,
একজন লোক যাকে কেউ চেনেও না...
মেইন ন্যাশনাল ব্যাংকে গিয়ে ঢুকলো।
তার আগ পর্যন্ত,
লোকটা বাস্তবে ছিল না,
খালি কাগজে কলমে ছিল।
আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
রেডঃ তার কাগজপত্র সব ছিল বৈধ,
আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ,
আর সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড।
আর স্বাক্ষরটাও খাপে খাপে মিলে যায়।
বলতেই হচ্ছে, আপনাকে হারিয়ে খারাপ লাগবে।
আশা করি বিদেশে ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ।
অবশ্যই থাকবো।
এই নিন আপনার ক্যাশিয়ার্স চেক, স্যার।
আর কিছু?
দয়া করে...
এটা আমার হয়ে মেইল করে দিতে পারবেন?
নিশ্চয়ই।
- ভাল থাকবেন, স্যার।
- আপনিও ভাল থাকবেন।
রেডঃ মিঃ স্টিভেন্স সেদিন সকালে পোর্টল্যান্ডের
প্রায় ডজনখানেক ব্যাংকে গিয়েছিল।
সবাই বলে, নর্টনের ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা
নিয়ে সে শহর থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল।
১৯ বছরের ‘চাকরি’র অবসর-ভাতা।
শুভ সকাল, পোর্টল্যান্ড দৈনিক সমকাল।
বায়রন হ্যাডলি?
আপনার নীরবতার অধিকার আছে।
নীরবতার অধিকার ত্যাগ করলে, আপনার বয়ান
আপনার বিপক্ষে ব্যবহার করা হতে পারে।
রেডঃ ঘটনাটা নিজের চোখে দেখি নি।
তবে শুনেছি যে বায়রন হ্যাডলিকে আটক করার সময়
সে বাচ্চা মেয়ের মতো কান্নাকাটি করছিল।
নর্টন অতোটা সহজে যেতে চায় নি।
স্যামুয়েল নর্টন?
- আপনাকে গ্রেফতারের পরোয়ানা আছে। দরজা খুলুন।
নর্টন!
দরজা খুলে দেন।
কোন চাবিতে খোলে ঠিক জানি না।
নর্টন!
ভালোয় ভালোয় ধরা দেন, নর্টন।
রেডঃ ভাবতে ভালো লাগে যে মারা যাবার আগে,
বুলেট ছাড়াও, যে বিস্ময় তার মগজ কুরে খেয়েছে,
তা হলো, কীভাবে অ্যান্ডি তাকে এভাবে ধোঁকা দিল।
জেমস কার্টার।
রেডঃ ওয়ার্ডেন আমাদের এতিম করে
চলে যাওয়ার কিছুদিন পরে,
আমি একটা পোস্টকার্ড পেলাম।
ওটা খালিই ছিল, কিন্তু ছাপ দেয়া ছিল,
ফোর্ট হ্যানকক, টেক্সাস।
ফোর্ট হ্যানকক।
সীমান্তের পাশেই।
অ্যান্ডি ওখানেই সীমানা পার হয়েছে।
মনে মনে ভাবি হুডখোলা গাড়ি চালিয়ে
অ্যান্ডি মেক্সিকোর দিকে চলেছে।
ভাবলেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
অ্যান্ডি ডুফ্রেইন,
এক মলমূত্রের নদী পেরুনো মানুষ,
যে বেরিয়ে এসেছিল সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে।
অ্যান্ডি ডুফ্রেইন,
প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে যাচ্ছে।
হ্যাডলি তাকে ধরে চাঙ্গে তুলেছে, বুঝলে?
আর বলছে, “এখনই তোমার একটা দুর্ঘটনা হবে।”
রেডঃ আমরা যারা ওকে চিনতাম,
প্রায়ই ওকে নিয়ে কথা বলতাম।
বিশ্বাস করবা না, সে যা করলো!
"আমার বন্ধুরা কয়েকটা বিয়ার খেলে খুশি হতো!"
- আদায় করে ছাড়লো।
- আদায় করেই ছাড়লো!
রেডঃ মাঝে মাঝে মন খারাপও হতো।
অ্যান্ডি নেই বলে।
নিজেকে বুঝাতাম, কিছু পাখি
বন্দী হবার জন্য জন্মায় না।
তাদের বিভা হয় অদ্ভুত উজ্জ্বল।
আর যখন তারা উড়ে যায়,
আপনার ভেতরে একটা অংশ খুশিই হয়,
যে জানে পাখিটাকে বন্দী করাই পাপ ছিল।
তবুও...
তারা যলে যাওয়াতে জায়গাটা আরো বেশি
রিক্ত আর শূন্য মনে হয়।
মনে হয় আমি আমার বন্ধুটাকে মিস করি।
বসুন।
এলিস বয়েড রেডিং।
এখানে বলছে আপনার যাবজ্জীবনের
৪০ বছর কাটিয়েছেন।
আপনি কি মনে করেন, আপনার পুনর্বাসন হয়েছে?
পুর্নবাসন?
দাঁড়ান, একটু ভেবে নেই।
জানেন, আমার ধারণাই নেই যে এই শব্দটার মানে কী।
এর মানে হলো আপনি আবার সমাজে যোগ দিতে তৈরি...
