Tip:
Highlight text to annotate it
X
মুভিঃ ★ BIG FISH ★
অনুবাদকঃ নাজমুল হোসাইন শুভ
ফেসবুকে যোগাযোগঃ goo.gl/JlDXUO
কিছু মাছ রয়েছে
যাদের কখনোই ধরা যায় না।
এমন নয় যে তারা খুবই দ্রুত
বা অন্য মাছদের থেকে শক্তিশালী।
তাদের শুধুমাত্র কিছুটা
ভিন্নতার ছোঁয়া রয়েছে।
এমনই একটি মাছ হল "সুবিশালতার প্রতীক".
আর যখন আমার জন্ম হল,
ততদিনে ওটা কিংবদন্তীর মর্যাদা পেয়ে গেছে।
ওটাকে আকর্ষণ করে ধরতে অনেকে
১০০ ডলারও খরচ করতে রাজি ছিল।
কেউ বলে ওই মাছটা ছিল কোন এক চোরের আত্মা...
...যে ওই নদীতে ৬০ বছর আগে ডুবে গিয়েছিল
কেউ বলে ওটা প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর যুগের
কোন মাছের বংশধর।
আমি ওসব কুসংস্কার বিশ্বাস করতাম না।
আমি ঠিক করে ফেলেছিলাম
আমি মাছটাকে ধরবই...
...তখন আমি একদমই ছোট
তোমার থেকে বড় হইনি তখনও।
আর যেদিন তোমার জন্ম হল...
সেদিনই, অবশেষে আমি মাছটাকে ধরতে সমর্থ হলাম।
আমি ওটার জন্য সবকিছু দিয়ে
টোপ ফেলে দেখেছিঃ
পোকা, কৃমি, জোক, বাদামযুক্ত মাখন, পনির এসব।
কিন্তু সেদিন আমি একটা গোপন ব্যাপার জানলামঃ
যদি ওই মাছটা সত্যিই চোর হেনরি ওয়ালের আত্মা হয়,
তবে সাধারণ টোপে কাজ হবে না।
এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে
যা একজন চোরকে সত্যিই আকর্ষণ করবে।
-তোমার আঙ্গুল?
-স্বর্ণ।
আমার দেখা সবথেকে শক্ত রশিতে
আংটিটা বেঁধে নিলাম...
...যে রশি একটা ব্রিজও আকড়ে ধরতে সক্ষম,
যদিও কিছু সময়ের জন্য।
আর তারপর আমি নদীতে নেমে পড়লাম।
ওই সুবিশাল মাছটা লাফ দিয়ে
আবার পানিতে পড়ার আগেই ওটা কামড়ে ধরল।
আর তারপর খুবই দ্রুত,
ওটা রশিটা ছুটিয়ে চলে গেল।
তোমরা বুঝতেই পাচ্ছ আমার দুর্দশা।
আমার বিয়ের আংটি,
যেটা কিনা আমার স্রীর প্রতি আমার বিশ্বস্ততার প্রতীক...
-...যে শীঘ্রই আমার বাচ্চার মা হতে চলেছে...
-কেউ ওকে থামাও।
...সেটা একটা কখনোই ধরা যায় না
এমন একটা মাছের পেটে।
তারপর কি করলে?
আমি মাছটাকে নদীর ওপর নীচ সবখানে খুঁজলাম।
সেই মাছ, সেই সুবিশালতার প্রতীক...
...এতক্ষণ যেটাকে একটা ছেলে মাছ মনে করেছিলাম
আসলে ওটা ছিল একটা মেয়ে মাছ।
ওটার পেটে ডিম ছিল
যেকোন দিন ওটার পেট থেকে ডিমগুলো বেড়িয়ে আসবে।
এখন আমার বিপদে পড়ে গেলাম।
আমার ওই মাছটার কাছ থেকে
বিয়ের আংটিটা ফেরত নিতেই হবে।
...কিন্তু সেটা করলে হয়ত অ্যাশটন নদীর
সবথেকে চালাক সুবিশাল রুই মাছটাকে হারাতে হবে।
আমি কি আমার নিজের হাতে...
...মাছটা ধরার সুযোগ থেকে
নিজেকে বঞ্চিত করতে পারি?
ওটা ছিল মেয়ে মাছ আর আমি...
-আমাদের নিয়তি একইরকম ছিল।
-আমরা ছিলাম একই পথের পথিক।
এখন, আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন...
ওহ, বাবা, সোনা,
এই রাত এখনও অনেক বাকি। ধৈর্য ধর।
...ওটা কেন স্বর্ণের প্রতি এতটা আকৃষ্ট হল,
যেখানে অন্য কোন কিছু ওটার চোখেও পড়ল না পর্যন্ত?
সেদিন আমি একটা শিক্ষা পেলাম...
...যেদিন আমার ছেলে জন্ম নিল।
মাঝে মাঝে একজন ধরাছোঁয়ার বাইরের
কোন মেয়েকেও বিয়ের প্রস্তাব দেয়া যায়...
...যদি তাকে একটি বিয়ের আংটি উপহার দাও।
একজন বাবার তার ছেলের ব্যপারে
কি বলা নিষেধ হতে পারে?
আমি এই গল্পের শেষ অংশ হিসেবে বলব, বাবা...
...তোমার মহান অভিযানের বর্ণনা,
যেটা দুর্ভাগ্যবশত কখনো হয়ই নি,
আমার জন্মের সময় তুমি উইচিটায়
উপন্যাস বিক্রি করতে।
কি বলছ, উইল?
সবাই কত মজা করে শুনছিল!
মোটেও তা নয়, বাবা। আমি অন্তত মজা পাচ্ছিলাম না।
আর এতবার শোনানোর পরে তো মোটেই না।
সবকিছুরই একটা সীমা আছে বাবা।
আমি তোমার গল্পের মত ওদের এটাও বলতে পারি।
এক রাতের জন্য,
সারা জীবনের মধ্যে অন্তত এক রাতের জন্য...
...পুরো মহাবিশ্ব এডোয়ার্ড ব্লুম-এর কথায় চলবে না।
-এটা বুঝতে পারছো না কেন?
-তোমাকে বিব্রত করার জন্য দুঃখিত।
তুমি নিজেকে নিজেই বিব্রত করছ, বাবা।
শুধু তুমি বুঝতে পারছ না ব্যাপারটা।
ওই রাতের পরে আমি আমার বাবার সাথে
৩ বছর ধরে কথা বলিনি।
উইলিয়াম ব্লুম, ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল।
যদি আপনি একটু...
যদিও পরোক্ষ ভাবে আমাদের সাক্ষাত হচ্ছিল।
আমার মা ক্রিসমাস কার্ডে বাবা ও মা
দুজনের পক্ষ থেকেই শুভেচ্ছা জানাতেন।
আর যখন আমি ফোন কল করতাম, মা বলত,
বাবা গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছে বা পুলে সাঁতার কাটছে।
সত্যি বলতে কি মায়ের সাথে আমার কখনোই
বাবার সাথে কথা না বলা বিষয়ে কোন কথা হয় নি।
আসলে তার মধ্যে
আমার কোন ছায়াই আমি খুঁজে পাইনি।
আর আমার মনে হয় না তিনিও আমার মধ্যে
তার কোন ছায়া দেখতে পেয়েছেন।
আমরা ছিলাম এমন অচেনা লোকজনের মতন
যারা একজন আরেকজনকে ভালোভাবেই চেনে।
আমার বাবার জীবনের গল্প বলার সময়...
...বাস্তবের সাথে কল্পনাকে
আলাদা করা ছিল খুবই দুষ্কর।
সবচেয়ে সহজ কাজ হল,
তিনি ওগুলো যেভাবে আমাকে বলেছেন, সেভাবেই বলে ফেলা।
এগুলো অনেকসময় অর্থহীন মনে হয়।
মনে হয় ওসব কখনো ঘটেই নি।
আমার আংটি ফিরিয়ে দাও!
ধন্যবাদ!
কিন্তু গল্পটা এমনই ছিল।
তার জন্মই হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবে
অন্য সবার থেকে অনেক বেশী জায়গা দখল
করে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি।
আর গল্পগুলো যতই অদ্ভুত হচ্ছিল...
...তার শেষটা ছিল তার থেকেও
অনেক বেশী আশ্চর্যের।
হ্যাঁ। হ্যাঁ।
ও এখানেই আছে।
তোমার মা ফোন করেছেন।
আর ড. বেনেট কি বলল?
না, অবশ্যই, আমি তার সাথে কথা বলে নেব।
হ্যাঁ,
আমি অপেক্ষা করব।
বেশী খারাপ অবস্থা?
তারা যেমন ভেবেছিল তার থেকেও খারাপ।
ওরা কেমোথেরাপি বন্ধ করে দিচ্ছে।
-তোমার যাওয়া উচিত।
-হয়তো আজ রাতেই যাবো।
-আমিও তোমার সাথে যাবো।
-না, না, এ অবস্থায় তোমার যাওয়া উচিত হবে না।
আমি তোমার সাথে যাবোই।
তাহলে কোন গল্পটা বলব?
"কুঁড়েঘরের বানর"
নাকি "রাস্তার কুকুর"?
ডাইনি বিষয়ক গল্পটা বলো।
ডাইনি বিষয়ক গল্পটা বলো।
ডাইনি বিষয়ক গল্পটা বলো।
তোমার মা বলেছে
ঐ গল্পটা তোমাকে বলা ঠিক হবে না।
তোমার মা বলেছে
ঐ গল্পটা তোমাকে বলা ঠিক হবে না।
-রাতে দুঃস্বপ্ন দেখবে তাহলে!
-আমি কিন্তু ভয় পাই না।
প্রথম দিকে আমিও ভয় পেতাম না।
ঘটনাটা ঘটে অ্যাশটনের বাইরের এক জলাভূমিতে।
বাচ্চাদের ওখানে যাওয়া নিষেধ ছিল,
কারণ ওখানে সাপ, মাকড়সা ভর্তি ছিল...
...আরো ছিল চোরাবালি, যা চিৎকার করার আগেই
যে কাউকে গিলে নিতে পারে।
সে রাতে আমরা ৫জন ছিলাম।
আমি, রুথি, উইল্বার ফ্রিলি...
আর ডন ও জ্যাকি দুই ভাই।
আমরা কেউই জানতাম না,
সামনে কি ঘটতে চলেছে।
এটা সবাই জানে যে, যেকোন সাইজের শহরেই
একটা ডাইনী থাকে...
যদি কোন দুষ্টু ছেলে...
বা কোন কুকুরের বাচ্চা তার উঠোনে ঘোরাগুরি করে,
ডাইনীরা তাদের হাড় ব্যবহার করে
তন্ত্রমন্ত্র সাধনা করার জন্য...
আর শত্রুর জমিকে অনুর্বর বানিয়ে ফেলে।
-এটা কি সত্যি, যে তার একটা কাচের চোখ আছে?
-আমি শুনেছি ওটা নাকি সে যাযাবরদের কাছ থেকে পেয়েছে।
-যাযাবর কি?
-তোমার মাও একটা যাযাবর।
তোমার মা একটা বেশ্যা।
মেয়েদের সামনে এসব বলা উচিত নয়।
-ধুর!
-ধ্যাত!
ওফ!
আলোটা বন্ধ কর।
ডাইনীটা দেখে ফেলবে।
আলাবামার সব ডাইনীদের মধ্যে...
উনিই ছিলেন সবথেকে ভয়ঙ্কর।
তার যে কাচের চোখ রয়েছে,
সেটাতে নাকি জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে।
আমি শুনেছি যদি কেউ ওটার দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকে,
সে দেখবে তার মৃত্যু কিভাবে হতে চলেছে।
যত্তসব বাজে কথা।
উনি একদম ভুয়া ডাইনী।
এত নিশ্চিত হলে,
যাও গিয়ে চোখটা নিয়ে এসো।
শুনেছি ওটা নাকি ওনার শোবার ঘরের টেবিলের ওপর বাক্সে রাখেন।
বেশী ভয় করছে নাকি?
আমি এখনই গিয়ে চোখটা নিয়ে আসছি।
-দেখি বুকে কত পাটা।
-এখনই যাচ্ছি।
-পারলে করে দেখাও।
-তাই তো দেখাচ্ছি।
এডওয়ার্ড, যেওনা!
সে তোমার শরীর থেকে চর্বি বের করে সাবান বানাবে।
শুনেছি সে নাকি এটাই করে।
মানুষের চর্বি দিয়ে সাবান বানায়।
ম্যাম, আমার নাম এডওয়ার্ড ব্লুম...
...কিছু ছেলেমেয়ে আপনার চোখটা দেখতে চায়।
-চোখটা পেলে?
-আমি নিয়েই এসেছি।
দেখাও দেখি।
ওরে বাবারে, বাঁচাও!
আমি দেখছি আমি কিভাবে মারা যাবো।
আমি বৃদ্ধ এবং আমি উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে মরব।
আমি তো মৃত্যুর সময় মোটেও বৃদ্ধ হব না!
আমি ভাবছি মৃত্যু আর এ সমস্ত বিষয় সম্পর্কে।
মানে নিজের মৃত্যু দেখা বিষয়ে আর কি।
মানে, একদিকে নিজের মৃত্যু আগেই দেখে ফেলা...
...খুবই অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার।
কিন্তু এটা একদিক থেকে সাহায্যও করতে পারে।
তাই না?
কারণ, অন্য সবকিছু, যেগুলো থেকে আমি
বেঁচে ফিরতে পারব সেটা জানতে পারব।
মানে আমি বোঝাচ্ছি,
আমি জানতে চাই ওটা।
তাহলে এভাবেই মরব আমি।
হাই, মা।
-ওটা ড. বেনেটের গাড়ি?
-হ্যাঁ, উনি তোমার বাবার সাথে ওপরেই আছেন।
-কেমন আছেন উনি?
-উম...যা বুঝলাম...
সে অসম্ভব প্রকৃতির মানুষ।
খেতে চায় না, তাই সে বেশ দুর্বল।
আর সে বেশ দুর্বল, তাই সে খেতে চায় না।
-তার মৃত্যুর আর কয়দিন বাকি আছে?
-এসব নিয়ে কথা বলো না।
অন্তত এখনই না।
উইল।
ড. বেনেট।
ওহ, আপনাকে দেখে খুশি হলাম।
ও আমার স্ত্রী, জোসেফিন।
খুশি হলাম।
-তোমার সাত মাস হল।
-আজকেই হল!
তোমার ছেলে হবে।
তাকে একটু ড্রিঙ্ক দিয়ে এসো।
খেতে না চাইলেও, একটু চেষ্টা করো।
বাবা।
একটু পানি খাবে?
-তোমাকে দেখে একটু অবাকই হয়েছি।
-তাই নাকি?
নিজের বাচ্চা হলে আচরণের আমূল পরিবর্তন আসে।
ডায়াপার, ঢেকুরের শব্দ
আর মাঝরাতে খাওয়ানো...
-এগুলোর একটাও করেছ কখনো?
-না।
কিন্তু শুনেছি এসব নাকি খুবই বাজে অভিজ্ঞতা।
তারপর বছরের পর বছর কাটিয়ে দাও
বাচ্চাটাকে ভুলপথে চালিত করতে...
...আর রূপকথার জঞ্জালে ভরিয়ে দিতে,
যদিও পরে সব ঠিক হয়ে যায়।
-তোমার মনে হয় আমি এসবের জন্য প্রস্তুত?
-তুমি এ বিষয়ে একজন সেরা ব্যক্তির কাছ থেকে এসব শিখেছ।
এর থেকে অর্ধেকটা খেয়ে নাও।
মা কে বলব পুরোটা খেয়ে নিয়েছ।
দুজনেই তার বকুনি থেকে বেঁচে যাব।
এতটা চিন্তার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না।
আমার মরার সময় আসেনি এখনো।
আমি এখানে এভাবে মরব না।
-তাই নাকি?
-সত্যি, আমি এটা তার চোখে দেখেছি।
-সেই জলাভূমির বৃদ্ধার চোখে?
-ডাইনী বুড়ি বলো।
না, আসলে তিনি বৃদ্ধা ছিলেন,
হয়তো চোখে ছানিও পড়েছিল।
আমি আমার মৃত্যু তার চোখে দেখেছি,
আর এভাবে এখানে সেটা ঘটবে না মোটেই।
তো কিভাবে ঘটবে সেটা?
প্লটে টুইস্ট আছে।
আগে বললেই তো মজা শেষ!
তোমার মা ভেবেছিলো
আমাদের মধ্যে আর কথা হবে না।
দেখো আমাদের,
আমরা ভালোই কথা চালিয়ে যাচ্ছি।
আমরা গল্প কথক, আমরা দুজনেই তাই।
আমি আমার গল্প মুখে বলি,
আর তুমি সেগুলো লিখে বই বানাও, বিষয়টা তো একই।
বাবা...
আমাদের কিছু কথা বলা দরকার
আমি যখন আছিই...
মানে যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি।
আমি শুধু জানতে চাই
সত্যি ঘটনাগুলো কি?
কোনটা আসল ঘটনা, কোনটা গল্প।
আর তোমাকে।
তোমার মা সুইমিং পুল-টার
খেয়াল রাখতে পারছে না।
-তুমি যদি পারো, ওটা ঠিক করে দেবে?
-হ্যাঁ, অবশ্যই।
-জানো কেমিক্যালগুলো কোথায় রাখা আছে?
-তুমি যখন ছিলে না আমি করেছি ওসব।
আমি টানা খুব বেশী সময় বাড়িতে থাকিনি, উইল।
নিজেকে খুব সীমাবদ্ধ লাগে।
আর এই বিছানা সারাদিন শুয়ে থাকাটা...
মৃত্যুই হবে আমার জীবনে ঘটা
সবথেকে বাজে ঘটনা।
-তুমিই না বললে তুমি এখন মরছ না।
-আমি বলেছি এখানে এভাবে মরব না।
গল্পের শেষ অংশটাই হয় সবথেকে অদ্ভুত।
বিশ্বাস করো যা বলছি।
ড. বেনেট বললেন আমার নাকি এক সপ্তাহ
বাড়িতেই থাকতে হবে।
আরে, এটাতো কিছুই না।
একবার আমাকে ৩ বছর বিছানায় থাকতে হয়েছিল।
-তোমার কি চিকেনপক্স হয়েছিল?
-হলেই ভালো হত।
সত্যি বলতে কেউই সঠিকভাবে জানে না,
কোনটা ভুল।
বেশীরভাগ সময় মানুষ ধীরে ধীরে বড় হয়।
কিন্তু আমি বেশ দ্রুত বড় হচ্ছিলাম।
আমার শরীরের আকাঙ্ক্ষার সাথে
হাড়গুলো তাল মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছিল।
তো আমি ৩ বছর একটা
বিছানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলাম...
সাথে ছিল বিশ্বকোষ,
আমার বিশ্বভ্রমণের একমাত্র অনুপ্রেরণা।
আমি বহু সময় খরচ করে...
আমার "সুবিশালতা" তত্ত্বের ব্যপারে
কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম।
যখন আমি প্রথমবার সাধারণ
গোল্ডফিশের ব্যাপারে একটা আর্টিকেল পড়লাম।
"ছোট বাটিতে রাখলে,
গোল্ডফিশ ছোট আকৃতিরই থাকবে"।
"বেশী জায়গা নিয়ে রাখলে,
...গোল্ডফিশ তার থেকেও
দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ বড়ও হতে পারে।"
হয়ত এমন চিন্তা আমার মাথায় ঘুরপাক খেত
কারণ আমার অদ্ভুত শারিরীক বৃদ্ধি প্রক্রিয়ার ফলে...
...আমি বিশালতার প্রতি দুর্বল ছিলাম।
আও যাই হোক, একজন বিশাল মানুষ
একটি সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারে না।
যখন আমার শরীরের হাড়গুলো পূর্ণবয়স্ক রূপ পেল,
আমি নিজেকে অ্যাশটনের একটি বড় অবস্থানে
প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাইলাম।
বাঘের বাচ্চারা, গর্জে ওঠো!
এডওয়ার্ড ব্লুম!
আমার সোনা কুকুর!
কুকুরটা ভেতরে আটকে পড়েছে!
আমিই ছিলাম অ্যাশটনের সবথেকে মুখ্য চরিত্র।
সেইদিন পর্যন্ত,
যখন এক অচেনা সত্তার আবির্ভাব ঘটল।
সবাই শান্ত হন বলছি,
শান্ত হন, যথেষ্ট হয়েছে।
-জনাব মেয়র, ওটা আমার পুরো ভুট্টার ক্ষেত সাবাড় করে ফেলেছে।
-ওটা আমার কুকুরকে খেয়ে ফেলেছে।
আপনি এর বিহিত না করলে
আমরাই একটা ব্যবস্থা নেব।
এই শহরে কোন সহিংসতামূলক কাজকে
প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
কেউ তার সাথে দেখা করার
দুঃসাহস দেখিয়েছে কি?
-এত সাহস কারো নেই।
-ওটা একটা প্রকান্ড দৈত্য।
আমি যাব দেখা করতে।
আমি ওটার সাথে কথা বলেই আসি।
দেখি ওটাকে এখান থেকে দূর করতে পারি কিনা।
ঐ প্রকান্ড দৈত্য তোমাকে পিষে ফেলতে পারে
কোন চেষ্টা না করেই।
বিশ্বাস করুন,
একটু চেষ্টা ওকে করতেই হবে।
শুনছেন?
আমার নাম এডওয়ার্ড ব্লুম,
আমি আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি!
ভাগো বলছি!
আমি এখান থেকে কোথাও যাচ্ছি না,
যতক্ষণ তোমার দেখা না পাচ্ছি!
আমি বলছি,
ভাগো এক্ষুণি!
আমি যেহেতু আগে জেনে ফেলেছিলাম
আমার মৃত্যু কিভাবে হবে...
আমি জানতাম দৈত্যটা আমাকে মারতে পারবে না।
আমি শুধু চাচ্ছিলাম,
আমার হাড়্গুলো যাতে অক্ষত থাকে।
তুমি এখানে কি করছ?
যাতে তুমি আমাকে খেতে পারো।
শহর থেকে ঠিক করা হয়েছে তোমার উদ্দেশ্যে
একজনকে বলি দেয়া হবে,আমি নিজে থেকেই বলি হতে এলাম আর কি।
আমার হাতটা যদিও একটু চিকন,
তবে আমার পা খেতে বেশ মজা লাগবে তোমার।
মানে, আমার নিজের কাছেই এগুলো
বেশ সুস্বাদু হবে বলেই মনে হয়।
তো, যা বলছিলাম...
যদি কাজটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলো,
তবে আমার ব্যাথা কম সহ্য করতে হবে আর কি।
আরে, আমি আবার ফেরত যেতে পারব না!
আমি একজন উৎসর্গীকৃত মনুষ্য!
আমি ফেরত গেলে
লোকে আমাকে কাপুরুষ ভাববে।
কাপুরুষ হবার থেকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে চাইব আমি।
এই নাও।
আমার হাত থেকে খাওয়া শুরু কর।
এটা তোমার রুচি বাড়িয়ে তুলবে।
তোমাকে খাওয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই আমার।
আমি কোন মানুষ খাই না।
আমি সাইজে বেশ লম্বা চওড়া,
তাই ক্ষুধা বেশী লাগে এই আর কি।
এভাবে কখনো ভেবে দেখেছো,
তুমি ততটা বড় নও...
...আসলে তোমার তুলনায় এই শহরটাই খুব ছোট?
আমি শুনেছি বড় বড় শহরে অনেক
বিশাল বড় দালান রয়েছে...
...যেগুলোর মাথা দেখতেো তোমার
ঘাড় বাকিয়ে দাঁড়াতে হবে।
-তাই নাকি?
-তোমার সাথে মিথ্যে বলব না।
ওখানে যত খুশি তত খেতে পারবে তুমি।
-তুমি তো অনেক বেশী খেতে পারো, তাই না?
-পারি তো।
তো এই ছোট শহরে সময় নষ্ট করছো কেন?
তুমি একজন বিশাল লোক।
তোমার একটা বড় শহরে থাকা উচিত।
তুমি আমাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দিতে চাও,
তাই না?
-তোমার নাম কি, বড় মানুষ?
-কার্ল।
আর, আমার নাম এডওয়ার্ড।
আর সত্যি বলতে কি...