বাছা, তুমি কী মনে করো সেটা আমি জানি।
আমার কাছে এটা একটা ফাঁকা বুলি মাত্র।
রাজনীতিবিদের শব্দ।
যাতে তোমার মতো কেউ স্যুট-টাই
পরে চাকরি করতে পারে।
তুমি আসলে ঠিক কী জানতে চাও?
যা করেছিলাম সেজন্য দুঃখিত কি না?
বেশ, আপনি কি দুঃখিত?
প্রতিটা দিনই সেজন্য অনুশোচনা হয় আমার।
এজন্য না যে আমি জেল খাটছি, অথবা তুমি
মনে করো যে আমার অনুশোচনা হওয়া উচিত।
চিন্তা করি আমি তখন কেমন ছিলাম।
একটা কমবয়সী...
বেকুব ছেলে যে ভয়ানক একটা অপরাধ করেছে।
ইচ্ছা করে ওর সাথে কথা বলি।
ইচ্ছা করে কথা বলে বুঝানোর চেষ্টা করি।
বলি যে দুনিয়াটা কেমন।
কিন্তু আমি পারি না।
ওই ছেলেটা অনেক আগেই হারিয়ে গেছে।
এখন বুড়ো মানুষটা পড়ে রয়েছ।
এটা আমাকে মেনে নিতে হবে।
পুর্নবাসন?
ওটা একটা বানোয়াট শব্দ।
তুমি তোমার ওই ফর্মে ছাপ্পা মেরে কাহিনী শেষ করো,
আর আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।
কারণ সত্যি বলতে কি,
আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
এই যে নিন, মিস।
রেস্ট রুমে যাবো, বস?
প্রত্যেকবার পেশাব করার জন্য
আমার অনুমতি নিতে হবে না, বুঝলে?
জ্বি স্যার।
রেডঃ ৪০ বছর ধরে অনুমতি নিচ্ছি।
এখন সে অভ্যাস বাদ দিতেও পারছি না।
এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হয়েছি।
বাইরে এসে আমি কিছুতেই টিকতে পারবো না।
সারাক্ষণ আমি কেবল প্যারোল ভঙ্গের কথাই চিন্তা করি,
যেন তারা আমাকে জেলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
ভীত হয়ে বাঁচা বড়ো কষ্টের।
ব্রুকস হ্যাটলিন এটা জানতো, খুব ভাল করেই জানতো।
আমি শুধু চাই ফিরে যেতে,
যেখানে সবকিছুর অর্থ খুঁজে পাবো।
যেখানে আমাকে সবসময় ভীত হয়ে বাঁচতে হবে না।
শুধু একটা ব্যাপার আমাকে ঠেকিয়ে রেখেছে।
অ্যান্ডির কাছে করা সেই প্রতিজ্ঞা।
এসে গেছি।
অনেক ধন্যবাদ, স্যার।
অ্যান্ডিঃ প্রিয় রেড,
যদি তুমি এটা পড়ে থাকো,
তাহলে বের হতে পেরেছো।
আর এতোটুকু যখন এসেছো, তাহলে
মনে হয় আরেকটু আসতে পারবে।
সেই শহরটার কথা তো মনে আছে, না?
জিওহাতানেও।
আমার একজন সৎ লোক দরকার, যে আমার প্রকল্পগুলোতে সাহায্য করবে।
তোমার জন্য পথ চেয়ে থাকবো
আর দাবার বোর্ডও তৈরি আছে।
মনে রেখো রেড,
আশা খুব ভালো জিনিস।
হয়তো সর্বশ্রেষ্ঠ জিনিস।
আর কোন ভাল জিনিস কখনও হারায় না।
আমি আশা করছি তুমি এই চিঠিটা পাবে।
ভালো থেকো।
তোমার বন্ধু, অ্যান্ডি।
রেডঃ বাঁচলে বাঁচার মতো বাঁচো, নইলে মরে যাওয়াই ভাল।
এটাই কঠিন সত্যি।
জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো,
কোন অপরাধ করলাম।
প্যারোলের শর্ত ভাঙলাম।
যদিও সন্দেহ করি তারা এজন্য
রাস্তা বন্ধ করে খোঁজ বসাবে।
আমার মতো বুড়ো হাবড়ার
জন্য এত কষ্ট করবে না।
ফোর্ট হ্যানকক, টেক্সাসের টিকিট দিন।
এতো বেশি উচ্ছ্বাস লাগছিলো যে
বাসের সিটে বসে থাকতেই মন চাচ্ছে না।
এমন উত্তেজনা মনে হয় একজন
মুক্ত মানুষই কেবল অনুভব করতে পারে।
এক দীর্ঘ যাত্রার প্রারম্ভে একজন মুক্ত মানুষ,
যার সমাপ্তি অনিশ্চিত।
আশা করি সীমান্ত পেরোতে পারবো।
আশা করি বন্ধুটার সাথে দেখা
করে হাত মেলাতে পারবো।
আশা করি প্রশান্ত মহাসাগরের পানি
আমার কল্পনার চেয়েও নীল হবে।
আশা করি।