আমি সত্যিই তোমাকে এখান থেকে তাড়াতে চাই, কার্ল।
তবে তোমার সাথে আমিও যাবো।
মানে, তোমার মত বিশাল শরীরের একজনের জন্য
এই শহর খুব ছোট মনে হচ্ছে?
তবে, আমার মত বিশাল মনের উচ্চাকাঙ্খা সম্বলিত মানুষের জন্য
শহরটা আরও ছোট।
তো কি বল, যেতে চাও আমার সাথে?
আচ্ছা।
তাই হোক।
এখন, সবার আগে তোমাকে
সবার সামনে যাবার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
এডওয়ার্ড ব্লুম, অ্যাশটন শহরের প্রথম সন্তান...
...তোমাকে যেতে দেখে হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছে।
কিন্তু সাথে করে এই শহরের চাবিটা নিয়ে যাও...
...যদি কখনো আবার আসতে
মন চায়...
...আমাদের দরজা সর্বদা খোলা আছে তোমার জন্য।
যেদিন বিকেলে অ্যাশটন শহরকে বিদায় জানাচ্ছিলাম,
সবাই আমাকে অনেক উপদেশ দিচ্ছিল।
নিজের জন্য একটা মেয়ে খুঁজে নিও!
গর্বের সাথে বেঁচে থাকো, এডওয়ার্ড ব্লুম!
কিন্তু একজন মানুষ ছিলেন,
যার পরামর্শ ছিল সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বললেন,
নদীর সবথেকে বড় মাছটা...
কখনোই কারো কাছে ধরা দেয় না।
(অর্থাৎঃ আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষ কখনো কারো সামনে মাথানত করে না।)
-কি বললেন উনি?
-হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
অ্যাশটন থেকে বের হবার দুটো রাস্তা রয়েছে।
একটা নতুন ঢালাই করা পথ।
আরেকটা পুরোনো, যেটা ঢালাই করা নয়।
মানুষ এখন আর পুরোনো রাস্তাটা ব্যবহার করে না...
দিনে দিনে এই রাস্তাটা ভূতুরে রাস্তার খ্যাতি পেয়েছে।
যেহেতু আমার অ্যাশটনে ফিরে যাবার কোন ইচ্ছে ছিল না...
আমি ওই পুরোনো রাস্তাটাতে কি আছে
তা জানার কৌতুহল দমাতে ব্যর্থ হলাম।
-এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছে এমন কাউকে চেনো তুমি?
-নর্থার উইন্সলো নামের এক কবি গিয়েছিলেন এই রাস্তা দিয়ে।
উনি ফ্রান্সের প্যারিসের দিকে যাচ্ছিলেন।
হয়তো তার রাস্তাটা ভালো লেগেছিল।
যদিও তার পরে কি ঘটেছিল তা জানা যায়নি।
আমি কি বলি শোন।
তুমি অন্য রাস্তা দিয়ে যাও।
আমি এই দিক দিয়ে যাব,
আমি তোমার সাথে রাস্তার অন্য মাথায় গিয়ে দেখা করছি।
তুমি পালানোর চিন্তা করছ,
তাই তো?
এই নাও।
পালাচ্ছি না নিশ্চিত হতে
আমার ব্যাগটা নিজের কাছেই রাখ।
কি হচ্ছে, যত্তসব...
এখন একটু ভাবার অবকাশ আছে,
যখন একজন যুক্তিবাদী মানুষ...
তার অহঙ্কার ভুলে মেনে নেয় যে,
সে একটা বিরাট ভুল করে ফেলেছে।
সত্যি বলতে কি,
আমি মোটেও কোন যুক্তিবাদী মানুষ ছিলাম না।
আর যতদূর মনে পড়ে,
রবিবার স্কুলে ক্লাস করা যতটা কষ্টদায়ক...
তারথেকে অনেক কম মজার ব্যপার সেদিন ক্লাস না থাকাটা।
(অর্থাৎঃ কোন কিছু হারানোর পড়েই সেটার গুরুত্ব আরো বেশী করে উপলদ্ধি করা যায়।)
বন্ধু! তোমাকে স্বাগতম!
-নাম কি তোমার?
-এডওয়ার্ড ব্লুম।
-ফুল ফোটা বোঝায় সেই "ব্লুম"?
- হ্যাঁ।
ওহ, এইতো! এখানেই আছে।
"এডওয়ার্ড ব্লুম"।
তোমাকে এত তাড়াতাড়ি এখানে পাবো ভাবিনি।
-আপনারা আমার অপেক্ষায় ছিলেন?
-এত তাড়াতাড়ি নয়।
-হয়তোবা তুমি শর্টকাট ধরে এসেছ।
-হ্যাঁ, ওখান দিয়েই এলাম! মারা পড়ছিলাম আরেকটু হলেই!
জীবনের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে থাকে।
লম্বা রাস্তায় চললে সেটা অনেক বেশী সহজ হয়।
-কিন্তু তা জীবন থেকে অনেকটা সময়ও বেশী নিয়ে নেয়।
-অনেকটা মূল্যবান সময়!
তবে এখন তুমি যখন এসেই পড়েছ,
এটাই সবথেকে বড় কথা।
এটা কোন জায়গা?
স্পেক্টার শহর।
আলাবামার সবথেকে গোপনীয় জায়গা!
দেখতে পাচ্ছি,
তুমি অ্যাশটন থেকে এসেছ, তাই তো?
অ্যাশটন থেকে আসা সর্বশেষ ব্যক্তিটি ছিল-
নর্থার উইন্সলো।
সেই কবি?
কি অবস্থা ওনার?
তিনি এখনো এখানেই আছেন।
চলো ড্রিঙ্ক করতে করতে কথা হবে।
ধুর! বলতেই তো ভুলে গেছি।
আমার একজনের সাথে দেখা করতে হবে।
আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
বৎস, পূর্বেই বলেছি তোমায়।
তুমি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এসে পড়েছ।
খেয়ে বল, এটা তোমার আজ পর্যন্ত
খাওয়া সেরা পিঠা নয় কি?
আসলেই সেরা।
এখানে সবকিছুই খুব সুস্বাদু।
এখানকার পানিও খেতে বেশ মিষ্টি।
কখনো বেশী গরম, ঠান্ডা বা আদ্রও
অনুভব হয় না এখানে।
রাতের বেলা বাতাস এমন ভাবে
গাছের ফাঁক দিয়ে যায় যেন...
...সেই সুর শুধুমাত্র তোমার জন্যই বেঁজে চলেছে।
হেই! জেনি!
থামো বলছি!
জেনি!
হেই, আমার ওগুলো লাগবে।
-এমন নরম ভূ-পৃষ্ঠ কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!
-কবিতার মত শোনালো না কথাটা?
একেই বলে কবি প্রতিভা!
চলো।
আমি শুধু সেই বিকালের জন্য থেকে যাব ভাবলাম।
শুধু এই রহস্যটা বোঝার জন্য যে,
একটা জায়গা একইসাথে এত অচেনা,
আবার এত আপন কিভাবে হতে পারে!
আমি এই কবিতাটা ১২ বছর ধরে
লেখার চেষ্টা করছি।
সত্যি?
ভক্তগণ আমার ওপর অনেক আশা নিয়ে বসে আছে।
তাদের নিরাশ করতে চাই না আমি।
দেখতে পারি?
এটা মাত্র ৩ লাইন!
এজন্যই কোন অসম্পূর্ণ
প্রগতিশীল শিল্প প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ধরেছি!
ওদিকটাতে জোঁক আছে কিন্তু।
-ওই মেয়েটাকে দেখেছো?
-দেখতে কেমন?
-এই ধর, কিভাবে বলি...
-উলঙ্গ ছিল?
হ্যাঁ, তাই।
ওটা মেয়ে ছিল না, ওটা একটা মাছ।
কেউ তাকে ধরতে পারে না।
মাছ বিভিন্ন লোকের কাছে বিভিন্ন রকম দেখতে লাগে।
আমার বাবার ছোটবেলায় নাকি তার কাছে মাছ দেখতে
কালো কুকুরের মত লাগত।
...যেন মৃত্যু থেকে বেঁচে ফিরেছে।
আরে, বাপরে!
-তোমার বয়স কত?
-১৮।
আমার ৮। মানে যখন আমার বয়স ১৮ হবে,
তমার বয়স হবে ২৮।
-যখন আমি ২৮ হব, তুমি হবে ৩৮।
-অংক ভালোই জানো দেখছি।
আর আমি যখন ৩৮ হব, তোমার বয়স হবে ৪৮।
পার্থক্য খুব বেশী হবে না কিন্তু।
এখনো নয় কিন্তু, কি বল?
হেই! এডওয়ার্ড!
গোলাপের রঙ লাল।
বেগুনী হল নীল।
আমি স্পেকটার ভালোবাসি।
একটু আসছি।
জেনি মনে করে তুমি খুব মিশুক।
আমাদেরও তাই মনে হয়।
কি?
আমি বলেছি, তুমি খুব মিশুক।
আমায় যেতে হবে এবার।
আজরাতেই।
কেন?
যে কারো কাছেই এই শহরটা
তাদের চাওয়ার থেকেও বেশী কিছু।
এখানে থাকতে পারলে সত্যি নিজেকে
ভাগ্যবান মনে করতাম।
সত্যি বলতে কি,
আমি এখন কোথাও থাকার পরিস্থিতিতে নেই।
আগে কেউ এ জায়গা ছেড়ে যেতে চায় নি।
জুতা ছাড়া যাবে কিভাবে।
খুব কষ্ট হবে, আমি জানি সেটা।
আমি দুঃখিত, কিন্তু...
বিদায় সবাইকে।
-এমন জায়গা কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি।
-সে আশাও করি না আমি।
কথা দাও,
আবার ফিরে আসবে তুমি।
কথা দিচ্ছি,
যেদিন সত্যি আমাকে তোমাদের দরকার হবে।
সে রাতে আমি দুটো ব্যাপার শিখলাম,
প্রথমতঃ ভয়ঙ্কর পথ আরো বিপদময় হয়ে ওঠে
যখন সবকিছু অন্ধকার থাকে।
দ্বিতীয়ত, সত্যিই আমি হতাশ ছিলাম
এবং রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
ঐ জঙ্গলই হয়তো আমার গোরস্থানে পরিণত হতে পারত।
অত কষ্টের পর আমার ভাগ্যে স্পেক্টারের মত একটা সুন্দর জায়গা এসেছিল।
ভাগ্যদোষে হারালাম।
আসলে জীবনে শেষ গন্তব্যে যাওয়া থেকে
নিজেকে কেউ বিরত রাখতে পারে না।
তারপর আমার মনে পড়ল,
আমার মৃত্যুতো এভাবে হবার কথা নয়।
আমি এভাবে মরছি না মোটেই।
বন্ধু।
-তোমার জুতা কোথায়?
-ওটা আমাকে ফেলে চলে গেছে।
জানি না তুমি দেখেছ কিনা,
কিন্তু জোসেফিনের তোলা কিছু ছবি আছে...
...যেগুলো সম্প্রতি নিউজউইকে ছাপা হয়েছিল।
তাই নাকি?
অসাধারণ ব্যাপার।
মরক্কোতে এক সপ্তাহ কাটিয়েছি ওই খবর সংগ্রহের জন্য।
অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা।
ওই পত্রিকাটার এক কপি সংগ্রহে রাখতে হবে।
আমি জানি না তুমি জানো কিনা, জোসেফিন...
...আফ্রিকার কঙ্গোবাসী টিয়া পাখীরা
ফ্রেঞ্চ বলতে পারে।
তাই নাকি?
ইংরেজীতে ৪টা শব্দও বলানো যাবে না ওদের মুখ থেকে।
তবে যদি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাও...
...তুমি ওদের উচ্চমানের ফ্রেঞ্চ বলতে শুনবে।
ওই টিয়াগুলো বহু বিষয় নিয়ে কথা বলে।
রাজনীতি, সিনেমা, ফ্যাশন এসব।
শুধু ধর্ম বিষয়ক কথা বাদে।
ধর্ম নয় কেন, বাবা?
ধর্ম নিয়ে কথা বলা অভদ্রতা।
বুঝতেই পারবে না কার ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানবে সেটা।
জোসেফিন আসলে গত বছরেই কঙ্গো গিয়েছিল।
ও তাহলে তো তুমি জানোই।
হ্যালো!
হাই, কেমন বোধ করছেন?
ওহ, স্বপ্ন দেখছিলাম আসলে।
কি বিষয়ে সেটা?
আসলে, তেমন মনে থাকে না।
যদি না গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় হয়।
গুরুত্বপূর্ণ বলতে কি বোঝাচ্ছি, বুঝতে পারলে?
মানে এমন বিষয় নিয়ে স্বপ্ন দেখা,
যেটা বাস্তবে ঘটার সম্ভাবনা আছে।
একবার আমি একটি স্বপ্ন দেখছিলাম...
...যেখানে একটা কাক এসে বললঃ
"তোমার আন্টি মারা যাবে"।
আমি খুবই ভয় পেয়ে গিয়ছিলা,
আমি বাবা মা -কে জাগিয়ে ওদের বললাম...
...কিন্তু তারা বলল,
এসব স্বপ্ন ভুলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
তার পরের দিন সকালে আমার আন্টি স্টেসি,
সত্যি মারা গিয়েছিল।
বলেন কি!
তার জন্য খারাপ হলেও, আমার ব্যাপারটা ভাবো একবার,
এত ছোট বয়সে এমন ক্ষমতা ভাবা যায়!
তার তিন সপ্তাহ পর স্বপ্নে আবার কাকটা এল...
...আর বলল, "তোমার বাবা মারা যাবে"।
বুঝতে পারছিলাম না, কি করা উচিত।
বাবাকে বলেই ফেললাম কথাটা,
কিন্তু সে বললঃ
"চিন্তার কিছু নেই"।
কিন্তু তার চেহারা একদম ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল!
পরদিন সকালে, তার কি যেন হয়ে গেল।
ঘনঘন পায়চারী,
যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অপেক্ষা!
কারণ, কাকটা এটা বলেনি যে,
কিভাবে ঘটবে ঘটনাটা। শুধু ওই কথাগুলোঃ
"তোমার বাবা মারা যাবে"।
তিনি বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে একটু আগেই বেড়িয়ে গেলেন।
অনেক সময় পেরোলেও ফিরলেন না তিনি।
অবশেষে তাকে ফিরে আসতে দেখা গেল,
কিন্তু তাকে প্রচন্ড আতঙ্কিত দেখাচ্ছিল...
...যেন কেউ কুঠার দিয়ে
তার মাথাটা দু'ভাগ করে ফেলবে!
তিনি আমার মাকে বললেনঃ
"আজ আমি আমার জীবনের
সবচেয়ে খারাপ দিনটা পার করেছি।"
মা বললেন, "তোমার মনে হয়
তোমার দিনটাই সবচেয়ে খারাপ ছিল?
"আজ সকালে দুধওয়ালা দরজার সামনে
মুখ থুবরে পড়ে মারা গেছে।"
কারণ, আমার আসল জন্মদাতা বাবা ছিল সেই দুধওয়ালা।
-আপনার একটা ছবি তুলে রাখতে পারি?
-আমার ছবি তুলতে হবে না।
শুধু অভিধানে "সুদর্শন" শব্দটা খুঁজে বের করলেই হবে।
প্লিজ?
আচ্ছা।
আপনাকে দেখাব বলে
আমার বিয়ে ছবিগুলো নিয়ে এসেছি।
আমার বাবার সাথে আপনার
একটা সুন্দর ছবিও আছে ওখানে।
আমি আপনার বিয়ে ছবিগুলো দেখতে পারি?
আমি দেখিনি ওগুলো।
কারণ, আমাদের তেমন আয়োজন করে
কোন বিয়েই হয়নি।
তোমার শ্বাশুরীর আমাকে বিয়ে করার কথা ছিল না।
-তার অন্য একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল।
-জানতাম না তো!
উইল বলেনি কখনো?
না বলে ভালোই করেছে।
ভুলভাল সব আসল কথাগুলো বলত।
কাল্পনিক ঘটনাবিহীন ম্যাড়মেড়ে বাস্তবতাটুকু বলত শুধু।
বেশ লম্বা কাহিনী মনে হচ্ছে।
ছোট কাহিনী নয় সেটা নিশ্চিত।
তখন স্পেকটার শহর থেকে
সবে ভাগ্যের খোঁজে বেড়িয়েছি।
তখন স্পেকটার শহর থেকে
সবে ভাগ্যের খোঁজে বেড়িয়েছি।
তখন স্পেকটার শহর থেকে
সবে ভাগ্যের খোঁজে বেড়িয়েছি।
তখন স্পেকটার শহর থেকে
সবে ভাগ্যের খোঁজে বেড়িয়েছি।
তখন স্পেকটার শহর থেকে
সবে ভাগ্যের খোঁজে বেড়িয়েছি।
জানতাম না,
ঠিক কিরকম ভাগ্যের সম্মুখীন হতে চলেছি।
নতুন কিছু শেখার সুযোগ পেলেই
সেখান থেকে কিছু না কিছু জ্ঞানার্জন করেছি।
কোকো! কোকো! এই তো ওরা!
ভদ্রমহোদয়গণ!
মনে করতে পারেন, আপনারা অদ্ভুত
অনেক কিছুই দেখে ফেলেছেন!
মনে করতে পারেন, আপনারা বিকৃত
অনেক বিষয় উপভোগ করেছেন!
আমি পৃথিবীর বহু অঞ্চল ঘুরেছি...
...আমি বলছি,
এমন কিছু আগে কখনোই আগে দেখিনি।
যখন এই লোকটার সাথে আমার দেখা হল...
...সে তখন ফ্লোরিডার
এক কমলা গাছ থেকে কমলা তুলছিল।
তার সাথে সঙ্গীরা তাকে বলত,
"ছায়াসঙ্গী"।
কারণ তার সাথে যারা কাজ করত...
...তাদের সূর্যের আলো থেকে
আড়াল করে রাখত সে!
সাবধানের মার নেই, ম্যাম,
তবে এই লোক যদি চায় তো...
...সে আপনার মাথা তার দুই পায়ের মাঝখানে
পিষে ফেলতে পারে...
...ঠিক একটা বাদামের খোসার মতন।
কিন্তু সে তা করবে না।
না, না, ভদ্রমহোদয়গণ...
...সে কারো ক্ষতি করে না...
...কারণ সে আমাদের সার্কাসের
একজন শান্ত শিষ্ট ভদ্র দৈত্য।
ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের সামনে পেশ করছি-
"কলোসাস"
ভদ্র মহোদয়গণ,
ছেলে ও মেয়েরা...
...ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য।
নিরাপদে বাড়ি চলে যান সবাই।
এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।
সে রাতে কার্ল তার সৌভাগ্যের দেখা পেয়ে গেল।
আমিও সে পথেই এগিয়েছিলাম প্রায়।
যখন ভালোবাসার মানুষের সাথে প্রথম দেখা হয়,
সময় থমকে যায়!
সেটা সত্যি!
যেটা কেউ বলে না সেটা হল,
যখন সময় আবার চলতে থাকে...
এমন ভাবে চলে যেন ফাস্ট ফরওয়ার্ড মুভি চলছে।
তোমার নাম কি?
-কার্ল আমার নাম।
-কার্ল।
আচ্ছা কার্ল, কখনো "স্বেচ্ছায় দাসত্ব" বিষয়ে শুনেছ?
-না।
-"অজানা বিষয়ে চুক্তি বদ্ধ হওয়া"
-না তো।
-চমৎকার।
এই যে।
এই নাও।
জনাব গোল নিতম্ব,
এখানে দাঁড়াও...
...যাতে ও তোমার পিঠে কাগজ রেখে
সই করতে পারে।
আচ্ছা, ধন্যবাদ।
ওহে, বৎস।
-তোমার বন্ধু এইমাত্র নিজেকে একজন তারকায় পরিণত করেছে।
-ওহ, ভালো কথা।
-আমার প্রতিনিধি, গোলনিতম্ব।
-দেখা হয়ে ভালো লাগল।
আমিও খুশি হলাম।
কি হয়েছে বৎস?
কোন কাস্টমারকে এতটা বিমর্ষ দেখিনি...
...যখন এক কৃষকের স্ত্রীর গায়ে
এক হাতি বসে পড়েছিল- তার আগ পর্যন্ত।
বিমর্ষ?
দেখলে?
বড় মানুষটারও কৌতুক-টা পছন্দ হয়েছে।
আমি এইমাত্র আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রীকে দেখলাম।
আমি জানি সেটা, কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি তাকে।
ওহ, খুব কষ্ট হচ্ছে নিশ্চয়ই।
বেশীরভাগ লোকই কোন মেয়েকে বিয়ে করে,
যাতে সেই মেয়েটা আবার হারিয়ে না যায়।
আমি আমার বাকি জীবন তাকে খুঁজেই কাটাতে চাই।
বাঁচি অথবা মরি।
আরে বাপরে!
ভাবতে দাও,
অত্যন্ত সুন্দরী?
সোনালী চুল?
নীল পোশাক?
হ্যাঁ!
আমি তার চাচাকে চিনি।
পারিবারিক বন্ধু বলতে পারো।
কে সে?
কোথায় থাকে?
ভুলে যাও ওকে। সময় নষ্ট করোনা।
ও তোমার টাইপের নয়।
-মানেটা কি? আমাকে কতটুকু চেনেন আপনি?
-অবশ্যই চিনি।
তুমি হয়তো নিজের ছোট শহরে খুবই বিখ্যাত,
কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে তুমি কিচ্ছু না।
না আছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা,
না আছে চাকরী।
আছে শুধু পরনের ওই কাপড়গুলো।
আমার এক ব্যাগভর্তি কাপড় আছে।
ওহ, আমার ব্যাগটা চুরি করেছে কেউ।
ছোট পুকুরের জন্য তুমি বিশাল মাছ হতেই পারো,
কিন্তু বাইরের পৃথিবী একটা মহাসমূদ্র...
...আর সেখানে তুমি ডুবে যাচ্ছ।
নিজের ছোট্ট শহরে ফিরে যাও।
-সেখানেই সুখে থাকবে তুমি।
-আপনি বললেন, আমার কোন প্ল্যান নেই, আসলে আছে।
আমি ঐ মেয়েকে খুঁজে, বিয়ে করে,
তার সাথে বাকী জীবন সুখে শান্তিতে কাটাব।
আমার হয়ত চাকরি নেই,
কিন্তু আপনি দিলে সেটাও থাকবে।
আমার হয়তো বেশী কিছু নেই...
...কিন্তু আমার আছে ততটা মনোবল,
যেটা আপনার দেখা হওয়া অন্য কারো মধ্যে নেই।
দুঃখিত বৎস, আমি দান খয়রাত করি না।
চলো, বড় মানুষ।
শুনুন, আমি সারা দিনরাত
আপনার জন্য কাজ করতে রাজি...
...আর আপনার আমাকে বেতনও দিতে হবে না।
শুধু বলতে হবে কে সে।
প্রতি মাস কাজ শেষে...
...আমি তার সম্পর্কে তোমাকে একটা বিষয় বলব।
এটাই আমার শেষ প্রস্তাব।
চলো শুরু করি।
সেদিন থেকে জনাব কেলাওয়ে যা বলেছেন,
তাই করেছি।
টানা তিনদিন না খেয়ে কাজ করেছি।
৪ দিন না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি।
শুধু যার জন্য এসব কোন কষ্টই মনে হয়নি,
তা হলো, আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর সাথে...
...দেখা হবার প্রতিশ্রুতি।
সাথে থাকবে,
কাজটা এভাবেই করতে হবে।
-আগেও এভাবে হয়েছে, পরেও হবে।
-জনাব কেলাওয়ে, স্যার?
আজ একমাস পূর্ণ হয়েছে।
যে মেয়েকে তুমি ভালোবাস...
...তার প্রিয় ফুল হল ড্যাফোডিল।
-তো জিনিসপত্র জোগাড় কর...
-ড্যাফোডিল।
ড্যাফোডিল।
ড্যাফোডিল।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী...
প্রতি মাসেই তিনি আমাকে
মেয়েটার সম্পর্কে নতুন কিছু বলতেন।
যাকে আমি শয়নে স্বপ্নে সবসময় দেখি।
মজা করুন, মজা নিন।
সে কলেজে উঠেছে।
কলেজ। সে কলেজে যাবে।
সে গান শুনতে ভালোবাসে।
গান। সে গান শুনতে ভালোবাসে।
এত মাস ধরে আমি আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী সম্পর্কে
অনেক কিছুই জানলাম...
এত মাস ধরে আমি আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী সম্পর্কে
অনেক কিছুই জানলাম...
এত মাস ধরে আমি আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী সম্পর্কে
অনেক কিছুই জানলাম...
এত মাস ধরে আমি আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রী সম্পর্কে
অনেক কিছুই জানলাম...
...শুধু তার নাম বাদে,
এবং তাকে কোথায় পাবো সেটাও না।
অবশেষে সেই দিন এল।
আমি তর সইতে পারছিলাম না।
জনাব কেলাওয়ে?
আমি এডওয়ার্ড ব্লুম।
আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।
জনাব কেলাওয়ে?
না, দাঁড়াও!
সে রাতে আমি উপলদ্ধি করলাম,
যাদেরকে আপাতদৃষ্টিতে শয়তান বা পাপী মনে হয়...
...তারা আসলে খুব একাকিত্বের শিকার
এবং ভালো ব্যবহারের অভাবে ভুগছে।
কোন প্রাণী হত্যা করেছি নাকি আমি?
কিছু খরগোশ মেরেছেন।
সেগুলোর মধ্যে একটা হয়তো আগে থেকেই মৃত ছিল।
বদহজম হবার কারণটা বোঝা গেল এবার।
ধন্যবাদ।
তোমার ব্যাপারে ভুল ভেবেছি আমি।
হয়তো তোমার কিছুই নেই, তবে যা আছে যথেষ্ট।
তুমি যেকোন মেয়েকেই নিজের করতে পারবে।
ভালোবাসি শুধু ঐ একজনকেই।
তার নাম...
...সান্ড্রা টেম্পল্টন।
সে অবার্ন কলেজে পড়ে সে।
সেমিস্টার প্রায় শেষ,
তাই তোমার তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিত।
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।
-শুভ কামনা, বৎস।
-ধন্যবাদ, স্যার!
-বিদায়!
-বিদায় এডওয়ার্ড!
সবাইকে বিদায় জানিয়ে তিনটা ট্রেন ধরে...
সেই বিকেলেই অবার্নে পৌছে গেলাম আমি।
তুমি আমাকে চিনবে না,
আমি এডওয়ার্ড ব্লুম।
...আর আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি গত তিন বছর ধরে রাতদিন কাজ করেছি
তোমাকে খুঁজে পাবার জন্য।
গুলি খেয়েছি, ক্ষতবিক্ষত হয়েছি, হাতির পায়ে পিষ্ট হয়েছি,
দুইবার পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে গেছে।
কিন্তু সব সার্থক,
তোমার দেখা পেলাম অবশেষে...
...কথা বলতে পারছি তোমার সাথে।
তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।
যখন তোমাকে সার্কাসে প্রথমবার দেখি
তখন থেকেই এটা জানতাম আমি।
-আমি দুঃখিত।
-আমাকে দুঃখিত বলতে হবে না তোমার।
আমি আজ নিজেকে
পৃথিবীর সবথেকে সৌভাগ্যবান ভাবছি।
না, আমি দুঃখিত,
আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
কিন্তু তুমি ভুল ছিলে।
আমি তোমাকে চিনি।
তোমার খ্যাতির মাধ্যমে চিনি তোমাকে।
তুমি অ্যাশটন শহরের এডওয়ার্ড ব্লুম।
আসলে আমি তোমার শহরেরই এক ছেলেকে বিয়ে করছি,
নাম- ডন প্রাইস।
তোমার থেকে কয়েক বছরের বড় হবে সে।
আচ্ছা...
অভিনন্দন।
বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।
থামো!
মজার ব্যাপার নয় এটা।
আহা বেচারা!
সৌভাগ্য মাঝে মাঝে ধরা না দিয়ে
দূর থেকে নিষ্ঠুর হাসি হাসে।
অ্যাশটন থেকে বেড়িয়ে এত কষ্ট করার পরে জানলাম...
মেয়েটা কিনা আমাদের শহরেরই
সবথেকে বেকুব ছেলেটাকে বিয়ে করছে।
মাঝে মাঝে মানুষের জোর করে
কোন অধিকার আদায় করে নিতে হয়...
আর মাঝে মাঝে দুর্ভাগ্য মেনে নিয়ে চলে যেতে হয়।
একমাত্র বোকারাই ভুল পদক্ষেপটি বেছে নেয়।
সত্যি বলতে কি,
আমি সবসময় বোকাই ছিলাম।
সান্ড্রা টেম্পল্টন, আমি তোমাকে ভালোবাসি,
এবং শুধু তোমাকেই বিয়ে করব!
তো দেখতেই পাচ্ছো,
যদি প্রতিদিনকার জীবনে এসব ফালতু নিয়ম অনুসরণ কর...
...জীবনটা একটা মেশিনের
গৎবাঁধা জীবনের মত হয়ে যাবে।
পরের গ্রাফটার দিকে তাকাও,
এটা যোগ করলে ৩ ঘন্টায়...
... ওটা আরো কার্যকরী হবে।
দেখো!
-ড্যাফোডিল!
-তোমার প্রিয় ফুল!
এতগুলো কোথায় পেলে?
আমি পাঁচটি রাষ্ট্রে খবর পাঠিয়েছিলাম।
বলেছিলাম এটা করলেই কেবল আমি একটা মেয়েকে
আমাকে বিয়ে করাতে রাজি করাতে পারব।
তুমি তো আমাকে ভালোভাবে জানোও না।
সেটা জানার জন্য তো বাকি জীবনটাই পড়ে আছে।
সান্ড্রা!
ডন আসছে।
কথা দাও ওকে মারবে না।
তুমি যদি চাও,
তাহলে কথা দিচ্ছি, করব না।
-ব্লুম?
-ডন।
কি করছিস এখানে?
ও শুধু আমার, বুঝলি!
ও কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে,
এটা জানা ছিল না।
কি হল?
আমাকে মারতে ভয় পাচ্ছিস নাকি?
আমি ওকে কথা দিয়েছি,
তোমাকে মারবো না।
থামো বলছি!
ডন, থামো!
যখন আমি সেইরকম একটা পিটুনি খাচ্ছিলাম,
ডন প্রাইস ততক্ষনে আমার কাছে হেরে গেছে।
আমাকে ওভাবে মারাটা তার শরীর সহ্য করে নি।
তার হার্টও ছিল যথেষ্ট দুর্বল।
ডন!
আমি তোমাকে কক্ষনো বিয়ে করব না!
কি?
মানে, তুমি ওকে ভালোবাস?
ওকে ভালো মত চিনিও না আমি,
তারপরেও ও তোমার থেকে হাজার গুণে ভালো।
এত কিছু হবার পরেও সান্ড্রার
আগের নির্ধারিত বিয়ের দিন তারিখ একটুও বদলায় নি।
শুধু বরটাই বদলে গেছে।
আমি মনে করেছিলাম, আপনি বলেছিলেন,
আপনার আয়োজন করে বিয়ে হয় নি।
হবার কথা ছিল,
একটা সমস্যা হয়ে যাবার কারণে আর হয় নি।
আপনি কি ঔষধটার কারণে
এত তৃষ্ণার্ত অনুভব করেন?
সত্যি বলতে,
আমার সারা জীবনেই আমি তৃষ্ণার্ত অনুভব করে এসেছি।
জানি না কেন এমন হয়।
যখন আমার বয়স ১১...
আপনি আপনার বিয়ের সময়ের কথা বলছিলেন।
ভুলিনি সেটা।
আমি কাহিনীর গতি পরিবর্তন করতে চাচ্ছি আরকি।
দেখ, অনেক মানুষই, তাদের জীবনের গল্পগুলো
সোজাসুজি বলে ফেলে।
বেশী জটিল হয় না,
তাই মজাদারও কিছু থাকে না সেখানে।
আমার আপনার গল্পগুলো ভালো লাগে।
আমার আপনার গল্পগুলো ভালো লাগে।
আমার আপনার গল্পগুলো ভালো লাগে।
আর আমার তোমাকে ভালো লাগে।
আর আমার তোমাকে ভালো লাগে।
যখন, আমি সার্কাসে কাজ করতাম,
আমার কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না।
যখন, আমি সার্কাসে কাজ করতাম,
আমার কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা ছিল না।
তো, তিন বছর পরে
আমার নামে অনেক চিঠি জমা হয়েছিল।
যে ৪ সপ্তাহ আমি হাসপাতালে ছিলাম...
...পোস্টমাস্টার অবশেষে আমাকে পেল
চিঠিগুলো দেবার জন্য।
আর তখন বুঝতে পারলাম,
যখন আমার হৃদয় ছিল সান্ড্রার জন্য আকুল,
আমার বাকি শরীর ছিল
আমেরিকার জন্য ব্যাকুল।
সেনাবাহিনীর একটা পদ ৩ বছর ধরে খালি ছিল,
যতদিন আমি সান্ড্রার অপেক্ষায় ছিলাম ততদিন।
আমি সান্ড্রাকে ছেড়ে বেশীদিন
দূরে কোথাও থাকতে পারতাম না।
তো আমি সবচেয়ে কঠিন
অ্যাসাইনমেন্টগুলো বেছে নিতাম...
...যাতে আমি ১ বছরেরও আগে
স্ত্রীর কাছে ফিরে যেতে পারি।
যাও! যাও!
যখন আমাকে একটা গোপন মিশনে
সুযোগ দেয়া হল...
...যেটা ছিল ওং কাই ট্যাং পাওয়ার প্ল্যান্টের
প্ল্যান চুরির ব্যাপারে...
...আমি দেশের স্বার্থে কোন চিন্তা না করেই
ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
যাও! যাও!
আছে কোন প্রয়োজন?
নিজের লাইনের বাইরে গেলে কিভাবে?
আমাকে একটা বোকার মত রেখে এসেছিলে কেন?
তুমি একা ছিলে না!
কে তুমি?
আমি তোমাদের ক্ষতি করব না।
প্রশ্নই ওঠে না!
গার্ড!
নিজের লোকদের বল বিরক্ত না করতে!
আর ওটা বন্ধ করে যাও।
প্লিজ, আমার তোমাদের সাহায্য দরকার।
ভাবলে কিভাবে তোমাকে সাহায্য করব আমি?
তার পরের ঘন্টা আমি
আমার ভালোবাসা সান্ড্রার কথা বললাম ওদের।
আর যেটা আমাকে এখানে ওদের বিপক্ষে
কাজ করতে এখানে পাঠিয়েছে।
যেটা সবসময়েই কাজ করত,
ভালোবাসাই আমাকে বিপদের সময় বাঁচিয়ে দিত।
এটাই হত সবসময়।
আমরা এখান থেকে পালানোর একটা ফন্দি আঁটলাম।
রাশিয়ায় একটা জাহাজে করে যাবো,
এটাও বলে দিলাম।
কিউবা হয়ে,
ক্যানু নৌকাতে করে মিয়ামি তে যাবার কথাও বললাম।
আমরা জানতাম, এটা খুবই বিপদজনক হতে চলেছে।
আর আমেরিকাতে গিয়ে কি করব আমরা?
তোমাদের একটা যাত্রাপালাতে ঢুকিয়ে দিতে পারব।
মঞ্চ নাটকের একজন বিখ্যাত ব্যক্তিকে চিনি আমি।
বব হোপ?
আরো বিখ্যাত একজন।
তৈরী?
তো আমি আর সেই যমজ বোন
সেই কষ্টকর যাত্রা শুরু করলাম।
পৃথিবীর অর্ধেক পথ ভ্রমণ করলাম।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে, আমেরিকাতে খবর দেয়ার
কোন উপায় ছিল না।
তো সেনাবাহিনীর লোকজন মনে করেছিল,
আমি সেই অপারেশনে মারা গেছি।
না, এ কি হয়ে গেল!
এর পরের চার মাস,
সান্ড্রার জীবনটা ছিল একটা দুঃস্বপ্নের মত।
যখন ফোন বেজে উঠত,
সে কখোনোই ভাবত না সেটা আমি হতে পারি।
যখন কোন গাড়ি রাস্তা দিয়ে যেত,
সে মনে করত না, গাড়িতে আমি থাকতে পারি।
আমি কাল রাতে তোমার বাবার সাথে কথা বলেছি।
তুমি কখনো আমাকে তোমার বাবা মায়ের
দেখা হবার কথা বলনি।
তারা অবার্নে দেখা করেছিল।
আরো বিস্তারিত জানো কিছু?
কিভাবে তারা প্রেমে পড়ল।
সার্কাস, যুদ্ধ।
তুমি এসবের কিছুই আমাকে বলোনি কিন্তু।
কারণ এসবের অনেক কিছুই বাস্তবে ঘটেনি।
কিন্তু এটা বেশ রোমান্টিক।
-কী?
-যেটা আমি ভালো জানি, সেটা হল,
...একজন ফ্রেঞ্চ মেয়ের সাথে রোমান্টিকতা নিয়ে
তর্কে না জড়ানোই ভালো।
তুমি তোমার বাবাকে ভালোবাস?
সবাই আমার বাবাকে ভালোবাসে।
তিনি একজন পছন্দনীয় মানুষ।
তুমি পছন্দ করো তো?
বোঝার ব্যাপার আছে এখানে।
যখন আমি বড় হচ্ছিলাম,
সে আমাদের থেকে কেমন যেন দূরে দূরে থাকতেন।
আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম,
হয়তো কোথাও তার আরো একটা সংসার রয়েছে।
অন্য পরিবার,
অন্য ঘর।
সে আমাদের ছেড়ে তাদের সাথেই থাকতে চাইত।
বা...
বা হয়তো তার অন্য কোন পরিবার নেই।
হয়তো সে কখনো পরিবার চাননি।
সে যাই হোক না কেন, সে তার সেই দ্বিতীয় জীবনটাকেই
বেশী পছন্দ করতেন, এবং গল্প করতেন,
কারণ তার বাস্তবতাটা বিষাদময় লাগত।
-এসব কিন্তু সত্যি নয়।
-আচ্ছা, কোনটা সত্য তাহলে?
সে কখনোই আমাকে কোন সত্য কথা বলেনি।
দেখো, হেই...
আমি জানি, কেন তুমি তাকে পছন্দ কর।
জানি, কেন সবাই তাকে পছন্দ করে।
কিন্তু আমি বলতে চাই,
আসলে আমি পাগল নই।
মোটেও তা নও।
আর আমার মনে হয়
তোমার তার সাথে কথা বলা উচিত।
.
.
.
-তোমাদের কি কখনো বলেছি...?
-হ্যাঁ।
মাপল গাছ ও বুইকের গল্প?
আমরা শুনেছি।
আমি একজনকে চিনি,
যে ওটা শোনেনি।
-সেই...
-গাছটা গাড়ির ওপর পড়ল, চিনির সিরাপগুলো পড়ে গেল।
যা মাছিগুলোকে আকর্ষণ করল,
এবং সেগুলো সেখানে আটকে গেল।
...আর পুরো গাড়িটাকেই উড়িয়ে নিয়ে গেল।
কিন্তু আসল কথা গাড়িটা আমি কিভাবে পেলাম।
-দেখ...
-বাবা?
ছেলে।
আমরা একটু কথা বলতে পারি?
মনে হয় এখন আমাদের
ডিশগুলো নিয়ে যাওয়া উচিত।
আমিও সাহায্য করছি।
-আইসবার্গ চেনো, বাবা?
-আমি চিনি কিনা?
আমি নিজে দেখেছি আইসবার্গ।
ওগুলো টেক্সাসজুড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিল পানির সন্ধানে।
একটার ভেতরে একটা হাতি জমাট বাঁধা অবস্থায় ছিল।
-প্রাগৈতিহাসিক যুগের ম্যামথ হাতি।
-বাবা!
কি?
আমি রূপক হিসেবে একটা কথা বলতে চাই।
এভাবে বলে শুরু করলে তো চলবে না।
মানুষ বুঝে ফেলবে সেটা রূপক।
শুরু করবে এভাবে,
"আইসবার্গের ব্যাপারটা হল..." এভাবে।
আচ্ছা, আচ্ছা।
আইসবার্গের ব্যাপারটা হল, আমরা এর ১০% দেখি শুধু।
বাকি ৯০% পানির নিচেই থাকে।
দেখা যায় না পানির জন্য।
আর সেটা...
তোমার ব্যাপারটা কি, বাবা?
আমি তোমার শুধু সে অংশই দেখতে পাচ্ছি...
...যেটা পানির ওপর ভেসে থাকছে।
হ্যাঁ, তুমি শুধু আমার নাকের ওপরটা দেখাটা বোঝাচ্ছ।
আর এই থুঁতনি, আর আমার...
বাবা, আমার কোন ধারণাই নেই তোমার সম্পর্কে...
...কারণ আজ পর্যন্ত তুমি আমাকে
একটাও সত্যি ঘটনা বলনি।
আমি তোমাকে হাজারটা সত্যি ঘটনা বলেছি, উইল।
সেটাই করে এসেছি, গল্প বলেছি ওসব নিয়ে!
তুমি আসলে...মিথ্যে বলেছ, বাবা।
তুমি মজাদার সব মিথ্যা কথাগুলো বলেছ।
তোমার গল্পগুলো ৫ বছরের বাচ্চাদের
ঘুমপাড়ানো গল্পের মত।
ততদিনেও তুমি সত্যি ঘটনাগুলো বলনি...
...যখন তোমার ছেলের বয়স ১০ এর পর ১৫ পার হয়ে
২০ থেকে ৩০-এ ঠেকেছে।
তবুও আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি।
যতদিনে আমার সেগুলো মিথ্যা বোঝা উচিত ছিল,
তার চেয়েও বেশীদিন লেগেছে সেটা বুঝতে।
যখন আমি বুঝলাম,
তোমার কথাগুলো সত্যি হওয়া অসম্ভব...
...নিজেকে বোকা মনে হচ্ছিল যে,
আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি!
তুমি সান্তা ক্লজ আর ইস্টার বানির মত।
(রূপকথার চরিত্র)
খুবই মজাদার
এবং ততটাই অবাস্তব।
তোমার মনে হয় আমি অবাস্তব।
উপর থেকে তাই মনে হয়, বাবা।
অন্তত তোমার কথাগুলো শুনে আমার তাই মনে হয়।
দেখো,
আমি আমার নিজের সন্তান...
...জন্ম দিতে চলেছি।
আমাকে যদি সে সারা জীবনেও না বোঝে...
...অনুভূতিটা আমাকে ভেতর থেকে মেরে ফেলবে।
ভেতর থেকে মেরে ফেলবে, কি কথা!
কি চাও তুমি, উইল?
আমাকে কার মত হতে দেখতে চাও?
শুধু তোমার নিজের মত, বাবা।
ভালো, খারাপ, যাই হোক।
শুধু একবার তোমার আসল চেহারাটা দেখাও।
আমি জন্মের পর থেকেই
নিজের মতই ছিলাম, অন্য কারো মত নয়।
তোমার চোখ সেটা এড়িয়ে গেলে,
তোমার ব্যার্থতা, আমার নয়!
তোমার বাবা ঠিক করেছিলেন,
তার একটা অফিস প্রয়োজন...
...বাড়ির মধ্যে তো আর
অফিস বানানো যাবে না...
তাই...
তুমিই ভালো জানো কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
কী ওটা?
যুদ্ধের সময়ের সেই চিঠি।
তোমার বাবা নিখোঁজ ছিলেন।
সেনাবাহিনী ভেবেছিল উনি মারা গেছেন।
ওহ, ওটা আসলেই ঘটেছিল নাকি?
তোমার বাবার সবকথাই
মন থেকে বানিয়ে বলেন না।
আমি একটু দেখে আসি,
কি অবস্থা ওনার।
আমি একটু শুতে যাচ্ছি।
আচ্ছা, যাও।
যুদ্ধের পরে আলাবামার দামাল ছেলেরা
বাড়ি ফিরে এল, নতুন কাজের খোঁজে।
যেকোন কাজে আমাকে নেয়ার অনেক সুবিধা ছিল।
ফিরে আসা সৈন্যরা সবাই বেঁচেছিল।
আর আমার প্রাণ ছিল অন্যকোথাও।
আমি একটু বাছ-বিচার করেই...
ঘুরে ঘুরে জিনিস বিক্রয় করার কাজ নিলাম।
আমার সাথে কাজটা মানিয়েও গেল।
যদি এডওয়ার্ড ব্লুম সম্পর্কে
এক কথায় প্রকাশ করতে বলা হয়...
সেটা হল,
আমি একজন সামাজিক ব্যক্তি।
-অভিনন্দন।
-ধন্যবাদ, স্যার।
আমি টানা প্রায় এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যেতাম।
কিন্তু প্রতি শুক্রবারে,
আমি যত টাকা রোজগার করেছি...
সেগুলোর একটা অংশ আলাদা করে রাখতাম
একটা সুন্দর বাড়ি তৈরির জন্য...
যার সাথে একটা সাদা বেড়াও থাকবে।
আমি আপনাদের এখন বলব
আমার নতুন পণ্যের কথা...
...নাম "হস্ত-প্রদর্শক"
কয়েক বছর পরে, আমি আরো কিছু পণ্য আবিষ্কার করে
বিভিন্ন শহরে বিক্রয় করলাম...
ততদিনে আমার ব্যবসা সমূদ্রতট থেকে
একেবারে টেক্সাস পর্যন্ত পৌছেছে।
এডওয়ার্ড?
এডওয়ার্ড ব্লুম?
আমাকে চেননি?
নর্দার্ন উইন্সলো।
বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আমি অবাকই হয়েছিলাম, এই মহান কবিকে
অ্যাশটন স্পেক্টারের পরে...
এই সুদূর টেক্সাসেও দেখতে পাব।
আমি তোমাকে বলতে চাই, তোমার স্পেক্টার শহর ছেড়ে
চলে আসাটা আমার অন্তরচক্ষু খুলে দিয়েছে।
ওই ছোট জায়গার বাইরের এক বিশাল পৃথিবীর সাথে
আমি অপরিচিত ছিলাম এতদিন।
তো আমি ভ্রমণ শুরু করলাম।
আমি দেখেছি ফ্রান্স, আফ্রিকা,
ঘুরেছি পশ্চিম আমেরিকার প্রায় অর্ধেকটা।
প্রতিটা দিন, একটা নতুন রোমাঞ্চকে আলিঙ্গণ।
এটাই আমার মূলমন্ত্র।
অসাধারণ ব্যাপার, নর্থার!
তোমার অবস্থায় আমি বেশ খুশি।
তো এখানে কি জন্য এসেছ?
এই একটু ডাকাতি করতে আর কি!
হয়েছে, এবার সবাই শুয়ে পড়!
হেই!
আমাকে দাও ওটা!
-আমাকে দেবে ওটা?
-কি?
বন্দুকটা।
আমি ক্যাশ ড্রয়ারটা ফাঁকা করে ফেলছি...
...তুমি ব্যাংকের সিন্দুকটা ফাঁকা করে
আমাকে সাহায্য কর।
আচ্ছা, এই যে তুমি!
আমার বন্ধুকে সাহায্য করবে, ঠিক আছে?
চলো।
আমি সত্যিই দুঃখিত, ম্যাম।
আসলেই।
আমি সত্যিই চাই না কেউ আহত হোক।
সেজন্য কাদঁছি না।
আসলে...
আমাদের কাছে কোন টাকাই নেই।
এই ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে!
কাউকে বলবেন না কিন্তু! (জানলে এই ব্যাংকে কেউ টাকা রাখবে না)
তার কথায় বুঝলাম আমার সব সঞ্চয় ও ঋণের টাকা
সব আগেই ডাকাতি হয়ে গিয়েছে...
পিস্তলধারী ডাকাতদের হাতে নয়,
বরং টেক্সাসের ফটকাবাজ জমির দালালদের হাতে।
আচ্ছা, চল!
নর্থার!
বাহ! এখানেই ৪০০ ডলারের মত রয়েছে!
তাও শুধু ড্রয়ার থেকেই!
সিন্দুক থেকে না জানি তুমি কত্ত টাকা পেয়েছ।
শুধু এতটুকুই?
পুরো সিন্দুকে?
তাই তো দেখছো!
এর মধ্যে তোমার টাকা জমা দেবার রসিদ দেখছি!
তোমাকে খালি হাতে যেতে দিতে
ভালো লাগছিল না।
তুমি ব্যাংকটার দেউলিয়া হবার ব্যাপারে কিছু জানো?
আমি নর্থারকে টেক্সাসের তেলের খনির জমি...
আর জমিগুলো দখলকারীদের
প্রভাব সম্পর্কে তাকে জানালাম।
সাথে এও বললাম, এসব অনৈতিক কাজগুলো
কিভাবে জনগণের ব্যাংকে জমানো টাকাগুলো...
...গায়েব করে দিচ্ছে। (জমির দালালরা জমির দাম বেশী দেখিয়ে
ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত লোন নিচ্ছে)
এসব শুনে নর্থার একটাই সিদ্ধান্তে উপনীত হলঃ
আমার ওয়াল স্ট্রিটে হামলা চালানো উচিত।
সব টাকা ওখানেই যাচ্ছে।
তখন থেকেই আমার অপরাধ জীবনের সমাপ্তি ঘটল...
সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ!
নর্থারের জন্য সেটা সবে শুরু ছিল...
যখন নর্থার প্রথমবার লাখপতি হল...
সে আমাকে ১০ হাজার ডলারের একটা চেক পাঠিয়েছিল।
আমি মানা করেছিলাম, কিন্তু সে বলল,
ওটা নাকি তার ক্যারিয়ার পরামর্শের ফি স্বরূপ দিচ্ছে।
সেই টাকা আমার স্ত্রীর জন্য
সাদা বেড়াযুক্ত একটা সুন্দর বাড়ি...
...কেনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।
আমার মত একজন মানুষের
এর থেকে বেশী পাওয়ার লোভ ছিল না।
নিজেকে তৃষ্ণার্ত লাগছিল খুব।
আচ্ছা!
মনে হয় তোমাকে একটা গাছের মত পুঁতে রাখতে হবে
(মৃত্যুর পরে)...
...যাতে প্রতিদিন সেই গাছের গোড়ায় পানি ঢালতে পারি।
একটু কাছে আসো।
আমার মনে হয় না
(তুমি মরে গেলে) আমার চোখের জল কোনদিন শুকোবে।
তুমি চালিয়ে যাও।
আমি দেখছি...
হ্যালো।
-আপনিই কি জেনিফার হিল?
-আমিই সে।
আর তুমি উইল।
আমি তোমার ছবি দেখেছি।
তাই তোমাকে চিনতে পেরেছি।
শোন, কেনি,
আজকের মত এটুকুই থাক কি বল?
আবার পরের সপ্তাহে বাকিটা করা যাবে।
এটা কি আমার মাকে ফেরত দিয়ে দেব?
তুমি না দিলে আমি কিছু বলব না।
আমার বাবাকে কিভাবে চেনেন আপনি?
সে এ রাস্তা দিয়েই নিয়মিত বিক্রির কাজে যেত...
...তো সেই সুবাদে এই শহরের সবাই তাকে চিনত।
আপনাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল?
বাপরে!
এত তাড়াতাড়ি বলে ফেললে!
আমি ভাবছিলাম আরো আধাঘন্টা
এটা বলা নিয়েই কাহিনী প্যাঁচাবে শুধু।
আমি তাকে মেয়েদের সাথে দেখেছি।
সে তাদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে সবসময়।
মাঝে মাঝে এমনও মনে হয়,
...উনি আমার মা-কে ধোঁকা দিচ্ছেন।
আমি কোন প্রমাণ পাইনি যদিও।
আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
যদি সত্যিটা জানতেই চাও,
সরাসরি এডি(এডওয়ার্ড)-কেই কেন জিজ্ঞেস করছ না?
কারণ সে মৃত্যুপথযাত্রী।
দেখো, আমি জানিনা তুমি
কতখানি কি জানতে এসেছ।
তুমি তোমার বাবাকে একভাবে চিনে এসেছ...
...আর সেটা আমার কথায় বদলে দেওয়াটা ঠিক হবে না...
...বিশেষ করে এই শেষ সময়ে এসে।
আমার বাবা এমন অনেক কথা বলেন,
যা তিনি করেন নি...
...আর আমি নিশ্চিত তিনি এমন অনেক কাজ করেছেন,
যা তিনি কখনো বলেননি।
আমি শুধু এই দুটোর মাঝে
সমন্বয় করতে এসেছি।
সবার আগে যেটা তোমার জানা প্রয়োজন,
...সেটা হল, তোমার বাবার কখনো
এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিল না।
যদিও তারপরেও এসেছিলেন।
দুইবার।
প্রথমবার, তিনি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এসেছিলেন।
পরের বার, তিনি বেশ দেরী করে ফেলেছিলেন।
তখন তোমার বাবা নিজের ব্যবসা নিজেই চালাতেন।
যদি এডওয়ার্ড ব্লুম সম্পর্কে
এককথায় প্রকাশ করতে বলা হয়...
উত্তর হবে, সে ছিলেন একজন সামাজিক ব্যক্তি,
আর তার পরিচিত সবাই তাকে খুব পছন্দ করত।
এক রাতে সে এক জায়গায় ৩ সপ্তাহ কাটানোর পরে
রাস্তা দিয়ে গাড়িতে ফিরছিল।
তখন সে তার জীবনে দেখা
সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়ের মুখোমুখি হল।
সৌভাগ্য মানুষের চারপাশেই থাকে সবসময়...
মাঝে মাঝে হঠাৎ সামনে এসে ধরা দেয়।
একজন মানুষ একটা জিনিস
জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দেখে।
শহরটা আগের মত ছিল না মোটেই,
বরং বুড়িয়ে গেছে বলতে হবে।
একটা নতুন রাস্তা যদিও বাইরের পৃথিবীর সাথে
স্পেক্টার শহরকে যুক্ত করে দিয়েছে...
তবে তার সাথে আরো যুক্ত হয়েছে-
নতুন ব্যাংক, মালিকানা আর অনেক ধার দেনা।
যেদিকে তাকাও না কেন,
সবাই দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।
এই নিলাম হচ্ছে-
পুরো শহর স্পেক্টার বিক্রয়ের জন্য।
-শুরুর দর হবে- ১০হাজার ডলার।
-তখন এডওয়ার্ড ব্লুম...
...শহরটা কেনার সিদ্ধান্ত নিল।
-৫০হাজার ডলার।
-আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
-সে কখোনোই মহা ধনী কেউ ছিল না...
...তবে সে অন্য লোকদেরকে ধনী বানিয়েছে,
আর এবার সে তাদের কাছে সাহায্য চাইল।
-আমি বাঁচানোর চেষ্টা করছি...
-তাদের বেশীরভাগই স্পেক্টার শহর চোখেও দেখেনি।
তার শুধু এডওয়ার্ড-এর মুখের কথাতেই
তাকে সাহায্য করেছিল।
তার সেটুকুই দরকার ছিল।
সে তাদের কাছে স্বপ্ন বিক্রি করেছিল।
তো প্রথমে সে কৃষিজমিগুলো কিনল।
তারপর কিনল বাড়িগুলো।
তারপর কিনল দোকানগুলো।
তবে সে যাই কিনল, স্পেক্টারবাসীর কাছে ভাড়া হিসেবে
এক টাকাও চাইলো না, তাদের চলে যেতেও বলল না।
সে তাদের শুধু বলল,
তাই করে যেতে, যা তারা আগে করত।
এভাবেই সে শহরটাকে
নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করল।
৬ মাসের মধ্যে, সে পুরো শহরটাকে কিনে ফেলল।
শুধু একটা বাড়ি বাদে।
তুমি নিশ্চয়ই এডওয়ার্ড ব্লুম।
আপনি কিভাবে জানলেন?
কেউ নিজের কিছু প্রয়োজন না হলে
এ বাড়িতে আসে না।
আর তোমার ছাড়া আমার সাথে
আর কারো কোন প্রয়োজন নেই।
তুমি এই শহরটা কিনছ।
আসলে আমি শহরটা ঘুরে দেখার সময় এ বাড়িটা দেখে ভাবলাম,
এটার সংস্কার করা প্রয়োজন।
পুরো শহর রক্ষা করতে চাইলে,
আগে শহরের সবার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে আমাকে।
আমিও এটাই জানি।
আমি তোমাকে এর আসল দামের থেকেও অনেক বেশী দেব।
আর তোমাকে কোথাও যেতেও হবে না।
আমি কথা দিচ্ছি, দলিলে মালিকের নাম ছাড়া
কিছুই পরিবর্তন হবে না।
আচ্ছা, সোজাসুজি কথা বলা যাক।
তুমি আমার কাছ থেকে বাড়িটা কিনে নেবে,
আর আমি থাকব সেটাতে?
বাড়ির লিখিত মালিক তুমি,
কিন্তু অলিখিত মালিক আমি।
আমি এখানেই থাকব,
আর তুমি সব ঠিক করে দিয়ে আবার চলে যাবে।
ঠিক বললাম?
অনেক দিক থেকে, ঠিকই বলেছ।
তাহলে আমি আপনার প্রস্তাবে সম্মত না,
জনাব ব্লুম।
যদি কিছু পরিবর্তন নাই হয়,
আমি সেসবও পরিবর্তনের চেষ্টা করব না...
...যে পরিবর্তনগুলো এত বছরেও হয় নি,
তবে হবার কথা ছিল।
এমন কিছু তো নয়, যে তোমাকে কিছু হারাতে হবে।
তুমি আমার ব্যাপারে শহরের যে কাউকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো।
আপনি এ জায়গাটা কেন কিনছেন,
জনাব ব্লুম?
মাঝবয়সে বিলাসীতার উপকরণ হিসেবে?
একটা বিলাসবহুল গাড়ি কেনার বদলে,
একটা শহর কিনেছেন তাই তো?
জনগণকে সাহায্য করে আমি আনন্দ পাই।
উত্তরটা মনঃপূত হল না,
আপনার আনন্দের কোন কারণ দেখছি না এখানে?
-আমি দুঃখিত। আমি আপনার মনে আঘাত দিয়ে কিছু বলেছি?
-না।
তুমি সেটাই করেছো,
যেভাবে তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে।
তুমি এসেছ ঠিকই।
তবে তোমাকে আরো আগে এখানে আশা করেছিলাম।
তুমি বিমেনের মেয়ে।
তোমার নামটা অন্যরকম লাগছে।
তুমি বিয়ে করে ফেলেছ নাকি?
১৮ বছর বয়সে ২৮ বছরের একজনকে বিয়ে করেছি।
বয়সের পার্থক্যটা চোখে পড়ার মত।
আমি আপনাকে বাড়িটা বিক্রি করছি না,
জনাব ব্লুম।
আচ্ছা।
ঠিক আছে, আমাকে সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
-আটকে গেছে এটা।
-হ্যাঁ।
-ওহ, আমি খুবই দুঃখিত! আমি...
-সমস্যা নেই, ওভাবেই থাকুক।
-না, আমি...
-প্লিজ! চলে যান।
-কিন্তু...
-যান!
বেশীরভাগ মানুষই ওই সময়ে
ওটা ওভাবে ফেলে রেখেই নিজের পথ দেখত।
কিন্তু এডওয়ার্ড বেশীরভাগ মানুষের মত নয়।
কিন্তু এডওয়ার্ড বেশীরভাগ মানুষের মত নয়।
ধরে থাক।
তাদের দুজনের মন মানসিকতা ছিল
সম্পূর্ণ ভিন্ন কিন্তু...
...তাদের পা ছিল এক জোড়াই।
মাস কেটে গেল, পুরো বাড়ি সংষ্কারের আগ পর্যন্ত
তার সামনে সাড়ানোর জন্য...
...আরো অনেক জিনিস কোনভাবে চলে আসত।
আসলে, মাথায় নতুন বুদ্ধি চলে আসাটাই
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়।
যতদিনে আমি আর সেই যমজদ্বয় হাভানাতে পৌছলাম...
...আমরা উকুলেলে(বাদ্যযন্ত্র) আর হারমোনিকা দিয়ে
নতুন কিছু করার চেষ্টা করছিলাম।
-আচ্ছা...
-তুমি ওটা ওখানেই রেখে দিতে পারো।
না।
অমন কোরো না।
অপমানিত বোধ করবার মত কিছু হয় নি।
আমি কখনোই ওভাবে ভাবিনি আসলে...
আমি শুধু আমার স্ত্রীকেই ভালোবাসি।
হ্যাঁ, জানি।
যেদিন আমি তাকে প্রথমবার দেখেছি তখন থেকে
মৃত্যুর দিন পর্যন্ত...
...আমি শুধু তাকেই ভালোবেসে যাব।
ভাগ্যবতী মেয়ে।
আমি দুঃখিত, জেনি।
সত্যিই দুঃখিত।
দাঁড়াও! এডওয়ার্ড।
সেদিন, এডোয়ার্ড ব্লুম চলে গেল...
... আর ফিরে এলোনা সেখানে
যে শহরের ত্রাণকর্তা ছিল সে।
আর মেয়েটার কথা বলতে গেলে...
সহজেই যেটা মাথায় আসবে তা হল
সে একটা ডাইনীতে পরিণত হবে...
...আর সবাই তাকে...
...কল্পনায় এমন কিছুই ভাবতে বাধ্য হবে।
তারপর গল্পটা সেখানেই শেষ হল
যেখানে সেটা শুরু হয়েছিল।
যুক্তি অনুযায়ী, তুমি সেই ডাইনীটা হতে পারো না,
কারণ মহিলাটি ছিল...
...বৃদ্ধ, যখন সে ছিল ছোট এক ছেলে।
এটা তখনই যুক্তি সঙ্গত হবে,
যখন তুমি তোমার বাবার মত ভাবতে পারবে।
বুঝতেই পারছ, দুনিয়াতে তার চোখে শুধু দুইজন মেয়েই আছেঃ
তোমার মা...
...এবং বাকি সব মেয়ে।
আর একদিন...
...আমি বুঝতে পারলাম আমি এমন একজনকে ভালোবাসি,
যে আমাকে কখনোই ভালোবাসবে না।
আমি যেন এক রূপকথার চরিত্র।
আমার মনে হয় না,
তোমাকে এসবের কোন কথা বলা উচিত ছিল।
না, না, না, আসলে আমিও জানতে চাইছিলাম, আমার...
জেনে ভালো লাগছে।
আমি তার কাছে তোমার মতই
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম।
আর আমি...
কখনোই হয়ে উঠতে পারিনি।
আমি তার কাছে শুধু এক
কাল্পনিক চরিত্রে পরিণত হয়েছিলাম।
আর তার অন্য জীবন, তুমি...
তুমি ছিলে বাস্তব।
মা?
জোসেফিন?
জোসেফিন?
উইল!
কি হয়েছিল?
তোমার বাবা স্ট্রোক করেছিল।
সে উপরে তোমার মা ও ড. বেনেট-এর সাথে আছে।
উনি ঠিক হয়ে যাবেন তো?
আমার মনে হয় না আমি...
...তার সাথে এখানে থাকতে পারব।
মানে, যদি...
তবে যদি উনি জেগে যান,
তখন আমার আসলেই এখানে থাকা প্রয়োজন।
আমি থাকব।
তুমি জোসেফিনের সাথে বাড়ি চলে যাও।
আমি আজ রাতে এখানে থাকব।
-ঠিক আছে তো?
-আচ্ছা।
উইল, যদি কিছু হয়ে যায় (ব্লুম মারা যান)
আমাকে ফোন করো।
করব, অবশ্যই ফোন করব।
-বাবার সাথে কিছু সময় কাটাতে চাও?
-হ্যাঁ, ধন্যবাদ।
দেখে ভালো লাগছে যে তুমি তার সাথে কোন
হৃদয়বিদারক কথাবার্তা বলছো না।
আমাদের কাছে সবচেয়ে
অবাক লাগে, যখন দেখি,
মানুষ তাদের সাথে কথা বলেই যায়,
যারা পৃথিবীর কিছু শোনার অবস্থাটুকুতেও নেই।
আমাদের একটা সুবিধা আছে।
আমার বাবার সাথে আমার তেমন কোন কথাবার্তা হয় না।
তোমার বাবা তোমাকে কখনো
তোমার জন্মের সময়ের কথা বলেছে?
হ্যাঁ, হাজার বার বলেছে।
সে এমন এক মাছ ধরেছিল যাকে কখনো ধরা যায় না।
সেটা না। আসল ঘটনা।
কখনো বলেছে সেটা?
না।
তোমার মাকে বিকাল ৩ টার দিকে
এখানে আনা হয়েছিল।
তার প্রতিবেশী তাকে এখানে নিয়ে এসেছিল,
কারণ তোমার বাবা ব্যাবসার কাজে শহরের বাইরে...
...উইচিটাতে গিয়েছিল।
তোমার জন্ম নির্দিষ্ট সময়ের এক সপ্তাহ আগেই হয়েছিল।
তবে কোন জটিলতা তৈরি হয়নি তাতে।
সেটা ছিল একটা সুষ্ঠু ডেলিভারি। তোমার বাবার
এখানে থাকতে না পেরে বেশ খারাপ লেগেছিল ।
তখন অবশ্য এখনকার মত বাচ্চা ডেলিভারির সময়
ছেলেদের পর্যবেক্ষণ করার মত এত জায়গা ছিল না...
...তাই সে থাকলেও তেমন কোন লাভ হত না।
আর এটাই ছিল তোমার জন্মের আসল ঘটনা।
খুব উত্তেজনাকর কিছু নয়, তাই তো?
আর যদি আমাকে আসল ও কাল্পনিক গল্প
দুটোর মধ্যে একটা বেছে নিতে বলা হয়...
...যেটাতে একটা মাছ ও একটা বিয়ের আংটির গল্প আছে...
...আমি কাল্পনিক গল্পটাই বেছে নিতাম।
তবে, একমাত্র আমারই এমনটা মনে হয়।
এবার আমারও ভালো লাগতে শুরু করেছে।
বাবা?
হেই, বাবা? তুমি চাও, আমি নার্সকে ডেকে আনি?
তুমি কি চাও? কি করতে পারি তোমার জন্য?
কি নিয়ে আসব?
একটু পানি খাবে?
একটু পানি খেতে চাও?
সেই নদী।
নদী?
আমাকে বলো ওটা কিভাবে হবে।
কোনটা কিভাবে হবে?
কিভাবে আমি পৃথিবী থেকে চলে যাব।
মানে তুমি সেই চোখে (ডাইনীর চোখ) কি দেখেছিলে?
আমি সেই গল্পটা জানিনা, বাবা।
সেই গল্পটা আমাকে কখনো বলনি তুমি।
আচ্ছা, হেই, আমি বলার চেষ্টা করছি।
তোমার সাহায্য লাগবে।
বলো কিভাবে গল্পটা শুরু হয়েছিল।
এইভাবে।
আচ্ছা, আচ্ছা।
তো, গল্পের শুরুটা হবে আগামীকাল সকালে...
...তুমি আর আমি এই হাসপাতালে এভাবেই আছি,
আমি একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, উঠে প্রথমেই...
...আমি তোমাকে দেখলাম,
কোনভাবে তোমাকে খুবই সুস্থ দেখাচ্ছিল।
বাবা?
তোমাকে অন্যরকম লাগছে।
-বাবা।
-চলো পালাই এখান থেকে!
তারপর আমি বললামঃ
তোমার বিছানা ছেড়ে ওঠা উচিত নয়...
ওই হুইলচেয়ারটা নিয়ে এস!
তাড়াতাড়ি!
আমাদের হাতে বেশী সময় নেই!
ফ্লোরে এসে নামতেই আমরা চলতে শুরু করব।
আর আমি হুইল চেয়ার নিয়ে...
-তাড়াতাড়ি চল!
-...যেন এই হাসপাতাল ছেড়ে পালাচ্ছি।
করছটা কি তোমরা?
আমরা ড. বেনেট যে কিনা আমাদের থামাতে চাইছিলেন,
তাকে ছাড়িয়ে চলে এলাম।
-থামাও ওদের!
-আমরা যেন করিডোর দিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছি!
একের পর এক কর্মচারীরা আমাদের তাড়া করছে।
মা আর জোসেফিন হলের
একেবারে শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে!
বোঝানোর সময় নেই!
ওদের আটকাও!
আমরা যেন উড়ে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে
রাস্তায় চলে এলাম...
...আর তোমার সেই লাল গাড়িটাকে দেখতে পেলাম।
গাড়িটা দেখতে একেবারে নতুনের মত দেখাচ্ছিল।
তারপর আমি তোমাকে কোলে তুলে নিলাম...
...আর কোনভাবে তোমার ওজন যেন একেবারে হালকা হয়ে গিয়েছিল।
ঠিক বলে বোঝানো যাবেনা সেটা।
ফেলে এসো!
ওটার আর দরকার নেই আমাদের!
পানি। আমার পানি দরকার।
-আমরা কোথায় যাচ্ছি?
-নদীর দিকে।
ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে আমরা
গ্লেনভিলের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি...
...চার্চের পাশ দিয়ে লোকজন বড্ড আস্তে গাড়ি চালায়।
আর আমরা নদীর যত কাছে আসছিলাম...
ওইতো এসে পড়েছে!
...দেখলাম সবাই ওখানে
অনেক আগেই এসে পড়েছে।
মানে বলতে চাচ্ছি...
...তোমার পরিচিত সবাই।
সেটা ছিল অবিশ্বাস্য!
আমার জীবনের গল্পের সব চরিত্র ওরা!
অবাক করা ব্যাপার হল,
কারো চেহারায় কষ্টের লেশমাত্র নেই।
সবাই তোমাকে দেখে খুবই উৎফুল্ল ছিল...
...তোমার শেষবিদায় দেখার জন্য।
বিদায় সবাইকে!
আর দেখা হবে না তোমাদের সাথে!
আমার জলকন্যা।
তুমি সবসময় যা ছিলে,
তাতেই পরিণত হয়ে গেলে।
একটি বিশাল বড় মাছ।
আর এভাবেই ওটা (তোমার মৃত্যু) ঘটল!
হ্যাঁ।
একদম ঠিক বলেছ।
মা?
আমি সর্বদা সৃষ্টিকর্তার মুখাপেক্ষী ছিলাম,
তাই আমার বেশী কিছু প্রয়োজন হয় নি।
তিনি আমাকে সবুজ ঘাসে শোবার তৌফিক দিয়েছেন।
যাবার ক্ষমতা দিয়েছেন শান্ত নদীর ধারে।
তিনিই এসবের মাঝেই
আমার আত্মাকে ছড়িয়ে রাখবেন।
তিনি আমাকে সারাজীবন তার দেখানো
সঠিক পথে পরিচালিত করে এসেছেন।
আমি মৃত্যুপুরীর মাঝখান দিয়ে হেঁটে গিয়েছি...
...শয়তানকে ভয় পাইনি,
সর্বদা ভেবেছি তুমি আমার সাথে আছো।
এ কারণেই সারাজীবন পৃথিবীর সব ভাল কিছু
এবং সবার ভালোবাসা পেয়ে এসেছি সবসময়।
কখনো কোন কৌতুক এতবার শুনেছো যে,
একসময় ভুলেই গেছ যে কেন সেটা মজাদার ছিল?
আর সেটা আবার শোন,
আবার সেটা প্রথমবারের মত মজাদার মনে হবে।
তুমি জানো, কেন সে প্রথম জায়গাটা বেশী পছন্দ করত?
কারণ সে ১৫ ফুট এক দৈত্যর সাথে লড়াই করেছিল!
-অসম্ভব!
-বাবা! এটাই হয়েছিল না?
অনেকটা এমনই।
দেখলে? সেটা দৈত্যই ছিল।
সেটা ছিল আমার বাবার শেষ কৌতুক,
আমার যা মনে হয় আরকি।
একজন মানুষ তার জীবনের গল্পগুলো এতবার বলেছেন যে,
তিনি নিজেই একটা গল্পের চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।
তারপর সেভাবেই তাকে জানবে
তার পরবর্তী প্রজন্ম।
আর এভাবেই তিনি মৃত্যুকে জয় করলেন।
(তিনি বেঁচে থাকবেন পরবর্তী প্রজন্মের মুখে মুখে, কোন এক গল্পের চরিত্র হয়ে)
মুভিঃ ★ BIG FISH ★
অনুবাদকঃ নাজমুল হোসাইন শুভ
ফেসবুকে যোগাযোগঃ goo.gl/JlDXUO